‘এ বার আমি খুব রিল্যাক্সড। আমার মনে হয় আমাদের ইউনিটটা এ বার খুব মজবুত’
‘আমার আর দাদার কাছে পুরো ব্যাপারটাই এখন অতীত’
তিনি তখন মোটেও চেন্নাইয়ের উদ্বোধনী ম্যাচ টিভিতে দেখছিলেন না। বরঞ্চ গড়পড়তা আর পাঁচ জন অভিভাবকের মতোই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখাচ্ছিল তাঁর চোখমুখ। মেয়ের স্কুলের প্রিন্সিপালকে ছুটির দরখাস্তে সই করার সময়। মঞ্জুর হবে তো এক দিনের ছুটি? নাকি নাকচ হয়ে যাবে? বৃহস্পতিবার যে মেয়ে-সহ ন’জন বাচ্চাকে নিয়ে তিনি ইডেনে কেকেআরের ম্যাচ দেখতে আসছেন। স্ত্রী গৌরি ইতালিতে। তাই তিনিই পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের ন’জন বাচ্চাদের কাল স্বঘোষিত ‘বেবি-সিটার’। বুধবার রাতে মন্নতে নিজের লাইব্রেরির ঘরে বসে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে শাহরুখ খান এ রকমই চমকপ্রদ নানান কথাবার্তা বললেন। দাদা, মমতা, সচিনের অবসর, সব কিছু নিয়ে।
শাহরুখ খানের ছবি ডাব্বু রতনানির
প্রশ্ন: ‘কে’ এবং ‘কে’ চলতি মরসুমের সুপারহিট কম্বিনেশন। কাহানি এবং কলকাতা। এরপর কি খান এবং কেকেআর?
শাহরুখ: (হাসি) ইনশাল্লাহ, তাই যেন হয়। আরে, আমি তো কাহানি দেখিনি। কিন্তু আমার স্ত্রী-সহ সবাই চার দিকে এত প্রশংসা করছে যে সুজয় আর বিদ্যাকে ফোন করে আমি বললাম, তোমরা তো ফাটিয়ে দিয়েছ। আমাকে ছবিটা দেখতেই হবে এর মধ্যে। আর খান আর কেকেআর যদি বলেনএ বার আমি খুব রিল্যাক্সড। আমার মনে হয় আমাদের ইউনিটটা এ বার খুব মজবুত। অতীতে যে সব খিঁচুনির ব্যাপার ছিল সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠেছি। গৌতম গম্ভীরের কথা আমি বিশেষ ভাবে এখানে বলতে চাই। অধিনায়ক হিসেবে গম্ভীরের সবচেয়ে বড় গুণ হল, ও চার পাশে মাঠের বাইরে কী ঘটছে তার প্রভাব মাঠের মধ্যে পড়তে দেয় না। টিমের বাকিদের মনোভাবও দুর্দান্ত। ব্রেট লি কলকাতায় পা দিয়েই আমাকে এসএমএস করল যে, আমার সেকেন্ড হোমে এসে নামলাম। এ বার ভাল খেলতেই হবে। যে ক’জনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছেকালিস, পাঠান, সাকিবপ্রত্যেকের মনোভাব হল এই শহরটার জন্য কিছু করতে হবে। মজার ব্যাপার দেখুন, আমাকে নিয়ে এরা বেশির ভাগই শহরের বাইরের লোক। অথচ শহরের ভালবাসার সমাদর করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
হ্যাঁ, আমার টিমটায় অনেক সময় ওঠাপড়া ঘটেছে। কিন্তু কোথাও বাতাসে আমি একটা গন্ধ পাচ্ছি। যা ঘটে গিয়েছে, ঘটে গিয়েছে। এ বার নতুন সময়, নতুন দিন, নতুন মোড়। আমরা আগেও ভাল খেলার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। কিন্তু হয়তো প্যাশনের পরিমাণ বেশি হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বাড়তি প্যাশনটাই আমাদের ক্ষতি করছিল। আমি এক জন স্টার। আমার থাকা মানেই বাড়তি প্যাশনের আমদানি হচ্ছিল। দাদা আর এক জন। দাদা থাকা মানে প্রচুর প্যাশন। আইপিএল টুর্নামেন্টটা নতুন ছিল। প্রত্যাশা প্রচুর ছিল। সব মিলিয়ে আমরা ম্যানেজ করতে পারিনি। এ বছর আমাদের প্যাশন আর যুক্তির একটা খুব ভাল ভারসাম্য আছে।

