কালবৈশাখী ঝড়ে বুধবার রাতে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের পাঁচিল ভেঙে জখম হয়েছিলেন দু’জন। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁদের। বৈঠকখানা এলাকার কেশব সেন স্ট্রিটের ঘটনা।
এ দিন মৃত্যুর খবর ওই এলাকায় পৌঁছতেই উত্তেজনা ছড়ায়। ‘বেআইনি নির্মাণে মদত’ দেওয়ার অভিযোগে দুর্ঘটনাস্থলের কয়েক কদম দূরে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় জনতা। ঘেরাও করা হয় স্থানীয় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা। হয় পথ-অবরোধও। ওই ওয়ার্ডের অন্তর্গত বৈঠকখানা, গোখানা, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট, পাটোয়ারবাগানের ‘অনুমতিবিহীন’ বহুতলগুলি ভাঙার ও স্থানীয় পুর-প্রতিনিধিকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে।
কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) বিশাল গর্গ জানান, এই ঘটনায় তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ জানায়, বাড়িটির এক প্রোমোটার মোহন দাসকে বুধবার রাতেই বেহালা থেকে ধরা হয়। বাড়ির মালিক রাজু ধর ও অন্য এক প্রোমোটার মহম্মদ শামিমের খোঁজ চলছে। |
স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার সন্ধ্যায় ঝড়ের সময়ে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের সঙ্কীর্ণ গলিতে নির্মীয়মাণ চারতলা ওই বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কালোদেবী দাস (৭০) এবং সুরজ দাসের (৪০)। স্থানীয়েরা জানান, গত শনিবারের কালবৈশাখীতে ওই একই বাড়ির ইট খসে তিন জন জখম হয়েছিলেন।
এ নিয়ে অভিযোগের আঙুল উঠছে এলাকার পুর-প্রতিনিধি স্বপ্না দাসের দিকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরই মদতে নিয়ম না-মেনে একের পর এক বহুতল তৈরি হচ্ছে। পুর-আইনের তোয়াক্কা করছেন না প্রোমোটার, বাড়ি মালিকেরা। রীতিমতো ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে উঠেছে সেখানে। অভিযোগ, পুলিশও এই ‘চক্রে’ জড়িত। পুলিশকে জানিয়েও তাই লাভ হচ্ছে না। উল্টে প্রোমোটারের শাগরেদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বহুতলের নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাশ্রমিক এ দিন বলেন, “মাস তিনেক ধরে বাড়ির কাজ চলছে। নকল সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছিল। ঢালাইয়ের সময়ে বালিও কম দেওয়া হত। ইটগুলিও নিম্নমানের।”তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে স্বপ্নাদেবী বলেন, “রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে ও সব কাজ হয়েছে। বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তা টের পেয়েছি। বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি।” তাঁর আরও বক্তব্য, পুর-প্রতিনিধি হওয়ার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। ওখানে আগে পরিদর্শনে গেলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। পুরসভাকে না জানিয়েই সেখানে বাড়িগুলি তৈরি হয়েছে।
|
সুরজ দাস। |
স্বপ্নাদেবী বলেন, “বেআইনি নির্মাণের কথা আগে জানলে সেগুলি ভেঙে দেওয়া হত। ঘটনার কথা জেনেই বহুতলটি ভাঙার জন্য পুর-কর্মীদের পাঠানো হয়।”
পুলিশের দাবি, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়েক জন প্রোমোটার এবং বাড়ি মালিককে গ্রেফতারও করা হয়। এর আগেও কয়েক বার গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজু। পুলিশ জানিয়েছে, পুরসভাকে ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণের কথা জানানো হলেও পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে এত দিন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বহুতলের পাশের বাড়িতেও অবৈধ নির্মাণ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুর্ঘটনার পরে আতঙ্কে ওই বাড়ির বাইরে রাত কাটিয়েছেন সেখানকার ভাড়াটে পার্বতী দাস, হেমন্তী দাস, শচীনকুমার দাসেরা। পার্বতীদেবী বলেন, “আমাদের প্রাণের কোনও ভরসা নেই। জোরে হাওয়া দিলে বা একসঙ্গে দু’-চার জন লোক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই বাড়িটি থরথরিয়ে কাঁপে। কোনও দিন ভেঙে পড়লে সবাই চাপা পড়ব। কেউ বাঁচবে না।”
|