|
|
|
|
রাজ্য সরকারের তালিকা তলব |
জঙ্গলমহলে অডিট হয়নি বহু পঞ্চায়েতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ ১১টি ব্লক এলাকার অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরেই অডিট হয়নি। আগে এক বার সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে অডিট করানোর উদ্যোগ হলেও তখনকার ‘অস্থির’ পরিস্থিতিতে আর কাজ এগোয়েনি। পরিস্থিতি পাল্টাতে এখন ফের জঙ্গলমহলের পঞ্চায়েতগুলিতে অডিট করানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ১১টি ব্লকের কতগুলি পঞ্চায়েতে দীর্ঘ দিন অডিট হয়নি, তার তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে এ বার অডিট করার মতো পরিস্থিতি রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। গত ৮ মার্চ জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-র কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিওদের চিঠি পাঠিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত)। জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলির তালিকা জেলায় পৌঁছবে। পরে সেই তালিকা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক মুফতি সওকত সামিম বলেন, “পরিস্থিতি অনুকূল না-থাকায় ওই ১১টি ব্লকের বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে গত ক’বছর অডিট হয়নি। কোন ব্লকের কতগুলি পঞ্চায়েতে অডিট হয়নি, বিডিওদের কাছ থেকে সেই তালিকাই চাওয়া হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “এলাকার পরিস্থিতি এখন পাল্টাছে। ফলে, এ ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেলাশাসকের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, সেখানে ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ বলে পরিচিত জঙ্গলমহল এলাকার ১১টি ব্লকেরই উল্লেখ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েতেস্তরে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কখনও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে। কখনও বা একই কাজ একাধিকবার হয়েছে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। সাধারণ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, অডিট হলে দুর্নীতি ধরা সম্ভব। এমন উদাহরণও রয়েছে। যেমন, ক’মাস আগে সিপিএমের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ তছরুপের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে শালবনি ব্লকের গড়মালে। জগন্নাথ মাহাতো নামে ওই প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়ে মহকুমাশাসকের (সদর) কাছে চিঠি পাঠান বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস। পঞ্চায়েত-অডিটে দেখা গিয়েছিল, ২০ হাজার ৯৭৮ টাকার কোনও হিসেব নেই। এই পরিমাণ টাকা পঞ্চায়েতের কোষাগার থেকে নেওয়া হলেও পরে আর তা জমা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়। পরে অবশ্য প্রাক্তন প্রধান ওই পরিমাণ অর্থ পঞ্চায়েতে ফেরত দেন। জঙ্গলমহল এলাকার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে এখনও ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। একাংশ পঞ্চায়েতে আবার ঝাড়খণ্ডী দলগুলি ক্ষমতায়। সাধারণ গ্রামবাসীদের বক্তব্য, পঞ্চায়েতের কাজে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই দুর্নীতি বাড়ছে। ‘ভুয়ো’ মাস্টার-রোল তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাত করাও হচ্ছে। জেলা প্রশাসন অবশ জানিয়েছে, এমন কোনও অভিযোগ এলে দ্রুত তা খতিয়ে দেখা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হয়। জানা গিয়েছে, ওই ১১টি ব্লকের অধিকাংশ পঞ্চায়েতে গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০১০ সালের পর থেকেই আর অডিট হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি দেখে এখন ফের সেই অডিট করানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর ফলে পঞ্চায়েতের কাজে আরও ‘স্বচ্ছতা’ ফিরবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পঞ্চায়েত স্তরের অডিটের বিষয়টি সাধারণত বিডিও অফিস থেকেই দেখভাল করা হয়। রাজ্য সরকার তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে। তাই বিডিওদের সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের নামের তালিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।” জানা গিয়েছে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) বিডিওদের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে ৭ এপ্রিলের মধ্যে ওই তালিকা পাঠানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|