প্র: বিশেষজ্ঞরা বলছেন কেকেআর নিয়ে আরও বেশি এ বার আশা করা যায়, যেহেতু বিশেষ কোনও ব্যক্তির ওপর দলটা নির্ভর করে নেই। অনেকে আছে।
শাহরুখ: আমি জানতাম যবে থেকে স্থানীয় প্লেয়াররা পারফর্ম করতে শুরু করবে তখন টিমটা আরও মজবুত হবে। এই যে মনোজ তিওয়ারি। আমার দেখে দারুণ লেগেছে ও কেকেআর থেকে ভারতীয় দলে খেলার সিঁড়িটা তৈরি করে ফেলল। লক্ষ্মী ইদানিং দারুণ খেলছে। এমনকী শুনলাম দেবব্রত দাসও ভাল ফর্মে আছে।

প্র: ফিল্মের দুনিয়ায় আপনার ব্র্যান্ড সুপার উইনার। যার হিট ছবির রেশিও ফ্লপের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। অথচ চার বারের আইপিএলে আপনার টিমের রেশিও প্রতি বারই বিপর্যয়ের। এক জগতের মহাসাফল্য। আর এক জগতের মহাব্যর্থতা। এই বৈপরীত্যের সঙ্গে সমঝোতা করছেন কী করে?
শাহরুখ: ব্যর্থ হতে কেউ চায় না। আমি তো নই-ই। আমি পাগলের মতো জিততে উন্মুখ একটা লোক। এমনকী শেষ বলে জেতার জন্য ১৮ রান চাই এই রকম অস্বাভাবিকতম অবস্থাতেও আমি বিশ্বাস করি টিম জিততে পারে। একটা কথা বলি, আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি একশো বছর বাদে কেকেআরের হিট-ফ্লপের রেশিওটাও আমার ছবির জীবনের মতোই দাঁড়াবে। এই যে আপনি বললেন না, হিট ছবি সংখ্যায় অনেক বেশি।
আমি একটা বই লিখেছি, তাতে একটা পুরো অধ্যায়ই আছে সাফল্যের ওপর। আসলে অধ্যায়টা ব্যর্থতার ওপর।

প্র: কবে আবার এই বইটা বেরল?
শাহরুখ: বইটা এখনও বার হয়নি (হাসি)। তবে অনেকটাই লিখে ফেলেছি। ব্যর্থতার এই অধ্যায়টাতে কেকেআর এবং জীবন থেকে পাওয়া অনেক শিক্ষার কথা লেখা আছে। যত দিন যাচ্ছে তত আমার আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, তুমুল সাফল্যের জন্য তুমুল ব্যর্থতাও দরকার। যত আপনি জীবনের অনিশ্চিত সব সমস্যার মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাবেন, তত আপনার জেতার ভিতটা শক্ত হবে। হলিউডের একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি এত সফল কী করে? তিনি বলেছিলেন, ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরে। তখন প্রশ্ন হল, ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখলেন কী করে? উনি জবাব দিলেন, অভিজ্ঞতা থেকে। প্রশ্ন হল, অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন কী করে? উনি এ বার বললেন, একরাশ ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে।

প্র: কেকেআরের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে কী কী শিখলেন?
শাহরুখ: প্রথমত শিখলাম যে সবাইকে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তারপর ভাবলাম, প্রতিটা ব্যর্থতার মধ্যেই এই অবিরত অনুসন্ধানটা চালানো উচিতব্যর্থ তো হলে। কিন্তু তুমি ঠিক কী চেয়েছিলে? আমি নিজের কাছে জবাব পাই, আমি চেয়েছিলাম তরুণদের একটা ভাল মঞ্চ করে দিতে। তখন নিজেকে বলি, তা হলে তো ঠিক ব্যর্থ নই। তরুণদের মঞ্চ তো রাতারাতি তৈরি হতে পারে না। আমার ফিল্ম জীবনের এই যে একুশ বছরের অভিজ্ঞতা, সেটা তো এক বছরে অর্জন করতে পারিনি। আমি নিজেকে বুঝিয়েছি চার-পাঁচ বছর খারাপ খেলেছি ঠিকই, কিন্তু ইনশাল্লাহ এক বার যদি ট্রফি জিতি, সব মুছে যাবে। প্রথম কয়েকটা বছর খুব খারাপ গেছে ঠিক কথা। রেজাল্ট আসেনি। একগাদা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেগুলো থেকে তো আমি শিখেছি। এখন যা পরিস্থিতি, কেবলই উন্নতির দিকে।

