মানবাজারের বলুডির জলাধারটি দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় এক দশক ধরে জলাধারটি পরিষ্কারের কাজও করা হয়নি। ফলে মাঝে মধ্যে ওই জলাধারের জলে নোংরা দেখা যায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের ক্ষোভ, প্রশাসনের স্থানীয় আধিকারিক থেকে জনপ্রতিনিধি-- সকলেই এই সমস্যার কথা জানলেও হাত গুঁটিয়ে বসে রয়েছেন। মানবাজারের তৃণমূল বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু-র আশ্বাস, “সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জানাব।”
বলুডি গ্রামের এই জলাধারটির জলধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার গ্যালন। ঢালাই সিমেন্টের এই জলাধারের সব ক’টি স্তম্ভে ফাটল ধরেছে। মাঝে মধ্যেই জলাধার থেকে সিমেন্টের চাঙ্গড় খসে পড়ছে। ঢালাইয়ের ভিতরে থাকা লোহা বেরিয়ে এসেছে। জলাধারের নীচ দিয়ে একটি গ্রাম্য রাস্তা রয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে জলাধারের সিমেন্টের চাঙড় খসে নীচে পড়ে। চাঙড় খসে পড়ে কয়েকটি গবাদি পশু জখমও হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, অবিলম্বে প্রশাসন জলাধারটি মেরামত না করলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। |
এই জলাধার থেকে জল নলবাহিত হয়ে মানবাজার, বলুডি, মধুপুর, পাথরমহড়া, বারোকুড়ি, শালপাড়া, পেদ্দা, ঝাড়বাগদা, শীতলটাঁড়, গোবিন্দপুর, চরকি, ইন্দকুড়ি, কাহালপাড়া-সহ ১৮টি গ্রামে সরবরাহ করা হয়। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই নলবাহিত জল পান করেন। কৃষ্ণপুরঘাটে কংসাবতী নদীর নীচ থেকে পাম্পের সাহায্যে তোলা জল রিজারভার থেকে ওই জলাধারে সরবরাহ করা হয়। দিনে দু’বার জল সরবরাহ করা হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা ওই জল পান করেন। কিন্তু জলাধারের ভগ্নপ্রায় দশার জন্য ওই জল পান করার যোগ্য কি না তা নিয়ে বাসিন্দাদের সংশয় রয়েছে। কর্মীরা জানান, জলাধারে ওঠার সিঁড়ি বছর দশেক আগে ভেঙে যায়। তার পর থেকে কর্মীরা জলাধারের উপরে উঠতে পারেন না। ফলে জলাধারের ভিতরের দেওয়াল পরিস্কার করাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালে এই জল প্রকল্পটি চালু হয়। ১৯৮৬ সালে জলাধারটি শেষবার সংস্কার করা হয়।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে পরিস্কার না হওয়ায় জলাধারের ভিতরে শ্যাওলা জমেছে। জলাধারের উপরের তারজালি ভেঙে পড়ায় ভিতরে পাখি পড়ে মারাও যায়। সেই নোংরা জলই তাঁদের সরবরাহ করা হচ্ছে। মানবাজারের বাসিন্দা সুভাষ বন্দোপাধ্যায়, বাবলু কুণ্ডুদের অভিযোগ, “মাঝে মধ্যেই জলে কাদা, শ্যাওলা, পাখির পালক পাওয়া যায়। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে যে কোনও দিন ভয়াবহ কাণ্ড ঘটে যেতে পারে।” মানবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অনূরূপা সেনের দাবি, “জলাধারের জলের মান নিয়ে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। কিছু সমস্যার জন্য জল সরবরাহ ব্যাহত হয় ঠিকই। সমস্যাগুলি সামলে সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।” কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, জলাধারে ক্ষমতা অনুযায়ী ২৮০ থেকে ৩০০টি পয়েন্টের বেশি জল সরবরাহ করা যায় না। কিন্তু নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতাদের ‘চাপে’ জলের এলাকা বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ৬০০টি পয়েন্টে জল দিতে হচ্ছে। ফলে জলের বেগ আগের থেকে কমে গিয়েছে। কিন্তু জলাধারটির সংস্কারে রাজনৈতিক নেতাদের নজর নেই। জলাধারের বেহাল অবস্থার কথা মেনে নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পুরুলিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র নিত্যানন্দ আচার্য বলেন, “ওই জলাধারটি মেরামত করার জন্য ২০-২৫ লক্ষ টাকা দরকার। এ ব্যাপারে কয়েক বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।” |