কোচবিহারে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় হবে, তা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে এল।
শুক্রবার সকালে কোচবিহারে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দেখতে যান শিক্ষামন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ চান, তাঁর বিধানসভা এলাকা নাটাবাড়ির অন্তর্গত হরিণচওড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় হোক। আবার জেলারই বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন চাইছেন, তাঁর বিধানসভা শীতলখুচির কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক। দুই নেতার অনুগামীরা এ দিন নিজেদের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপিও দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় হবে, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নেবেন জানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন ব্রাত্যবাবু। পরে তিনি বলেন, “আমি হরিণচওড়া ও খলিসামারি, দুই এলাকাই সরেজমিন দেখেছি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে, সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার দিক ও অন্য পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হবে। যাবতীয় তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। তাঁর পরামর্শমতো জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজ শুরু হবে।” |
তাঁর সামনেই জেলা সভাপতি ও বনমন্ত্রীর অনুগামীরা দু’টি আলাদা জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি তোলায় তিনি অস্বস্তিতে পড়েছেন কি না, সে প্রশ্নে ব্রাত্যবাবু বলেন, “বিতর্ক বাঙালির মজ্জায় রয়েছে। একটি জায়গা নিয়ে আলোচনা হলেও বিতর্ক হত। তা ছাড়া, দাবি যে কেউ করতে পারেন। যাঁরা দাবি তুলছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা যাবে। এর মধ্যে
বাঙালির মজ্জায় রয়েছে। একটি জায়গা নিয়ে আলোচনা হলেও বিতর্ক হত। তা ছাড়া, দাবি যে কেউ করতে পারেন। যাঁরা দাবি তুলছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা যাবে। এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রাথমিক ভাবে কোচবিহার জেলা সদর লাগোয়া হরিণচওড়া এবং শীতলখুচির খলিসামারিতে দু’টি জায়গা দেখা হয়। এ দিন ওই জমি দেখতে যান শিক্ষামন্ত্রী। দলীয় সূত্রের খবর, হরিণচওড়ায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। বনমন্ত্রী অবশ্য দুই জায়গাতেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই খলিসামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা বলেন। বনমন্ত্রীর কথায়, “বিধায়ক হিসেবে আমি খলিসামারিতেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পক্ষে। ওখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি বহু পুরনো। বেশ কিছু দিন আগে রবীন্দ্রনাথবাবুও ওখানে এক কনভেনশনে গিয়ে খলিসামারির দাবি সমর্থন করেছিলেন। তা ছাড়া, হরিণচওড়ায় বাঁধ দেওয়া, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার সমস্যাও আছে।” নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “হিতেনবাবু কী বলেছেন, জানি না। যেখানে যোগাযোগ থেকে যাবতীয় বিষয়ে মানুষের সুবিধা হবে, সেখানেই রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা নির্দিষ্ট করবে বলে আশা করছি।” দুই নেতার অনুগামীদের পাশাপাশি, জেলার ওই দু’টি এলাকার নানা সংগঠনও পৃথক পৃথক ভাবে নিজেদের এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নির্দিষ্ট করার দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে এ দিন স্মারকলিপি দেয়। প্রসঙ্গত, বনমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মন খলিসামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছেন। একই ভাবে হরিণচওড়ায় এ দিন শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন রবীন্দ্রনাথবাবুর অনুগামী হিসাবে পরিচিত কোচবিহার-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি খোকন মিয়াঁ, ব্লকের নেতা পার্থপ্রতিম রায়। |