পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
কালিন্দী
এক ট্যাঙ্ক আতঙ্ক
দুপুর গড়িয়ে তখন প্রায় বিকেল। কালিন্দীর পুজোর মাঠে খেলছিল কয়েক জন কিশোর। হঠাৎই তাদের এক জনের মাথায় এসে পড়ল সিমেন্টের টুকরো। খানিক বাদে আর এক জনের কাঁধে এসে পড়ল ছোট একটি পাথর। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য বোঝা গেল গোটা বিষয়টি। ওই মাঠের পাশেই রয়েছে একটি জলের ট্যাঙ্ক। ওই ট্যাঙ্ক থেকেই মাঝেমধ্যে খসে পড়ছে সিমেন্টের টুকরো বা চাঙড়। একই অবস্থা কালিন্দী পোস্ট অফিসের কাছে শিশু উদ্যানটির ভিতরের ট্যাঙ্কটিরও। আর তা নিয়েই রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাসিন্দারা।
বহু বছর ধরেই এই ট্যাঙ্ক দু’টিতে জল ওঠে না। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে ট্যাঙ্ক দু’টি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কালিন্দীর পুজোর মাঠ নামে পরিচিত মাঠের জলের ট্যাঙ্কটি দু’নম্বর জলের ট্যাঙ্ক নামে পরিচিত। বাসিন্দাদের কথায়, দু’নম্বর জলের ট্যাঙ্ক থেকে মাঝেমধ্যেই চাঙড় খসে পড়ে। তাঁদের আশঙ্কা, বেহাল ট্যাঙ্কটি যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। এ কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরাও।
ট্যাঙ্কটির বিপজ্জনক অবস্থা অবশ্য চোখে দেখলেই বোঝা যায়। জীর্ণ ট্যাঙ্কের দেওয়াল বেয়ে উঠে গিয়েছে লতাপাতা। এমনকী, ট্যাঙ্কের গায়ে জায়গায় জায়গায় রয়েছে সিমেন্টের চাঙড় খসার চিহ্ন। এলাকারই কৃষ্ণা বসু বললেন, “মাঝেমধ্যে রাতের দিকে ট্যাঙ্কের চাঙড় খসে পড়ার ধুপধাপ আওয়াজ পাই। ভয় হয়, পুরো ট্যাঙ্কটি আবাসনের কোনও ফ্ল্যাটের উপর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লে বড়সড় বিপদ ঘটে যাবে।”
জরাজীর্ণ অবস্থা কালিন্দী পোস্ট অফিসের কাছে শিশু উদ্যানের ভিতরের ট্যাঙ্কটিরও। বহু দিন হল এর কোনও সংস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের কথায়, ট্যাঙ্কটি থেকে মাঝেমধ্যেই চাঙড় খসে পড়ে। এটি খুবই বিপজ্জনক। কারণ, রোজই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই শিশুউদ্যানে খেলতে আসে।
পুরসভা সূত্রে খবর, বর্তমানে কালিন্দীর আবাসনে জল সরবরাহ করা হয় পাম্প হাউসের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ট্যাঙ্ক দু’টির জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা না থাকলে সেগুলি কেন এ রকম জীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকবে? কেন পুরসভা সেগুলি ভেঙে দিচ্ছে না বা সংস্কার করছে না? কালিন্দীর ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুকমল দে বলেন, “ট্যাঙ্ক দু’টি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও দিন বড় বিপদ হতে পারে। ট্যাঙ্ক দু’টি যাতে ভেঙে দেওয়া হয়, সে বিষয়ে আমরা দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে অনেক বার জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও রকম উদ্যোগ দেখা যায়নি।”
দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল (জনস্বাস্থ্য) প্রবীর পাল অবশ্য বলেন, “দমদম, দক্ষিণ দমদম ও উত্তর দমদম পুর এলাকায় পানীয় জল প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। এখন পাম্প হাউসের ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই ট্যাঙ্ক দু’টির আর দরকার নেই। আর ট্যাঙ্ক দু’টির অবস্থা বিপজ্জনক হওয়ায় পুরসভা শীঘ্রই উদ্যোগী হয়ে ওগুলি ভেঙে ফেলবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.