সুকান্ত চৌধুরীর লেখা ‘আগে এক বছর ছাত্র নির্বাচন বন্ধ থাকুক’ (১৭-১) পড়ে খুবই ভাল লাগল। প্রত্যেকটি কথায় তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সুচারু চিন্তার অভিজ্ঞান রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, এই সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের আওয়াজ কুৎসিত রাজনীতির তাণ্ডবে চাপা পড়ে যেতে বিশেষ সময় লাগে না।
লেখক ‘বেসু’র কথা বলেছেন। যে ‘বেসু’ প্রাঙ্গণ একদা ছিল হিংসা-বিশৃঙ্খলার পীঠস্থান, বর্তমানে তার ঊর্ধ্বমুখী গতির কথা লিখেছেন। এর কারণ, সেখানকার বর্তমান ভি সি হলেন খড়্গপুর আইআইটি-র একজন কৃতী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক। এত দীর্ঘ কালক্ষেপেও যেমন আইআইটিগুলির সুনামে দাগ পড়েনি ঠিক সেই কারণেই ‘বেসু’র এই ঊর্ধ্বগতি।
লেখক প্রশ্ন রেখেছেন, কলেজ নির্বাচন এবং ইউনিয়নের গুরুত্ব কতখানি। তিনি নিজেই তার সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। ‘ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়েই উঠে আসে ভবিষ্যতের বৃহত্তর রাজনীতির নেতা ও কর্মিবর্গ। ...এই অর্থে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এক একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।...আরও নিকট ও প্রকট উপকার ইউনিয়নের মাধ্যমে নানা মধুভাণ্ডের দখল হাতে আসে। সর্বোপরি ছাত্র ভর্তির সময়ে ক্ষমতা ও অর্থলাভের প্রভূত সুযোগ। এমন আকর্ষণের লোভে বেপরোয়া লড়াই চলবে, আশ্চর্য কী!’ শিক্ষার সঙ্গে আমার দীর্ঘ সহাবস্থানের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই ছাত্র-নেতারা দলের কর্মী হন ঠিকই, ভাল নেতা হন না কোনও দিনই। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করলেও তা একান্তই বেকার। কারণ, শঙ্কা জাগে, সেই ডিগ্রি অসদুপায়ে অর্জিত, পড়াশোনা করে নয়। সুতরাং বড় নেতা হওয়ার যোগ্যতা এঁদের থাকে কি না, সন্দেহ। দুই, এঁদের সিংহভাগেরই আদর্শের বুনিয়াদ হল অসততা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ। তাই মানুষের কাছে এঁদের গ্রহণযোগ্যতা প্রায় শূন্য। আর এঁদের মাথায় পা রেখেই দলের দাদারা মধুভাণ্ডটি লুটেপুটে খান।
এখন প্রশ্ন, শিক্ষাক্ষেত্রকে কি প্রকৃত অর্থেই আমরা মানুষ গড়ার মন্দির করে তুলব? না রাজনীতি, হিংসা এবং কুৎসিত শিক্ষক লাঞ্ছনার পীঠস্থানে পরিণত করব? যদি প্রথমটি চাই তবে, বেসু, আইআইটি, রামকৃষ্ণ মিশন এবং সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ গড়া যায়। বিশ্বের দরবারে জাতিকে তুলে আনা সম্ভব হয়।
দীপককুমার দাস। হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি, খড়্গপুর
|
শ্রদ্ধেয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘স্বপ্নে দেখা এবং ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠা’ লেখায় (৭-৩) কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীর ইংরেজিতে লেখা আত্মজীবনীতে প্রদত্ত নানা তথ্য সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গত জানাই যে, সুনীতি দেবীর লেখা আত্মজীবনীটির নাম ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান ইন্ডিয়ান প্রিন্সেস’। বইটি ১৯২১ সালে লন্ডন থেকে জন রবার্টস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। বইটিতে মোট ১৫টি অধ্যায় আছে। প্রথম অধ্যায়টির শিরোনাম ‘মাই চাইল্ডহুড’।
শুরুর দিকেই লেখিকা লিখেছেন, “মাই বার্থ ওয়াজ অলওয়েজ রিমেমবার্ড ইন কানেকশন উইথ আ স্টর্ম হুইচ অকার্ড হোয়েন আই ওয়াজ সিক্স ডেজ ওল্ড, আ মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট টাইম টু আ হিন্দু বেবি, ফর দেন দ্য ক্রিয়েটর ইজ সাপোজড টু ভিজিট হোম, অ্যান্ড রাইট আপন ইট’স ফোরহেড দ্য লিটল ওয়ান’স ফেট। পারহ্যাপস পিপল উইল থিঙ্ক দ্য স্টর্মি ওয়েদার ইন দি বিগিনিং সিগনিফায়েড এ স্টর্মি ফিউচার ফর মি।”
এই অংশটির মধ্যেই লেখিকার দুর্যোগপূর্ণ ব্যক্তিগত জীবনের ছায়াপাত ঘটেছে।
