বৃহস্পতিবার বিকেলের ওয়াংখেড়ে দেখে মনেই হচ্ছে না চব্বিশ ঘণ্টা পরে সেই চত্বরে ম্যাচ হওয়া সম্ভব বলে! চার দিকে গোছগাছ। ঠুকঠাক। ধুলোবালি পরিষ্কার। কন্ট্র্যাক্টরের লোকেদের ভ্যানে ঠাসা। স্টেডিয়ামের বাইরে বিশাল বিশাল কাট-আউট। সবই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মাঠের ভেতর যারা প্র্যাক্টিস করছে তারা অবশ্য পুণে ওয়ারিয়র্স। তা তাদের দেখার জন্য না আছে গ্যালারিতে কোনও ভিড়। না মাঠের ধারে কোনও চাঞ্চল্য। মিডিয়ার লোক গুনে দেখলাম সাকুল্যে চার জন। আইপিএল উদ্বোধনী ম্যাচের বাহার দেখে মুম্বইকররা যেন আরও বেশি করে শুক্রবারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তাচ্ছিল্য ভরে দেখছে। আপাত অসম এই যুদ্ধের প্রাক্কালে পুণের সর্বাধিনায়ক খুলে বললেন তাঁর মনোভাব। পুণে-মুম্বই বলতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-এর মুখে অনিবার্য ভাবে ফিরে এল কেকেআর! আর নাইটদের সেই সময়কার শাসন ব্যবস্থা!
প্রশ্ন: এ তো পরিষ্কার ডেভিড বনাম গোলিয়াথ। এমন বিশালাকার প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে দাঁড়িয়ে পুঁচকে ডেভিড কী লড়বে। তার তো আরওই দিশেহারা হয়ে যাওয়া উচিত।
সৌরভ: টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কিছু বলা যায় না। ওই তিনটে ঘণ্টা যারা ভাল খেলে তারাই জেতে। ওই তিনটে ঘণ্টা।
প্র: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নতুন ওপেনারটাকে দেখলেন? রিচার্ড লেভি!
সৌরভ: হ্যাঁ ভাল ব্যাট করে।
প্র: ভাল মানে! হাতে যা শট আছে একা খেললে সচিনেরও দরকার পড়বে না।
সৌরভ: যত টুর্নামেন্ট এগোবে তত ওকে বিপক্ষ মাপবে। তত কোচেরা বিশ্লেষণ করবেন ওর খুঁটিনাটি। তত আরও চাপে পড়বে ওর ব্যাটিং।
প্র: কোচ বলতে মনে পড়ল এ বারে ন’টা টিমের মধ্যে তিন জন কোচ কাম ক্যাপ্টেন। আপনি, দ্রাবিড় আর গিলক্রিস্ট।
ট্রেন্ডটা কীসের ইঙ্গিতবাহী?
সৌরভ: আমরা কেউই ঠিক কোচ নই। কোচ সব ক’টা টিমেরই আলাদা করে কেউ না কেউ আছে। আমাদের যেমন কোচ হল অ্যালান ডোনাল্ড আর প্রবীণ আমরে। আমি মেন্টর কাম ক্যাপ্টেন। আমি অবশ্য বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি দিনের শেষে ক্যাপ্টেনকে লিড করা ছাড়াও মেন্টর হতেই হয়। সে জায়গাগুলোতে নাম যারই দেওয়া থাক! |
প্র: যাক, সেই মেন্টর হিসেবে পুণে টিমে আপনার চ্যালেঞ্জ দু’জন। আশিস নেহরা আর জেসি রাইডার।
সৌরভ: নেহরা চ্যালেঞ্জ নয়। ও আমার আন্ডারে ইন্ডিয়ান টিমে খুব ভাল খেলেছে। ফিট থাকলে ওকে আমি ঠিক বার করে নেব। আর জেসি রাইডার ভাল খেলার জন্য খুব উদগ্রীব। টিমে মনোবিদ থাকলেও নিজস্ব সাইকোলজিস্ট নিয়ে এসেছে। আমার মনে হয় ভালই হবে। আর সত্যি বলতে কী মাঠের বাইরে কে কোথায় গেল, কখন ফিরল, মদ খেল কি না এ সব নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই।
প্র: রাতের কারফিউতে বিশ্বাস করেন না?
সৌরভ: না। আমি দেখি লোকে মাঠে কেমন লড়ছে। তার আগের রাত্তিরে ক’টায় ফিরেছে দিয়ে আমি কী করব!
প্র: আইপিএল ওয়ানে যে লোকটা নাইটদের নেতা ছিল। আর আইপিএল ফাইভে যে পুণের ক্যাপ্টেন্সি করতে নামবে। দু’জনের মধ্যে তফাত কী?
সৌরভ: দুটো আলাদা টিম। আমি নিজে এখন টি-টোয়েন্টিতে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তা ছাড়া দুটো ক্যাম্পের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা।
প্র: পরিবেশ আলাদা বলতে?
সৌরভ: সেটা আর না-ই বা ব্যাখ্যা করলাম।
প্র: আপনি কত নম্বরে খেলবেন? শুনছি তিনে!