প্র: আইপিএল পাঁচে কেকেআর অভিযান শুরু করার আগে তার টিম মালিক। আর উদ্বোধনী আইপিএলের আগে টিম মালিকদু’জনের মনোভাবে পার্থক্যটা কোথায়?
শাহরুখ: আমি একই রকম এক্সাইটেড। একই সঙ্গে আমি অনেক ধৈর্যশীল হতে শিখেছি। আর সবচেয়ে আমায় যেটা অভিভূত করেছে সেটা হল কলকাতার মানুষ। এই ক’বছরে ট্রফি না পাই, একটা জিনিস বুঝেছি। কলকাতার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। বুঝেছি বিপর্যয়েও ওরা আমাদের পরিত্যাগ করে না। হ্যাঁ, হতেই পারে ওদের মধ্যে একটা বড় অংশ বিক্ষুব্ধ। হয়তো আমাদের কোনও কোনও সিদ্ধান্ত ওদের পছন্দ হয়নি। হয়তো ওরা আমাদের সম্পর্কে খুবই সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করে। হোক না, হতেই তো পারে। একটা পরিবারে তো হয়ই। এক জন অতি স্নেহশীল কাকার পাশে এক জন কাকিমা কি থাকেন না যিনি রাগী এবং মোটেই পছন্দ করেন না? তাতে কোনও সমস্যা নেই। টিকিট বিক্রি সামান্য কম হল কি না তাতেও কিছু যায় আসে না। কিন্তু প্রতি বার কলকাতা এয়ারপোর্টে নামার পর থেকেই একটা অদ্ভুত ঊষ্ণতা টের পাই। আর তার টানেই বাচ্চাগুলোকে বারবার নিয়ে যাই। ইডেন নিছক কাজের জায়গা হলে বাচ্চাদের নিয়ে যেতাম না।

প্র: আপনি তো এখন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর। কী ভাবছেন রাজ্যের জন্য? শোনা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাল দেখাও করবেন।
শাহরুখ: হ্যাঁ, দেখা করব আর দিদিকে মাঠে টেনে আনব। ওঁর এনার্জিটা আমার মনে হয় খুব উপকারী হবে। উনি যখন আমায় প্রস্তাবটা দিলেন, আমি এক কথায় লুফে নিই। আমার তখনই মনে হতে থাকে, ঠিকই তো, কেন আমি নই। আমি তো এই শহরেরই এখন অংশ। আমায় ভুল বুঝবেন না। আমি জানি কলকাতা শহরে এমন কোনও কোনও মানুষ আছে যারা শুধু রাজ্যের কেন, গোটা ভারতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর হতে পারে। কিন্তু আমি নিজেকে এমনই কলকাতার অংশ মনে করা শুরু করেছি যে আমার অফারটা বিস্ময়কর লাগেনি।

প্র: কলকাতার জন্য কী কী করবেন বললেন না তো?
শাহরুখ: আমায় যা বলা হবে করব। আর এমনিতেও তো কলকাতা নিয়ে সারাক্ষণ লাফালাফি করে থাকি। কালকেই একটা সার্ভেতে দেখছিলাম, স্পোর্টস ভিউয়ারশিপের শতকরা ৩৮ ভাগ একা কলকাতাই সরবরাহ করে। ভীষণ সংস্কৃতিমনস্ক, শিক্ষিত মানুষেরা এখানে থাকেন। আমি যে প্রথম এভি-টা তৈরি করি সেটা কলকাতার ওপর। আজ না হয় আমি হোটেল থেকে ইডেন, এর বাইরে যাই না। কিন্তু সেই এভি-টা তৈরি করার সময় কলকাতার অলিগলিতে ঘুরেছি। ট্রামে চেপেছি। ফোর্ট উইলিয়ামের উল্টো দিকের মাঠে বাচ্চাদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। আমার প্রথম অন্য শহরে নাটক কলকাতায় করা। এখানকারই কোনও একটা হলে। শেক্সপিয়র সরণিতে। নামটা ঠিক মনে পড়ছে না।

