ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দুই দাগি অপরাধীর ছবি দেখে চিহ্নিত করেছেন অভিযোগকারিণী। কিন্তু কয়েক সপ্তাহেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
বর্ধমানের কেতুগ্রামে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট মঙ্গলবারই চেয়েছিল জাতীয় মহিলা কমিশন। বুধবার সকালে তা কমিশনের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জার আশ্বাস, “তদন্ত চলছে। শীঘ্রই দোষীরা ধরা পড়বে।” যদিও ‘তদন্তের স্বার্থে’ ছবি দেখে চিহ্নিত দু’জনের নাম জানানো হয়নি।
২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইনে কেতুগ্রামের কাছে ট্রেনে লুঠপাট চালায় কয়েক জন দুষ্কৃতী। তখন এক ১১ বছরের মেয়ের মাথায় বন্দুক ধরে তার বিধবা মাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ৮ জন দুষ্কৃতী ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। প্রচুর টাকা নিয়ে এক ব্যবসায়ী ওই ট্রেনে উঠবে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। তাই বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে ট্রেনে উঠে প্রায় চার ঘণ্টা ওই ব্যবসায়ীকে খোঁজে দুষ্কৃতীরা। তার পরে ট্রেন থামিয়ে ডাকাতি শুরু হয়।
ওই ধর্ষণের অভিযোগে বীরভূমের লাভপুর থানার চৌহাট্টা গ্রাম থেকে নয়ন শেখ ও ফরিদ শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডাকাতির অভিযোগে কাটোয়া থেকে ধৃত দুই দুষ্কৃতীকেও পরে ধর্ষণ মামলায় যুক্ত করা হয়। চার জনই জেল হাজতে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের জেরা করে আরও কিছু নাম মিলেছে। অভিযোগকারিণীর বর্ণনা শুনে দু’জনের ছবিও আঁকানো হয়। কেতুগ্রাম থানা সেই ছবি নিয়ে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। দুষ্কৃতীদের ফাইল ঘেঁটে বীরভূম পুলিশ জানতে পারে, ছবির সঙ্গে যে দু’জনের মুখের আদল মিলছে, তারা দাগি অপরাধী। এক জনের আদি বাড়ি বীরভূমেরই নানুরে, অন্য জন মুর্শিদাবাদের কুলির বাসিন্দা। জেলে থাকার সময়ে তাদের পরিচয় হয়েছিল। দু’জনেই ডাকাতির দলে ‘খেপ’ খাটে। তাদের ভোটার পরিচয়পত্র জোগাড় করে লাভপুরের বিডিও-কে দিয়েছিল পুলিশ। তিনিই দু’জনের আসল ফটোগ্রাফ জোগাড় করে দেন। পুলিশ কিন্তু নির্দিষ্ট করে ওই ছবি দু’টিই অভিযোগকারিণীকে দেখায়নি। কিছু দুষ্কৃতীর ছবির সঙ্গে মিশিয়ে তারা তা অভিযোগকারিণীকে দেখতে দেয়। এ দিন মহিলার ভাসুর বলেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ কিছু ছবি নিয়ে এসে বৌমাকে দেখিয়েছিল। সে খুঁটিয়ে ছবিগুলি দেখে। তার পরে দু’টি ছবি তুলে নিয়ে পুলিশের হাতে দেয়।” পুলিশ সূত্রের খবর, ঠিক ছবি দু’টিই বেছেছেন। এ দিনও মহিলা বলেন, “ওই শয়তানগুলোই আমার সর্বনাশ করেছে।” মহিলার পরিবার ও গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, “উনি পুলিশকে সব রকম সাহায্য করেছেন। তবু পুলিশ দোষীদের এখনও ধরতে পারছে না কেন?” উত্তর এখনও মেলেনি। |