|
|
|
|
যন্ত্রচালিত ভ্যান রুখতে আন্দোলনে বাসকর্মীরা: বন্ধ ১৫টি রুটের বাস |
সপ্তাহ জুড়ে বন্ধ বাস, ভরসা লছিমনই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
লছিমন নিষিদ্ধ করার দাবিতে ডাকা বন্ধের সাত দিন পরেও বাস চলাচল স্বাভাবিক হল না কৃষ্ণনগরে। উল্টে শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গেল হুলোরঘাট-সোনাতলা রুটের বাসও। টানা এত দিন বাস বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সকলেই। আখেরে লাভ হচ্ছে লছিমনগুলিরই। অফিস-টাইমে বাসের দেখা না মেলায় নিত্যযাত্রীদের একমাত্র ভরসা যোগাচ্ছে সেই লছিমনই।
এই নিয়ে গত সাত দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জেলার ১৫টি রুটের বাস। বন্ধের জেরে কৃষ্ণনগর থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে উত্তরদিকে যাওয়ার সব ক’টি রুটের বাসই বন্ধ।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশ-প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে না। নিত্য বাসযাত্রী সমিতির সভাপতি রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন, “সাত দিন ধরে এতগুলো রুটের বাস চলাচল একেবারে বন্ধ। অথচ প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হয়নি। বাস শ্রমিকেরা নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো যা ইচ্ছে তাই করছে। আর প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।” ১ এপ্রিল সকালে দেবগ্রাম-তেহট্ট রুটের এক বাসচালকের সঙ্গে গণ্ডগোল হয় এক লছিমন চালকের। হাতাহাতিও হয়। প্রতিবাদে জেলায় লছিমন নিষিদ্ধ করার দাবিতে কাটোয়াঘাট, কালীগঞ্জ, পলাশি মনুমেন্ট-সহ বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বাসকর্মীরা। বন্ধ হয়ে যায় ধর্মদা, অগ্রদ্বীপ, বীরপুরঘাট, মাটিয়ারি, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, তেহট্ট বাজার, চাঁদের ঘাট, পাটুলি ঘাট, বহরমপুর ও পলাশিপাড়া ভায়া দেবগ্রাম রুটের বাস। শুক্রবার থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হুলোরঘাট ও সোনাতলার বাসও।
বাসকর্মী বিদ্যুৎ লাহা বলেন, “যন্ত্রচালিত ভ্যান যত দিন না বন্ধ করা হচ্ছে, তত দিন আমরা বাস চালাব না। ওদের দৌরাত্মে কোনও রাস্তা দিয়ে চলার উপায় নেই। কোনও নিয়ম মানে না, কিছু বলতে গেলে আমদের মারধর করে। তার উপরে বিভিন্ন রুটে লছিমনের সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছে যে, বাসে যাত্রীই মিলছে না।” তাঁর আরও অভিযোগ, হাইকোর্টের তরফে লছিমন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। তার পরেও প্রশাসনের কাছে আমরা ন্যূনতম আশ্বাসটুকুও পাইনি।”
এর আগেও বহুবার রাস্তা সংস্কারের দাবি কিংবা লছিমন বন্ধ করার দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বাসকর্মীরা। সব সময়ে বাস মালিকেরাও তাঁদের সমর্থন করেননি। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “আমরা, বাস মালিকেরা এই ধর্মঘট সমর্থন করছি না। শ্রমিকেরা এই ধর্মঘট ডেকেছে। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বাস চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। তবে প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা বাস চালাতে পারছি না।” লছিমনের দাপটের কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, “বাসকর্মীদের সঙ্গে লছিমন চালকদের গণ্ডগোল লেগেই রয়েছে। ওদের দাপটে রাস্তায় চলা মুশকিল। কিন্তু তাই বলে এত দিন ধরে বাস বন্ধ করে রাখা সমর্থন করি না। প্রশাসনও আমাদের কোনও আশ্বাসই দিচ্ছে না।”
দিন তিনেক আগে বাস মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি বৈঠকে বসেছিলেন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তিনি বলেন, “ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য বাসকর্মীদের আমরা বারবার অনুরোধ করেছি। নির্দিষ্ট করে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছি। তবে ওদের দাবি, জেলা থেকে লছিমন একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। এ নিয়ে জেলা স্তরে কথাবার্তা চলছে। তবে এই ভাবে বাস বন্ধ করে রাখলে চরম সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।” জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক মলয় রায় বলেন, “যন্ত্রচালিত ভ্যানচালকের সঙ্গে বাসকর্মীদের গণ্ডগোলের জেরে বাস বন্ধ। আমাদের হাজার অনুরোধেও ওঁরা সাড়া দিচ্ছেন না। হাইকোর্ট পুলিশকে যন্ত্রচালিত ভ্যান তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্রের কথায়, “হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরে আমরা লাগাতার অভিযান চালিয়েছিলাম। আবারও বিশেষ অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশের যৌথ অভিযান হওয়া উচিত। সে ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে”
জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিশ্রুতিটুকুই সার। কবে থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। নিত্যযাত্রী থেকে রোগী, পরীক্ষার্থী আর অভিভাবকদের এই হয়রানির সমাধান যে কবে হবে, জবাব দিতে পারছেন না কেউই। |
|
|
|
|
|