প্র: কলা মন্দির?
শাহরুখ: হতে পারে। অনামিকার হয়ে একটা ইংরেজি নাটক করেছিলাম। সেই স্মৃতিও সারাক্ষণ ভিড় করে থাকে।

প্র: কিন্তু এত কিছুর পরেও কোথাও যেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এপিসোডটা ঘুরেফিরে আসে। খান ভার্সাস দাদা। সেটা শুনলে আপনার তখন কী মনে হয়?
শাহরুখ: (একটু ভেবে নিয়ে) সমস্যা হল লোকে ভেবে নেয় শাহরুখ নিশ্চয়ই মানুষটা এ রকম হবে। এমনিতেও আমি যা করি, যেখানে যাই, সব চোখের সামনে চলে আসে। আর তা থেকে ফ্রেমের বাইরে আমি কী করে সেটা সম্পর্কেও লোকে ভেবে নেয়। ফিল্মের সেটে যেমন বেশির ভাগ সময় আমি একা বসে খাই। সে দিন এক জন সেটা দেখে অবাক হয়ে আমায় বললেন, আরে তুমি একা বসে টেবলে প্লেট রেখে খাচ্ছো? আমি মনে মনে ভাবলাম, তা হলে কী আশা করেছিলে? আমি মাথায় প্লেট রেখে খাব? স্টার মানেই কি আমার সব কিছু অস্বাভাবিক হবে?
আমি মনে করি দাদা এক জন দারুণ লোক। আমাদের দু’জনেরই নিজেদের সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধা আছে। যেটা ঘটেছে খুব দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু সেটাই তো জীবন। আমরা সবাই জীবন থেকে শিখি। তারপর আবার এগিয়ে যাই। আমি আজও মনে করি দাদা আমাদেরই এক জন। দেখা হলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরি। আমরা দু’জনে অন্তত ব্যাপারটাকে অতীত মনে করে পেছনে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মানুষই যদি না সরায় আমি কী করতে পারি? এ সব দেখেশুনেই আমি ইদানিং নিজেকে খুব গুটিয়ে নিয়েছি। লোকে যা ইচ্ছে বলে, যা ইচ্ছে লেখে। এক এক সময় সাংবাদিক সম্মেলনে মনে হয় চিৎকার করে বলি, শাট আপ! তার পরক্ষণেই ভাবি সেটা করলে লোকে বলবে, এ কী শাহরুখ এটা কী করলে? তুমি না এক জন আইকন? তুমি প্রকাশ্যে রাগ দেখাবে?

প্র: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি ১২ এপ্রিল বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন। এটা একটা দুধর্র্র্ষ সংবাদ। যে সাম্মানিক বক্তৃতা দিতে গুটিকয়েক রাষ্ট্রপ্রধান গিয়েছেন, সেই বক্তৃতার প্রস্তুতির কথা ভেবে বেশি টেনশন হচ্ছে? না কালকের কেকেআর ম্যাচ নিয়ে?
শাহরুখ: আরে, বক্তৃতার বিষয়টাই ওরা এখনও ভাল করে জানায়নি। কিন্তু চার দিকে দেখছি সবাই ব্যাপারটা নিয়ে খুব অভিভূত। ওই যে যাব-আসব তার জন্য ইডেনে কেকেআরের একটা ম্যাচ দেখা আমার মিস হয়ে যেতে পারে। সেটা ভেবে খারাপ লাগছে (হাসি)।

