পরিকল্পিত চক্রান্ত, বললেন বিমান
ক্ষতিপূরণের দাবিতে থমকে রেলপথ তৈরি
ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উর্বর কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেল, এই অভিযোগে চাষিরা আন্দোলনে নামায় থমকে গিয়েছে নতুন রেলপথ তৈরির প্রক্রিয়া। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের ঘটনা। ‘কালিয়াগঞ্জ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি’র নেতৃত্বে ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন অন্তত ৭০০ চাষি।
শুধুই ক্ষতিপূরণের দাবিতে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা অবশ্য নয়। রেলের একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। রেল সূত্রের খবর, ২০১১ সালের রেল বাজেটে কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা হয়। প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রেলপথ তৈরির জন্য প্রায় ১০০০ একর ব্যক্তি মালিকানার জমি অধিগ্রহণ করার কথা। ওই জমিতে রেল খুঁটিও বসিয়েছে।
কিন্তু বিভ্রান্তি বাড়ে এ বছর ১৭ ও ১৯ মার্চ কয়েকটি দৈনিকে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত রেলের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকে কেন্দ্র করে। কমিটির অভিযোগ, মার্চে প্রকাশিত হলেও ২২ ফেব্রুয়ারি রেলের পক্ষ থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল। ওই তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে জমি সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া পেশের কথাও বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল। এতেই ক্ষোভ বাড়ে। কারণ সে ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত আপত্তি বা বক্তব্য থাকলে তা জানানোর জন্য খুবই কম সময় পাচ্ছেন চাষিরা। কমিটির সভাপতি প্রদীপ সরকার বলেন, “এ ভাবে জমির মালিকদের অন্ধকারে রেখে উপযুক্ত সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা না করে রেল কার্যত বেআইনি কাজ করেছে।” অবিলম্বে জমির উপযুক্ত দাম, পরিবারের এক জন সদস্যকে চাকরি এবং ভূমিহীন খেতমজুরদের পৃথক আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার কথা লিখিতভাবে ঘোষণা না করলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে দেওয়া এবং দরকারে রেল অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রদীপবাবু।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়াকে বৃহস্পতিবার স্মারকলিপিও দেয় কমিটি। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা শুধরে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা না পর্যন্ত জমিতে খুঁটি পুঁততে দেওয়া হবে না বলেও কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়। জেলাশাসক বলেন, “কমিটির সদস্যদের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাধা না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। রেল নিযুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমার ও কমিটির সদস্যদের কথা হয়েছে। শুনেছি, তিনি কমিটির সদস্যদের বলেছেন, যতদিন না কালিয়াগঞ্জের কমিটির সদস্যদের সঙ্গে রেল কর্তাদের বৈঠক হচ্ছে ততদিন ওই জমিতে খুঁটি পোতার কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে।” ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কমিটি ও চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র বার করার চেষ্টা করবে রেল।
বস্তুত, উর্বর ওই ওই জমিতে বছরের দু’দফায় শস্য চাষ করেন অনেকেই। বাকি সময়ে শাক-সবজি ফলান তাঁরা। কৃষিজীবী খুলাসু সরকার, রাজেন মালাকার, রবি বর্মনদের বক্তব্য, “আমরা ওই জমিতে চাষ করে সংসার চালাই। রেল দফতর ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা না করেই জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, পরিবারের একজনের চাকরি ও খেতমজুরদের ব্যবস্থা না করলে জমি অধিগ্রহণ করতে দেব না।”
এই উদ্বিগ্ন রেল কর্তৃপক্ষ। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহারের ডিআরএম ভূষণ পটেল বলেন, “জমির মালিকদের অভিযোগ হাতে এলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটুকু বলতে পারি, যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাঁরা রেলের নিয়ম অনুসারে জমির দাম ও প্রয়োজনে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।”
‘নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি’র আন্দোলনকে সমর্থন করেছে সিপিএম। কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রমথনাথ রায়ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে চেষ্টা করার আশ্বাস দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের। জেলা তৃণমূলের প্রবীণ নেতা, দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সবিস্তারে কথা বলেছেন।
কমিটির অবশ্য দাবি, তাদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ নেই। কমিটির সভাপতি বলেন, “১৯৯৮ সালে এই কমিটি গঠন হয়। কমিটির সদস্যদের কোনও রাজনৈতিক রং নেই। বিভিন্ন আন্দোলনে আমরা সব রাজনৈতিক দলেরই সহযোগিতা চাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.