নিউ টাউনের প্রস্তাবিত অর্থতালুকে (ফিনান্সিয়াল হাব) আরও বেশি সংখ্যক লগ্নিকারীকে জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্যে সেখানে একজোড়া দীর্ঘ বহুতল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে হিডকো। ওই ‘টুইন টাওয়ার’-এর নকশা তৈরি ও নির্মাণকাজের জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে ‘গ্লোবাল টেন্ডার’ ডাকা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএল অ্যান্ড এফএস)-কে। হিডকো-র এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কারস কমিটি (এসএলবিসি)।
অর্থতালুক বা ফিনান্সিয়াল হাব’কে বলা যেতে পারে আর্থিক কর্মকাণ্ডের স্নায়ুকেন্দ্র। ব্যাঙ্ক, বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ বিবিধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেখানে ফ্রন্ট অফিস, শাখা অফিস, ডেটা অফিস খোলে। থাকে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, শেয়ার ও ঋণপত্র কেনা-বেচার বন্দোবস্ত। সোজা কথায়, এক চৌহদ্দির মধ্যে সংস্থা ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবার সংস্থান। বাম আমলে নিউ টাউনে তিনশো একর জমি নিয়ে যৌথ উদ্যোগে অর্থতালুক তৈরির যে পরিকল্পনা হয়েছিল, ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরকার জানিয়ে দেয়, অর্থতালুক হবে, তবে তা সরকার একাই করবে। বৃহস্পতিবার এসএলবিসি-র বৈঠকেও সরকারের এই মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন।
মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনামতো গত ১০ মার্চ দ্বিতীয় বারের জন্য নিউ টাউনে অর্থতালুকের উদ্বোধন হয়েছে। আর সূচনাতেই ঘোষণা হয়েছে, এই হাবে ব্যাঙ্ক, বিমার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস করতে নিউ টাউনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট’ (সিবিডি) এলাকায় পরিকাঠামোগত সুবিধা-সহ ২৫ একর জমি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তার কাছে ‘সিন্থেসিস’ নামে একটি বাড়িকেও অর্থতালুকের জন্য চিহ্নিত করা হয়। ভবনটির ছ’হাজার বর্গফুট জায়গা পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ভাড়া দেবে হিডকো।
কিন্তু ভবিষ্যতের চাহিদার কথা ভেবে আরও এক পা এগোতে চাইছে সরকার। ‘টুইন টাওয়ার’-এর পরিকল্পনা তারই ফসল। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনাকারীদের মাথায় আছে নিউইয়র্কের সেই প্রসিদ্ধ টুইন টাওয়ারের কথা। নিউ টাউনের জোড়া টাওয়ার তারই আদলে হবে ঠিকই, কিন্তু উচ্চতা হবে কম। কেন?
হিডকোর এক মুখপাত্র বলেন, “নিউ টাউন থেকে বিমানবন্দরের দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার। তাই চাইলেও ওখানে বেশি উঁচু বাড়ি তৈরি করা যাবে না।” তাই আপাতত স্থির হয়েছে, ১২০ মিটার (প্রায় ২৫তলা) উঁচু দু’টি অফিসবাড়ি পাশাপাশি মাথা তুলবে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, নির্মাণসংস্থার নাম চূড়ান্ত হলে টাওয়ার দু’টো বানাতে বছর দুই লাগবে। আগ্রহী সংস্থাগুলোকে টুইন টাওয়ারে অফিস করার জায়গা দেওয়া হবে ‘লিজ’ ভিত্তিতে।
উদ্বোধনের পরে হাব তৈরির কাজ কতটা এগোল?
হিডকো-র দাবি, ‘সময়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে’ কাজ এগোচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সিবিডি-তে জমি চেয়ে ইতিমধ্যে দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, একটি বিদেশি ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা চিঠি দিয়েছে। যদিও সিবিডি’র ওই ২৫ একরে ‘প্লট’ সাকুল্যে ন’টি। চাহিদা বুঝে আরও জমি বরাদ্দ করতে পারে হিডকো।
নতুন অর্থতালুক যাত্রা শুরু করলেও বাম আমলেরটা বাতিল হল কেন, সে প্রশ্ন কিন্তু এখনও রাজ্যকে তাড়া করে ফিরছে। মহাকরণ-সূত্রের খবর: ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ফিনান্স সার্ভিসেস সচিবকে চিঠি লিখে নতুন সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়ে সকলের ‘সহযোগিতা’ চাওয়া হয়েছে। এ দিন এসএলবিসি-র বৈঠকেও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তারা দেবাশিসবাবুর কাছে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, আগের যৌথ উদ্যোগ থেকে হিডকো বেরিয়ে এসেছে। রাজ্য সরকার এখন একাই প্রকল্পটি রূপায়ণ করবে। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের উদ্দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে দেবাশিসবাবু বলেন, “অর্থনীতির বিশেষজ্ঞেরা এক জায়গায় হলে নতুন নতুন ভাবনার উদয় হবে। অর্থতালুককে কেন্দ্র করে এই পরিবেশটাই সরকার তৈরি করতে চাইছে।”
এ দিকে ‘সিন্থেসিস’ নামের বাড়িটিতে জায়গা ভাড়া নিতে আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৪ এপ্রিল। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের আর্জিতে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ মে করা হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে প্রস্তাবিত ‘টুইন টাওয়ার’ সংক্রান্ত একটি উপস্থাপনাও পেশ করে হিডকো। |