সোনার গয়না বন্ধক রেখে নেওয়া ঋণের সুদ বেঁধে দেওয়ার পথে হাঁটছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থার (এনবিএফসি) জন্যই এই পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে তারা। তা ছাড়া, এই সব সংস্থার মধ্যে যারা শুধু স্বর্ণঋণেরই ব্যবসা করে, তাদের ক্ষেত্রে বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে টাকা তোলার বিষয়েও নির্দিষ্ট বিধি প্রণয়ন করা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তবে এ নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)-কে প্রশ্ন করা হলে, কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে তারা।
পাশাপাশি, সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার পরিসর বাড়ছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। এত দিন এই ঋণ নেওয়া যেত শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। কিন্তু শীঘ্রই বাণিজ্যিক কারণেও তা পাওয়া যাবে বলে ব্যাঙ্কিং মহল সূত্রে খবর।
বর্তমানে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাগুলিতে স্বর্ণঋণে সুদের হার ব্যাঙ্কের থেকে অনেক বেশি। বহু ক্ষেত্রে বছরে ৩০% পর্যন্ত সুদ নেয় তারা। যেখানে নিজেদের বেস রেটের উপর গড়পড়তা আরও ৪% যোগ করে ওই ঋণে সুদ ধার্য করে ব্যাঙ্কগুলি। যেমন, এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে ওই হার ১৪.৭৫%। তার উপর ব্যাঙ্কটির স্বর্ণঋণ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণা গুহর দাবি, “গ্রামে কৃষি ক্ষেত্রের জন্য কেউ স্বর্ণঋণ নিলে ৭% সুদ নিই আমরা। সঠিক সময়ে শোধ করলে, সুদে কেন্দ্রের ৩% ভর্তুকিরও সুবিধা পান কৃষকেরা। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রে সুদ দিতে হয় ৪% হারে।” সুদে এই বিপুল ফারাকের কথা মাথায় রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এন বি এফ সিগুলির জন্য সুদ বেঁধে দেওয়ার রাস্তায় হাঁটতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এখন বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলছে স্বর্ণঋণের ব্যবসা করা বহু এনবিএফসি-ই। কিন্তু ওই বন্ড ছাড়ার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট নীতি নেই। গচ্ছিত সোনার গয়নার মোট মূল্যের নির্দিষ্ট শতাংশের বেশি অর্থ যাতে ওই সব সংস্থা বন্ড ছেড়ে তুলতে না-পারে, তা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভাবছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, এখন আকাশছোঁয়া সোনার দামের বাজারে ভাল অঙ্কের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে অল্প গয়না বন্ধক রেখেই। তাই দ্রুত বাড়ছে স্বর্ণঋণের চাহিদা। যা দেখে এই ব্যবসায় পা রাখছে বা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্যাঙ্ক নয় এমন বেশ কিছু আর্থিক সংস্থাও। এদের মধ্যে অনেকেরই একমাত্র ব্যবসা আবার স্বর্ণঋণ। তাই গয়না বন্ধক রেখে ঋণের এই ব্যবসায় ওই সব সংস্থা যাতে ভবিষ্যতে সমস্যায় না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই একাধিক নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
যেমন, বন্ধক রাখা গয়নার মূল্যের ৬০% পর্যন্ত ঋণ হিসেবে দেওয়া যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আগে এ ধরনের কোনও ঊর্ধ্বসীমা না থাকায় গয়নার মূল্যের ৮০, এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১০০% পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, সে ক্ষেত্রে সোনার দাম কমে গেলে কঠিন সমস্যায় পড়ত ওই ধরনের ঋণদাতা সংস্থাগুলি। তাই সেই ঝুঁকি এড়াতেই ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাঁচা সোনা (সোনার বার বা মুদ্রা) বন্ধক রেখে ঋণ না-দিতেও। জানানো হয়েছে, ঋণ মিলবে শুধু সোনার গয়না বন্ধক রেখে। সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত রাখতে স্বর্ণঋণদাতা এনবিএফসিগুলির শেয়ার মূলধন মোট মূলধনের অন্তত ১২% হওয়াও বাধ্যতামূলক করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। |