ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে এ শহরের যে হাল হয়, আরও এক বার তা-ই হল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার বৃষ্টির পরে শুক্রবার ভোর থেকে ফের প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে ফিরে এল জলমগ্ন কলকাতার চেনা ছবিটাই। কালবৈশাখীর দাপটে হাওড়াতেও বাজ পড়ে এবং ঘর ভেঙে দু’জনের মৃত্যু হয়। তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতার কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়। উত্তর ও দক্ষিণে কিছু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। ল্যান্সডাউনে একটি বস্তিতে গাছ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১০টি ঘর। ঝড়ের দাপটে এ দিন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ এবং হাওড়া শাখায় লোকাল ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। সব মিলিয়ে বেলা গড়াতে রাস্তাঘাটে নাজেহাল হন মানুষ। তবে, ছুটির দিন এবং ভোরের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় তেমন যানজট হয়নি। |
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ভোরে উত্তর কলকাতায় ঘণ্টায় ৫০ ও দক্ষিণে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জল জমে যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, সুকিয়া স্ট্রিট, মানিকতলা ও ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলায়। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সকাল থেকেই পুরসভার সদর দফতরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। কাজের তদারকিতে ছিলেন মেয়র পারিষদ রাজীব দেব। তিনি জানান, শহরের কিছু নিচু এলাকায় জল জমে। পাম্পিং স্টেশন চালু করে জমা জল দ্রুত সরানো সম্ভব হয়। তবে, কোথাও কোথাও প্রায় ঘণ্টা দুয়েক জল জমে থাকায় এলাকাবাসীরা সমস্যায় পড়েন।
মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, এ দিন সকাল সওয়া সাতটা নাগাদ ঝড়ের দাপটে ২৫ নম্বর ল্যান্সডাউন প্লেসে একটা বড় গাছ পাশের বস্তির উপরে ভেঙে পড়ায় ১০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে বলে দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন। এপিসি রোড এবং বিটি রোডেও গাছ ভেঙে পড়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, ‘ট্র্যাক সার্কিট’ ভিজে গিয়ে বিকল হওয়ায় শিয়ালদহ মেন এবং দক্ষিণ শাখায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল কাজ করছিল না। ওভারহেড তারেও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল। ফলে, প্রায় প্রতিটি লোকাল ট্রেনকেই কিছু দূর অন্তর দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছিল। কখনও ‘পেপার সিগন্যাল’ (স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে লোক মারফত সিগন্যাল) পেতে দেরি হচ্ছিল, কখনও ফের বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছিল চালককে। সকাল সাড়ে ১০টার পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় ট্রেন চলাচল। হাওড়া শাখাতেও ‘রুট রিলে ইন্টারলকিং’ (সিগন্যাল) ব্যবস্থা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়। তবে বৃষ্টি কমার পরে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এই শাখায় লোকাল ট্রেন স্বাভাবিক হয়। আর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়, ভোরে হাওড়া থেকে চার জোড়া লোকাল ট্রেন বাতিল হয়। এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস।
অন্য দিকে, হাওড়া পুলিশ সূত্রের খবর, ভোরে ঝড়বৃষ্টির সময়ে শালিমার চার নম্বর গেটের সামনে বজ্রাঘাতে মারা যায় মহম্মদ মুন্না (১৮) নামে এক কিশোর। ডোমজুড়ের কাছে সলপে টালির ছাদ ভেঙে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান রিন্টু শেখ (৪৫)। |