দরকার ছিল চারটে। এল ন’টা। বাড়তি পাঁচটা যে শুধু বেশি দামে কেনা হল তা-ই নয়, তার জন্য টেন্ডারও ডাকা হল না!
সম্প্রতি এই ‘অনিয়ম’ ধরা পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। রক্ত, রক্তের উপাদান, ব্লাড কিট ইত্যাদি ব্লাড ব্যাঙ্কে যথাযথ তাপমাত্রায় সংরক্ষিত রাখতে জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ন্যাকো)-র দেওয়া টাকায় চারটে কুলার কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিল স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ রাজ্য এড্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (স্যাক্স), গত বছরের গোড়ায়। পরে দেখা গেল, টেন্ডারের বালাই না-রেখে, বিস্তর বেশি দামে অতিরিক্ত পাঁচটা কুলার (এক-একটার দাম সাড়ে চার লক্ষ টাকার বেশি) কিনে ফেলা হয়েছে! যেগুলোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কোনও বিভাগ থেকেই কোনও আবেদন জমা দেওয়া ছিল না!
বছর ঘুরে গেলেও বাড়তি কুলারগুলো রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বাক্সবন্দি হয়ে নষ্ট হচ্ছে। এবং দরকার না-থাকতেও যাঁরা ওগুলো কেনার সুপারিশ করেছিলেন, এখনও তাঁদের কোনও শাস্তি হয়নি। দফতরের খবর: স্যাক্সের কেনাকাটায় ‘গরমিল’ আছে আঁচ করেই ন্যাকো এ ব্যাপারে অডিট-পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়া সেই রিপোর্টে দরপত্র ছাড়া বাড়তি কুলার খরিদ সম্পর্কে স্যাক্সের অ্যাডিশন্যাল ডিরেক্টর (প্রোকিওরমেন্ট)-এর লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বর্তমান পদাধিকারী অমিতাভ বিশ্বাস এখনও তাঁর ব্যাখ্যা পেশ করেননি। এ দিকে ন্যাকো জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে জবাব না-পেলে স্যাক্সকে পরের দফার টাকা পাঠানো হবে না।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: প্রথম চারটি কুলারের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল ২০১১-র ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু অ্যাডিশন্যাল ডিরেক্টর (প্রোকিওরমেন্ট) অমিতাভবাবু ওই দিনেই একই সংস্থা থেকে বিনা দরপত্রে অতিরিক্ত দু’টি কুলার কেনার নির্দেশ দেন। তিনি আবার সে বছরই ১৪ মার্চ আরও তিনটে কুলার কেনার প্রস্তাব দেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও কামারহাটির নতুন তিনটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য।
১৭ মার্চ বিনা টেন্ডারে সেগুলোর পারচেজ অর্ডার বেরিয়ে যায়। প্রথম চারটে কুলারের ক্ষেত্রে যেখানে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা করে দাম দেওয়া হয়েছিল, সেখানে একই সংস্থার পরের পাঁচটি কুলার কেনা হয় ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দরে। স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের অভিযোগ: স্যাক্সের তদানীন্তন যুগ্ম অধিকর্তা (অর্থ) কুণাল ঝা এ বিষয়ে লিখিত আপত্তি জানালেও তা গ্রাহ্য হয়নি।
কুলারগুলো কোথায় কোথায় বসানোর কথা ছিল? স্যাক্স-সূত্রের খবর: ন’টার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে দু’টো, মালদহ মেডিক্যালে একটা, বহরমপুরে একটা, মেয়ো হাসপাতালে তিনটে ও কলকাতা মেডিক্যালে একটা কুলার পাঠানো হয়। কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বসানোর জন্য কেনা কুলার বসানো হয়েছে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে, কারণ সাগর দত্তে কোনও ব্লাড ব্যাঙ্কই নেই। কুলারগুলো আছে কী অবস্থায়?
স্যাক্স-কর্তারা জানাচ্ছেন, মেয়োর তিনটে কুলারই বাক্সবন্দি। জলপাইগুড়িরটাও। বহরমপুর হাসপাতালের কুলার এখনও বসানো যায়নি। মালদহেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে কুলার অচল।
অর্থাৎ ন’টির মধ্যে ছ’টা তো চালু হয়নি! এমন অবস্থা কেন? অমিতাভবাবুর ব্যাখ্যা, “মেয়ো হাসপাতালে স্যাক্সের রক্ত সঞ্চয় কেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল বলে তিনটে কুলার পাঠানো হয়েছিল। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে। মালদহ-মুর্শিদাবাদেও দ্রুত চালু করার চেষ্টা চলছে। অডিট সংস্থাকে ঠিক সময়ে জানিয়ে দেব।” |