নিবন্ধকার শ্রীগঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পত্রলেখকও একমত যে, বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘বলাকা’ ও ‘কোরক’ পত্রিকা দুটি অবশ্যই স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। ‘বলাকা’-র ‘নবচেতনায় বঙ্গনারী: প্রাক-স্বাধীনতা পর্ব’ ও ‘বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা: প্রাক-স্বাধীনতা পর্ব’ (ডিসেম্বর ২০০৯) সংখ্যা দুটি অনবদ্য। বিশেষত, প্রথমোক্ত সংখ্যাটির লেখাগুলির সব রচয়িতাই মহিলা, যা এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তবে ওই সংখ্যার পরিশিষ্টে লেখিকাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া থাকলে (যা বিজ্ঞান চর্চা সংক্রান্ত সংখ্যায় দেওয়া আছে) বইটি আরও পরিপূর্ণতা লাভ করত।
উৎপল মুখোপাধ্যায়। (শিক্ষক) বারাসত সত্যভারতী বিদ্যাপীঠ, উত্তর চব্বিশ পরগনা
|
সম্প্রতি (২৮-২) বাংলা গানের স্বর্ণযুগের একজন গুণী সুরকার রতু মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। আনন্দবাজারের ‘কলকাতার কড়চা’ বিভাগে (৫-৩) তাঁর সম্বন্ধে লেখা হয়েছে। এই সূত্রে জানাই, রতু মুখোপাধ্যায়ের সুরে বাংলার দুজন বিশিষ্ট শিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া দুটি গান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম জনের গাওয়া রাগভিত্তিক ‘চামেলি মেলো না আঁখি’ এবং দ্বিতীয় জনের গাওয়া ‘বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা’ আজও শ্রোতাদের মনকে দোলা দেয়।
সঞ্জয়কুমার ভাদুড়ী। চুঁচুড়া, হুগলি
|
সমালোচনাও তো সংবাদপত্রের কাজ |
গ্রন্থাগার-সচিব কর্তৃক প্রেরিত আদেশনামায় নির্দিষ্ট কিছু সংবাদপত্র বাদে কোনও সংবাদপত্র না-রাখার নির্দেশ শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, বাহাত্তরের কালো ছায়া আবার ঘনীভূত হচ্ছে। বাম আমলে কিছু সংবাদপত্রের উপর বার বার আঘাত এসেছে। রাজ্য থেকে স্থানীয় স্তরে সি পি এম নেতারা কার্যত কিছু সংবাদপত্র ‘বয়কট’ করার জন্য বক্তৃতা এবং হুমকি দেন গ্রামাঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু সরকারি দফতরে কোনও নির্দেশ দেননি। অন্য কিছু সংবাদপত্র স্থান করে নিয়েছিল নেতাদের অলিখিত নির্দেশ অনুসারে। শরৎচন্দ্র পণ্ডিত প্রতিষ্ঠিত ‘জঙ্গিপুর সংবাদ’-কেও এই রোষে পড়তে হয়। সি পি এম নেতারা বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতার মাধ্যমে শতবর্ষে পদার্পণকারী পত্রিকাটিকে ‘বয়কট’ করতে বলেন। সংবাদপত্রের কাজ শুধুই সরকারের স্তাবকতা নয়, গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে সজাগ করে দেওয়া। আশা করি, মুখ্যমন্ত্রী তথা পরিবর্তনের নেত্রী বিষয়টি গভীর ভাবে পর্যালোচনা করে ওই আদেশনামা প্রত্যাহার করবেন।
শান্তনু সিংহরায়। জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ
|
শিক্ষার অধিকার আইনে প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলের কমিটি গড়তে এ বার থেকে পরিচালন সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর (১৮-৩)। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রূপ নেয়, সেটা কারওই অজানা নয়। এমতাবস্থায় নতুন করে প্রাথমিক স্কুলেও পরিচালন সমিতির নামে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা করা হয়, তবে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলায় নতুন করে যে অশান্তির কালো মেঘ ঘনিয়ে আসবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, ১৬ জনের কমিটিতে ১২ জন থাকবে অভিভাবক। বাকি ৪ জন থাকবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী এবং স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী প্রভৃতি। মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে যেখানে সর্বাধিক ৬ জন অভিভাবক থাকে, সেখানে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ১২ জন অভিভাবক কেন? এ ছাড়াও প্রাথমিক স্কুলের ক্ষেত্রে শিক্ষানুরাগী হবেন কারা? এটা সবারই জানা যে-এলাকায় যে-রাজনৈতিক দলের দাপট যত বেশি, সেই এলাকায় সেই রাজনৈতিক দলের লোকেদেরই শিক্ষানুরাগীর তকমা লাগিয়ে দিয়ে কমিটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। এই শিক্ষানুরাগী বাছা নিয়েও সংঘর্ষ অনিবার্য। স্কুল-কলেজগুলির তুলনায় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে এত দিন রাজনীতির কচকচানি যে একটু কম ছিল, সেটা সরকারি সিদ্ধান্তে আবার নতুন করে জাঁকিয়ে বসতে চলেছে।
রতন চক্রবর্তী। (শিক্ষক) হাবড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা |