সম্পাদকীয় ১...
কাহার জন্য
তাহা হইলে পুরোহিতরাই বা বাদ কেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করিতেই পারেন রাজ্যবাসী। অসার তর্কের নহে, এই প্রশ্ন মৌলিক নীতির। এই প্রশ্ন ধর্মনিরপেক্ষ বহুসংস্কৃতিবাদের। মুখ্যমন্ত্রী যদি রাজ্যের মসজিদগুলির ত্রিশ হাজার ইমামের জন্য আর্থিক সুযোগসুবিধার বন্দোবস্ত করেন, তবে অন্যান্য ধর্মের যাজকরাই বা নহেন কেন? আর্থিক বিবেচনাতেই যদি এই পদক্ষেপ, তবে পুরোহিতদেরও তো এক বড় অংশ রীতিমত দুঃস্থ, গুরুদ্বার বা অন্যান্য নানা ধর্মস্থানের চিত্রও একই রকম। সংখ্যালঘু ধর্মগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগই যদি এই পদক্ষেপের হেতু হইয়া থাকে, তবে শিখগুরু কিংবা খ্রিস্টান ধর্মযাজকরাও সুযোগ দাবি করিতে পারেন। আর যদি পশ্চাৎপরতার ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ হইয়া থাকে, তবে অবশ্য বলিতে হয় ভিত্তিতেই গোলমাল, কেননা রাজ্যের মুসলিমদের এক বিরাট অংশ অর্থনৈতিক ভাবে পিছাইয়া থাকিলেও, ইমামরা কিন্তু সেই পশ্চাৎপরতার পিরামিডের উচ্চতর মহলের বাসিন্দা। সুতরাং মাসিক আড়াই হাজার টাকার ভাতা সম্ভবত তাঁহাদের অপেক্ষা তাঁহাদের সাধারণ্য ধর্মভ্রাতাদের নিকট অনেক বেশি জরুরি ছিল। তবে, এ সব সাত পাঁচ যুক্তি-প্যাঁচ অবান্তর। স্পষ্টতই ইমামদের জন্য এই ঘোষণা কোনও সুযুক্তি-প্রসূত নহে, কূট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রসূত।
কূট হইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজনৈতিক কৌশল বহুপরিচিত, বহুনিন্দিত, ভ্রান্ত এবং বিপজ্জনক। ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে ধর্মকৌশল-সর্বস্ব রাজনীতি এই দেশ বহু দেখিয়াছে, এবং তাহার বিষবৎ অগ্নি এই দেশকে বহু বার পুড়াইয়াছে। কংগ্রেস এই কৌশল কম ব্যবহার করে নাই, সংখ্যালঘু-তোষণের নামে মৌলবাদীদের তোষণ ও পোষণ করিয়াছে, মমতার মতো একই পদ্ধতিতে, একই পুরস্কারে, একই পোশাকে। তাহাতে ফল ভাল হয় নাই। সম্প্রদায় হিসাবে মুসলিমদেরও উন্নতি হয় নাই, দল হিসাবে কংগ্রেসের কপালেও জয়টীকা অঙ্কিত হয় নাই। মাঝখান হইতে ফুঁসিয়া উঠিয়াছে সাম্প্রদায়িকতা নামক কালসর্পের তীব্র আক্রোশ, এ পক্ষে ও পক্ষে সর্ব পক্ষে। যে প্রশ্ন দিয়া এই নিবন্ধের শুরু, আজ যদি মুখ্যমন্ত্রীকে কেহ সেই প্রশ্ন করে, তাহা নিশ্চয়ই সাম্প্রদায়িক ঈর্ষাপ্রসূত বলিয়া গণ্য হইবে। অথচ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্নটি কিন্তু অত্যন্ত সঙ্গত, যুক্তিনিষ্ঠ। সাম্প্রদায়িক হিংসাকে এ ভাবে যুক্তিনিষ্ঠ হইয়া উঠিবার সুযোগ দিয়া ধর্মনিপেক্ষতার নীতিটিকেই দুর্বল করিয়া ফেলা অহেতুক, অসঙ্গত ও ভোটনির্ভর রক্ষণশীলতা-তোষণের অবধারিত ফল ইহাই।
অথচ ভোটের কথা না ভাবিয়া যদি সত্যই কোনও নেতা দারিদ্র ও পশ্চাৎপরতার কথা ভাবেন, এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দিকে সহায়তার হাত বাড়াইয়া দিতে চাহেন, বহুবিধ পথ তাঁহার সামনে খোলা। শিক্ষাবিস্তার ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি আবশ্যিক দুইটি পথ। আবশ্যিক হইলেও নিশ্চয়ই এ পথ কষ্টসাধ্য। কিন্তু কষ্টসাধ্য বলিয়াই যদি আবশ্যিক পথ সমূলে ত্যাগ করিয়া ‘শর্টকাট’-এর দ্বারস্থ হইতে হয়, মুসলিম সাধারণ্য হইতে দৃষ্টি সরাইয়া রক্ষণশীলতার স্তম্ভ ধর্মগুরু-তোষণের সস্তা পথই ধরিতে হয়, তবে পশ্চাৎপরতা বা দারিদ্র, কোনওটিরই দূরীকরণ কোনও কালে সম্ভব নহে। বিগত বামফ্রণ্ট সরকারও কৌশলের রাজনীতি কম করে নাই, তবে সত্যের খাতিরে, অন্তত মাদ্রাসা পাঠক্রমকে তাহারা মূলস্রোতে আনিয়া কর্মসংস্থানের সুরাহার চেষ্টা করিয়াছিল। এখনও পর্যন্ত নূতন সরকারের তরফে এমন প্রয়োজনীয় প্রয়াস দেখা যায় নাই। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অন্তত ধর্ম-সম্প্রদায়ের প্রশ্নে, রাজনীতি যেন এ রাজ্যে ক্রমশই আরও বিপজ্জনক শর্টকাটের নীতি হইয়া উঠিতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.