প্র: আমি জানতে চাইছিলাম যে লোকটা সকালে উঠে কাগজে দেখে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবে। আবার কোনও দিন দেখে দাদা ভার্সাস খান। আবার কোনও দিন দেখে সলমন খানের সঙ্গে ঝগড়া। কোনও দিন দেখে রাতের পার্টিতে কাকে চড় মেরেছে। আপনারই সম্পর্কে মিডিয়ার বয়ে আনা এই বিবিধ আবেগ আপনি কী করে সামলান?
শাহরুখ: বেশির ভাগ সময় যে লোকটা আমার সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখছে সেই লেখার চেয়ে বেশি করে তার সম্পর্কে জেনে যাই প্রবন্ধটা পড়ে। সে দিনই একটা সাংবাদিক সম্মেলনে একজন তরুণী আমায় এমন একটা প্রশ্ন করল যা শুনে আমার মনে হল, হায় রে মেয়েটা নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কত অসুখী আর হতাশ হলে প্রশ্নটা করতে পারে! আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম, তুমি এমন একটা লোককে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলে যে টানা একুশ বছর ধরে নিজের পেশায় লড়াই করে যাচ্ছে। সে স্টার না হতে পারে। বিশাল অ্যাচিভার না হতে পারে। কিন্তু নিজের পেশায় মরণপণ লড়ছে। তুমি কোথায় তাকে এমন একটা প্রশ্ন করবে যে উত্তর থেকে একুশ বছরের একটা ছেলে বা মেয়ে জীবন সম্পর্কে নতুন পথনির্দেশ পেতে পারে। তা নয়, একটা বিশ্রী প্রশ্ন করে সব ঘেঁটে দিলে। আমি আন্দাজ করতে পারি সাংবাদিক সম্মেলনে কেউ কেউ যখন খুব চ্যাঙড়া ভাবে একটা বিশ্রী প্রশ্ন করে, ওই লোকগুলোই হয়তো ফিরে গিয়ে চারটে বন্ধুর সঙ্গে বারে বসে। আর তারা বলে, চিয়ার্স! শাহরুখকে কী দিলি! এরা সব নামহীন, মুখহীন এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাহসহীন। যদি সত্যিই কিছু বোঝাপড়ারই থাকে, সরাসরি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করো। তা নয়, যে যা ইচ্ছে লিখে যাচ্ছে। পাবলিক ফোরামে যা মন চায় বলছে। আমি গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে আমাদের গণমাধ্যমে একটা অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ্য করছি। লোকজন ‘গ্রেস’ হারিয়ে ফেলছে। বলার মধ্যে কোনও শ্রদ্ধা নেই, কোনও মর্যাদাবোধ নেই। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত জীবনে আমি সহজে উত্তেজিত না হলেও চড়-টড় যে মারিনি তা নয় (হাসি)। মেরেছি। তেমন দরকার হলে আবার মারব। যদিও ওটা করতে আমার খুব খারাপ লাগে। তখন মনে হতে থাকে, এই রোল মডেলের দায় কেন আমি নিতে যাব? আমার ভয় হতে থাকে, এই সব লেখালেখি বা বলাবলির প্রভাব আমার পরিবারের ওপর পড়বে না তো? এই সব দেখেই হালফিল আমি নিজেকে এত গুটিয়ে নিয়েছি। যে পারে লেখে, বলে। আমি নির্লিপ্ত হয়ে থাকি।

প্র: শুধু আপনার ক্ষেত্রে কেন? অ্যাচিভাররা তো অনেকেই নিয়মিত ভাবে বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হন।
শাহরুখ: ঠিক কথা। এই যে সচিন তেন্ডুলকর। কী রকম বিশ্রী ভাবে এরা বলছে, এই সচিন তুমি কবে রিটায়ার করবে? আমার কথা হল, তোমার সচিনকে বলার প্রয়োজন নেই। ওর মতো সুপার অ্যাচিভার জানে ওকে কী করতে হবে। কই আমি তো সাংবাদিক সম্মেলনে বলছি না, অ্যাই লাল শার্টওয়ালা শোনো। আমাদের শিক্ষাদীক্ষা তো এ ভাবে কথা বলতে শেখায়ওনি। তা হলে তোমরা প্রকাশ্যে এ ভাবে অ্যাচিভারদের খাটো করে কথা বলছ কেন? কী চাইছ? পাঁচ সেকেন্ডের জনপ্রিয়তা? যে বন্ধুরা দেখো, কেমন নামিয়ে দিলাম। আমার কাছে এটা গভীর অকৃতজ্ঞতাও। তেন্ডুলকরের মতো মানুষ যে গত কুড়ি-একুশ বছর ধরে এতটা দিয়েছে তার সঙ্গে এটা কী ব্যবহার? এ সব কী প্রশ্ন তোমরা সচিনকে অনবরত করে যাচ্ছো? এতে কি তোমাদের গুরুত্ব বাড়ছে? আমার থিয়োরি হল যে, কুড়ি-একুশ বছর ধরে যারা পারফর্ম করে আসছে তারা যদি জীবনে এক বারও তোমাকে হাসিয়ে থাকে, যদি এক বারও তৃপ্তি দিয়ে থাকে, সেই সেন্টিমেন্টের অমর্যাদা কোরো না। ওই এক মিনিটের হাসিকে বিদ্রূপ দিয়ে ফেরত দিও না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.