স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে রাজ্যে ফের শীর্ষে উঠে এল মুরারইয়ের নাম। বছর তিনেক আগে নির্বীজকরণ করিয়ে রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল মুরারই ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ বার স্বাভাবিক প্রসবে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে মুরারই ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা মুরারই গ্রামীণ হাসপাতাল। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিসকুমার মল্লিক জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ভবন থেকে স্মারকপত্র দেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যানগত ভাবে দেখা গিয়েছে, মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে স্বাভবিক প্রসবের সংখ্যা ৪,৮৪২। এর পরেই রয়েছে মালদহ জেলার সিলামপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা ৪,৫৩৫।
কিন্তু কী করে সম্ভব হল? হাসপাতাল সূত্রের খবর, মূলত ২০১০-১১ আর্থিক বছরে মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ছিলেন অসীম মান্না। তিনি জানান, ২০০৯ সালে মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের কিছু পরিকাঠামোগত সংস্কার করা হয়। সেখানে মেঝেতে টাইলস বসানোর পাশাপাশি জীবাণুনাশ করার জন্য ওয়ার্ড ভালভাবে পরিষ্কার রাখারও ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া ব্লকের অধীন সাতটি পঞ্চায়েতে সেই সময় ১৬৭ জন আশা প্রকল্পের কর্মীরা এবং কমিউনিটি হেলথ গাইড কর্মীরা মিলিতভাবে প্রতি গ্রামে প্রসূতি বা গভর্বতী মায়েদের বাড়িতে প্রসব না করিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন। |
স্মারক হাতে হাসপাতালের কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র। |
‘মাতৃযান’ প্রকল্পের কথাও তাঁরা জানান, যাতে বিনা খরচায় প্রসূতি এবং ২৮ দিনের শিশুকে দেখানোর সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পের যে টাকা পাওয়া যায় সেই ব্যাপারেও স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছেন। যার জন্য মায়েদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব করানোর ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়ে।
মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালের সিনিয়র পাবলিক হেলথ নার্স ইরা পালিত বলেন, “ব্লকের অধীন ২৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র , ২টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মীসংখ্যা কম। তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে প্রসূতি বা গর্ভবতী মায়েদের যোগাযোগ থাকায় প্রসূতিরা তাঁদের স্বাভাবিক প্রসব করানোর জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা পেয়েছে। যার জন্যই এই সাফল্য।” ওই হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রুমা ভট্টাচার্য বলেন, “প্রসূতিদের প্রসব বেদনা কমানোর জন্য এবং অনেক ক্ষেত্রে খিঁচুনি বন্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া আছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ঝুঁকি কমিয়ে কী ভাবে প্রসব করানো যায় সেই মতো রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে ওষুধ দেওয়া হত। এর জন্য স্বাভাবিক প্রসব করানো অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।”
মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ প্রবীর মাড্ডি ‘টিম ওয়ার্ক’কে গুরুত্ব দিয়েছেন। চিকিৎসক ও স্থায়ীকর্মীদের পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মীদের ভূমিকার কথাও বলেছেন। মুরারই ১ ব্লকের বিডিও কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশপাশি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদেরও অনেক ভুমিকা আছে। প্রতি শনিবার স্বাস্থ্যকর্মী, আশা প্রকল্পের কর্মীদের নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আলোচনাসভা করা হয়।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিসকুমার মল্লিক বলেন, “মূলত সরকারি সুযোগের ব্যাপারে এলাকার বাসিন্দাদের বোঝানো সম্ভব হয়েছে বলে এই সাফল্য মিলেছে।” |