ক’দিন ধরেই বস্তি উচ্ছেদ ঘিরে অশান্ত ছিল এলাকার পরিস্থিতি। গত শুক্রবার নোনাডাঙায় জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের পরে গড়ে ওঠা ‘বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র মিছিল ঘিরে বুধবার ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ই এম বাইপাসের রুবি মোড়। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশ লাঠি চালায়। তাতে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ-সহ বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে এক অন্তঃসত্ত্বাও রয়েছেন বলে অভিযোগ।
কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে বিক্ষোভকারীদের পরিচয় নিয়ে। সরকারের তরফে শুক্রবারই বলা হয়, নোনাডাঙার ওই বস্তি মাস তিনেকের মধ্যে গড়ে উঠেছে, যার অধিকাংশ ঝুপড়িতেই কেউ নেই। তা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি তুলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বুধবার উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি পাল্টা দাবি করে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে রাজ্য সরকার বেআইনি ভাবে উচ্ছেদ করছে। কমিটির তরফে অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন, “সরকার গরিব মানুষদের গৃহহারা করছে। তাই প্রতিরোধ। গৃহহারাদের আন্দোলন ভাঙতে পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে।” আজ, বৃহস্পতিবার পুরমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবে কমিটি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টায় নোনাডাঙা বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যেরা চিনা মন্দির এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে রুবির দিকে এগোতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। বাধা ঠেলে মিছিল রুবি মোড়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি চালায়। প্রতিরোধ কমিটির অভিযোগ, পুলিশ নির্বিচারে মহিলাদের উপরেও লাঠি চালায়। এই ঘটনায় বাইপাসে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ১টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
লালবাজারের কর্তারা অবশ্য দাবি করেন, পুলিশ লাঠি চালায়নি। কেউ জখমও হননি। তা হলে কী হয়েছিল এ দিন? পুলিশকর্তারা জানান, সকালে ‘নোনাডাঙা মজদুরপল্লি’ এবং ‘অধিকার ও জনকল্যাণ সমিতি’র শ’খানেক সদস্য ও সমর্থক উচ্ছেদের প্রতিবাদে এবং পুনর্বাসনের দাবিতে আনন্দপুরের কাছে পুলিশের কর্ডন ভাঙে। তাঁদের সঙ্গে নকশালপন্থী কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরাও সামিল ছিলেন বলে পুলিশকর্তাদের একাংশ দাবি করেন। পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনায় ইএম বাইপাসে যান চলাচল ব্যাহত হয়। বস্তির লোকজন পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যায়। তাতেই ছত্রভঙ্গ হয় জনতা।
তবে নোনাডাঙা বস্তির বাসিন্দা, বিশেষত মহিলাদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার নিন্দা করেছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না-করে উচ্ছেদ সমর্থন করতে পারছি না। বাম আমলে বস্তি উচ্ছেদের সময়ে তৃণমূলই তো পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিল। আশা করি, বিষয়টি রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।” নোনাডাঙার ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই নৃশংস ঘটনা বাম জমানাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।’’
অন্য দিকে, এ দিন কলেজ স্ট্রিটের স্টুডেন্টস হলে এক কনভেনশনে মহাশ্বেতা দেবীও নোনাডাঙার ঘটনার নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। |