|
|
|
|
|
|
শুধুই দখলদারি |
ভূগর্ভ ভয়ঙ্কর |
দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ |
খাতায়-কলমে নিরাপত্তারক্ষী থেকে পুলিশ, সবই আছে। আবার দখলদারি হটিয়ে পথচারীদের হাঁটাচলার জন্য রাস্তা ফাঁকা থাকার নির্দেশিকাও রয়েছে। কিন্তু হাওড়া সাবওয়ের বাস্তব ছবিটা বরাবরই এর উল্টো।
জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কায় যখন রাজ্য জুড়ে সতর্কতা জারি করা হয় তখনই কেবল হাওড়া সাবওয়েতে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা চোখে পড়ে। প্রতি গেটের সামনে ও ভিতরে মোতায়েন থাকে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। গোটা সাবওয়ের কোথাও দেখা মেলে না হকারদের। কোনও গেটের মুখেই ব্যবসায়ীদের মালপত্র ডাঁই করে রাখা থাকে না। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই ফিরে আসে অব্যবস্থার ছবিটা। সাবওয়ের ভিতরে ব্যবসায়ীদের দখলদারির ফলে চরম ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। অভিযোগ উঠেছে, সব জেনেশুনেও প্রশাসন নির্বিকার। সাবওয়ের রাস্তা, গেট দখল করে ব্যবসা চালানোর পিছনে রয়েছে প্রশাসন থেকে এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতারও। |
|
ব্যবসায়ীদের কথায়, আগে ডালা প্রতি রোজ ৪০ টাকা দিতে হত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। টাকা না দিলে সাবওয়েতে ব্যবসার অনুমতি মেলে না। যদিও রাজনৈতিক মদতে হকার বসানোর কথা অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ বলেন, “সাবওয়েতে হকার বসবে না। ওরা আমাদের দলের কাদের টাকা দেয় জানতে পারলে তাদের আগে দল থেকে তাড়াব। সাবওয়ে মানুষের সুষ্ঠু ভাবে হাঁটাচলার জন্য, ব্যবসার জন্য নয়।” আর স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক লগনদেও সিংহের কথায়: “আমরা কোনও দিন টাকা নিইনি। বসতেও বলিনি।”
হাওড়া স্টেশন থেকে বেরিয়ে এই সাবওয়ে দিয়ে সহজেই বেরনো যায় বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। সাবওয়ের গেটের সংখ্যা ১৮। প্রতি দিন ভোর ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাবওয়ের গেট খোলা থাকে। দৈনিক গড়ে ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ এই সাবওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন। অথচ, সাবওয়ের সিঁড়িতে ও ভিতরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসছেন কয়েকশো হকার। এর উপর সন্ধে থেকেই বসে জমজমাট বাজার। |
|
ভুক্তভোগীদের কথায়, বাজারের জন্য রাতে সাবওয়ে দিয়ে যাতায়াত করাটাই সমস্যার। কেননা, অধিকাংশ মানুষই কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। তখন ট্রেন ধরার জন্য কোনও ভাবেই জোরে পা চালিয়ে যাওয়া যায় না। আবার সিঁড়ির উপর টুপি, মোজা, টর্চ, লাইটার, ঘর সাজানোর উপকরণ সমেত হরেক সামগ্রী নিয়ে বসে থাকা হকারদের জন্যও হাঁটাচলা করা দায়। সাবওয়ের গেটের সামনে ফুটপাথে বসা হকারদের মালপত্রের জন্য অধিকাংশ সময়ে গেটও খুঁজে পাওয়া যায় না। বর্ধমান থেকে রোজ বিবাদী বাগের অফিসে আসেন রমেশ পাশোয়ান। তাঁর কথায়: “রাতে ট্রেন ধরার তাড়া থাকে। ছুটতে গেলেও বিপদ। বাজারের আনাজের খোসায় পা হড়কে আছাড় খাওয়ার ভয় থাকে। কাউকে সরতে বললে তো কথাই নেই, ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।”
সাবওয়ে দখল করে হকার ও বাজার বসার সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে নিরাপত্তার সমস্যা। কেএমডিএ-র দায়িত্বে থাকা হাওড়া সাবওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছেন হাতে গোনা কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী। তাঁদেরও শিফটিং ডিউটি থাকে। ফলে তিন-চার জনের হাতেই থাকে এত বড় সাবওয়ের দেখভালের দায়িত্ব। |
|
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, গেটের সামনে কিংবা সাবওয়ের ভিতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বস্তা বা ব্যাগ পড়ে থাকলেও তার ভিতরে কী আছে তা দেখার কেউ থাকেন না। অবশ্য সাবওয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেদেরই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কেননা, তাঁদের ভরসা বলতে হাতের লাঠি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তাকর্মী বললেন, “একটা লাঠি নিয়ে তিন-চার জনে আর কী-ই বা করব? তাই বড় কোনও গন্ডগোল দেখলে পুলিশ
ডেকে আনি।”
সাবওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের ১৭ জন্য কর্মী প্রতি দিন বিভিন্ন শিফ্টে সাবওয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। কেএমডিএ’র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাবওয়েতে কেউ পানের পিক, থুথু কিংবা অন্য কিছু ফেলে নোংরা করছেন কি না এবং বেওয়ারিশ কিছু পড়ে আছে কি না তা দেখার কাজ আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদের।” সাবওয়ের ভিতরের বাজার ও হকারদের দখলদারির বিষয়ে সুশান্তবাবুর বক্তব্য: “বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
কিন্তু লাঠিধারী কয়েক জন মাত্র নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে কি এত গুরুত্বপূর্ণ সাবওয়ের দেখভাল করা সম্ভব? কেএমডিএ সূত্রে খবর, স্টেশনের সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের সংযোগকারী এই সাবওয়ের নিরাপত্তার ভার রেল ও জেলা পুলিশ, উভয়েরই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা বলেন, “আমরা সাবওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করি। কিন্তু তার নিরাপত্তা দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা কী করে করব? আমাদের যে নিরাপত্তারক্ষী থাকেন তাঁরা কেউই আগ্নেয়াস্ত্রধারী নন। রেল ও জেলা পুলিশেরও বিষয়টি দেখা উচিত।”
যদিও হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্তি দাস বলেন, “সাবওয়ের দায়িত্ব রেল পুলিশের সীমানার মধ্যে পড়ে না। ওটা সিটি পুলিশের অধীন।” হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “সাবওয়েতে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আরও বেশি করে পথচারীরা যাতে সাবওয়ে ব্যবহার করেন তা-ও দেখা হচ্ছে। বাজার ও হকারদের দখলদারির বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|