রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের আগাবহর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় ডাইনি অপবাদে দুজনকে খুনের পরে ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও অভিযুক্তরা কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশের দাবি অভিযুক্তদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুলিশের ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়েছেন বহু বাসিন্দা। তাঁদের অনেকেরই দাবি, উত্তর দিনাজপুরের পুলিশের একাংশ কী ধরনের ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া জরুরি। তাঁরা জানান, কিছুদিন আগে গোয়ালপোখরে ধর্ষণের মামলা তুলতে রাজি না-হওয়ায় ওই পরিবারের একটি শিশুকে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় অভিযুক্তরা বেশির ভাগই ধরা পড়েনি। দুটি ক্ষেত্রেই পুলিশ কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে দাবি করেছে। বাসিন্দাদের ক্ষোভের সঙ্গে সহমত হয়েছেন ইসলামপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনিও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ মন্ত্রী আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সবরকম সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেন। |
পাশাপাশি বাসিন্দাদের কাছে মন্ত্রী কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। মন্ত্রী বলেন, “ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পরেও কেনও অভিযুক্তরা গ্রেফতার হল না তা বুঝতে পারছি না। আমি জেলাশাসককে তৎপর হতে বলেছি। কারণ, অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত বাসিন্দারা আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারবেন না।” জেলা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারপার্সন সুনীলকুমার ভৌমিক জানান, অবিলম্বে দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার না হলে বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে দলের তরফে পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা হবে। সুনীলবাবুর পাশাপাশি এদিন ওই গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ সিংহ। বিধায়ক বলেন, “এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হলেও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটেনি। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। নিহতদের পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে ওই এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশি নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছি।” সম্প্রতি, আদিবাসী পাড়ায় অসুস্থ হয়ে এক মহিলা সহ দুজন মারা যান। ওই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দা ফুলমণি হাঁসদা(৪০) ও তাঁর দুই প্রতিবেশী মনো সোরেন ও আরতি সোরেনকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হয়। সোমবার রাতে ডাইনি সন্দেহে দুষ্কৃতীরা ফুলমণিদেবী ও মনোদেবীর বাড়িতে হামলা চালায়। মনোদেবীকে তাঁর মেয়ে চামেলি (১০) বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করে। দুষ্কৃতীরা ফুলমণিদেবী ও চামেলিকে খুন করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এলাকার একটি রাস্তায় দুষ্কৃতীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আরতিদেবীর শরীরে কোপালেও তিনি পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। এই ঘটনার পর ফুলমণিদেবীর ছোট ছেলে ঠাকুর হাঁসদা রায়গঞ্জ থানায় দুটি খুনের ঘটনায় স্থানীয় ৮ জনের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। |