সৌরভ: ওপেন করব ভেবে রেখেছি।
প্র: আচ্ছা মাইকেল ক্লার্ক যিনি আজ পর্যন্ত কখনও আইপিএলে আসতে চাননি। তাঁকে রাজি করালো কে?
সৌরভ: আমি কথা বললাম।
প্র: কতটা কাঠখড় পুড়োতে হল?
সৌরভ: একটুও না। এক কথায় রাজি হয়ে গেল। শেষ আটটা ম্যাচ ওকে পেয়ে যাব।
প্র: মানে ৫ মে-তে পাওয়া যাবে।
সৌরভ: শুধু ৫ মে কেন, পয়লা মে-তেও পাওয়া যাবে।
প্র: ৫ মে নিয়ে জাতীয় চ্যানেলগুলো অলরেডি প্রোগ্রামে আলাদা করে বলছে খান ভার্সাস দাদা!
সৌরভ: আরে এরা তো জবরদস্তি বানিয়ে ছাড়বে খান ভার্সাস দাদা।
প্র: মানে সত্যি সত্যি সেটা নয়?
সৌরভ: নয়। এটা স্রেফ গিমিক। কমপ্লিট গিমিক।
প্র: ঠিক আছে। চেন্নাইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চনকে কী বলছিলেন?
সৌরভ: (হাসি) মিস্টার বচ্চন আমায় স্নেহ করেন। দেখা হলেই অনেক কথা বলেন। বলছিলেন ৮ তারিখ পুণে-তে আমাদের ম্যাচ দেখতে আসবেন।
প্র: বচ্চন তো কখনও আইপিএল দেখতে আজ অবধি আসেননি।
সৌরভ: আসেননি। আমাদেরটাতেই প্রথম যাবেন।
প্র: পুণের এই ভাঙাচোরা টিমের সম্পূর্ণ দায়িত্ব একার কাঁধে নেওয়াটা মস্ত ঝুঁকি নয়? তা-ও ক্রিকেট জীবনের প্রান্তে এসে?
সৌরভ: আমি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আইপিএল প্রস্তুতির জন্য প্রচুর রগড়েছি। দেখা যাক সেই রগড়ানিটা কাজে দেয় কিনা?
আর চাপের কথা বলছেন! চাপ কখনও ফুরোয় নাকি। চাপ তো জীবনের সব পেশায় রয়েছে।
প্র: তা— এ পেশার শেষ দিকটায় এসে সবাই তো একটু আরাম করতে চায়। ভাবে অ্যাদ্দিন ঘানি টেনেছি। এ বার অন্যরা চাপ নিক।
সৌরভ: আমি যে দিন খেলা একেবারে ছেড়ে দেব সে দিন আরাম করব।
|
যখন নাইট-নেতা |
২০০৮: ম্যাচ ১৪, জয় ৬,
হার ৭, পরিত্যক্ত ১, ষষ্ঠ স্থান
২০১০: ম্যাচ ১৪, জয় ৭,
হার ৭, ষষ্ঠ স্থান |
|
|
প্র: চাপটা তা হলে সমস্যা নয়।
সৌরভ: চাপ যত ইচ্ছে থাক ওটা সমস্যা নয়।
প্র: তা হলে সমস্যা কী রাজনীতি?
সৌরভ: ইয়েস রাজনীতি হ্যান্ডল করাটা প্রবলেম।
প্র: কেকেআরে তিন বছর ছিলেন আপনি। তার মধ্যে দু’বছর ক্যাপ্টেন। সেখানে যা করতে পারেননি পুণের হয়ে করবেন কী করে আশা করছেন?
সৌরভ: পুণে টিমের সঙ্গে জন বুকানন বলে কেউ নেই। ওর সঙ্গে ঘর করা খুব কঠিন। প্রথম বছর প্রচুর সমস্যা করেছিল। সেকেন্ড ইয়ারে তো এক একটা ম্যাচে এক একজন ক্যাপ্টেন কী সব থিওরি প্রথমে আওড়াল। তার পর কী করল সবাই দেখতে পেলেন।
প্র: আপনার হাতেও তো প্রচুর ক্ষমতা ছিল?
সৌরভ: না না বুকানন প্রচুর ডিস্টার্ব করেছে। অনেক কিছু ঘেঁটে দিয়েছে।
প্র: এক কথায় কোচ বুকাননের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
সৌরভ: নাইটমেয়ার। নিশি আতঙ্ক।
প্র: পার্টনার হিসেবে আপনার কাছে কে বেশি অসহনীয়। গ্রেগ চ্যাপেল? না জন বুকানন?
সৌরভ: ও ভাবে বলা যায় না।
প্র: পুণে টিম নিয়ে অপদস্থ হলে কিন্তু পুরোটাই আপনার ঘাড়ের ওপর। বলতে পারবেন না অমুক করতে দেয়নি। আপনার হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা।
সৌরভ: সেটা খুব ভাল তো। প্রতিযোগিতামূলক খেলার তো এটাই সৌন্দর্য যে তার মধ্যে আগাম নিরাপত্তার কোনও ব্যাপার নেই। সবটাই ঝুঁকি। জিততেও পারেন। আবার গড়িয়ে চলে যেতে পারেন ভেতরে। |