ইমামদের ‘ইনাম’ মুখ্যমন্ত্রী মমতার
রাজ্য জুড়ে মসজিদের ইমামদের একগুচ্ছ ‘সুযোগ-সুবিধা’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ৩০ হাজার ইমামকে মাসিক আড়াই হাজার টাকা করে ‘সাম্মানিক’ দেওয়া থেকে তাঁদের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা, সন্তানের লেখাপড়ার জন্য ‘ভাতা’ প্রদান করা হবে বলে মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ইমামদের ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম বিভাগ। এই দফতরগুলি সবই মুখ্যমন্ত্রীর অধীন।
সম্মেলন মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। সম্মেলনে এক ইমাম তাঁদের আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও মঞ্চে কয়েকজন ইমামের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনেকেরই আর্থিক দুরবস্থার কথা জেনেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে অমিতবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেন। তারপরেই মমতা ইমামদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের সরকারের টাকার অভাব আছে। কিন্তু আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি। সামনে পয়লা বৈশাখ আসছে। সেই দিন থেকে রাজ্যের ইমাম ভাইদের মাসিক আড়াই হাজার টাকা করে সাম্মানিক দেব।” কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে উপস্থিত কয়েক হাজার ইমাম মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শোনার পরে তুমুল হাততালি দিয়ে ওঠেন।
তৃণমূল শিবিরের দাবি, মমতা সংখ্যালঘু মন-জয়ে এ দিন ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিয়েছেন। যে কারণে এর সরাসরি বিরোধিতা করতে পারেনি প্রধান বিরোধী দল সিপিএম-ও। কোঝিকোড়ে যোগাযোগ করা হলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র শুধু বলেন, “১০ হাজার মাদ্রাসার কী হল!” সিপিএমের ব্যাখ্যা, ওই কথা বলে সূর্যবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, মাদ্রাসার মতো এ ক্ষেত্রেও ঘোষণাই সার হবে। সরকারের শরিক প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “টাকা নেই সরকারের। অথচ কিছু দিন আগে বিভিন্ন ক্লাবকে টাকা দিয়ে অপচয় হল। এ বার আবার ইমামদের মাসিক টাকা ও জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুসলিমদের আর্থিক সাহায্য দিতে হলে গরিব মুসলিমদের টাকা দিন।”
ইমামদের সঙ্গে প্রার্থনায়। নেতাজি ইন্ডোরে মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
অর্থিক সঙ্কটে পড়া রাজ্য সরকার ইমামদের ‘ইনাম’ দেওয়ার প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্দর সূত্রে দু’টি ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে। বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটের আগে সংখ্যালঘুদের ‘প্রধান’ ইমামদের ‘আস্থা অর্জনে’র লক্ষ্যেই তৃণমূল নেত্রীর এই ঘোষণা করেছেন বলে দলের একাংশের অভিমত। কারণ, রাজ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট রয়েছে মুসলিমদের। তা ছাড়া ‘পরিবর্তনের আগে’ সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুসারে তাঁরা কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সংখ্যালঘু উন্নয়নে তাঁর সরকার দশ মাসে কী কী কাজ করেছেন এ দিন তার ফিরিস্তি দেন মমতা। এমনকী নেতাজি ইন্ডোরে এক ইমাম বলেও বসেন, “পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমকে ছুড়ে ফেলে দিন। সিপিএম নেতারা চুপ করে থাকুন ১০ বছর। দিদিকে কাজ করতে দিন।” তৃণমূলের অন্য অংশের অভিমত, রাজ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করছেন ইমামরা। তাই, তাঁদের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ জানাতেই তৃণমূল নেত্রী তাঁদের কিছু ‘সুযোগ-সুবিধা’ দিয়েছেন। এ দিন মমতা প্রকাশ্যেই ইমামদের বলেছেন, “রাজ্যে সম্প্রীতি, শান্তি রক্ষায় আমার ইমাম ভাইরা বড় ভূমিকা পালন করেছেন। আমি আপনাদের বলছি, আপনারা শান্তির দিকটা দেখুন। আমরা আপনাদের যাবতীয় সুখ সুবিধার দিকটা দেখব।”
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য যথেষ্ট ‘সতর্কতা’ নিয়েই প্রস্তাবটি পেশ করেন। প্রস্তাবটি পেশ করার আগে তিনি বলেন, “আপনাদের ধর্মীয় বিধিনিষেধ আছে। আমি বললাম বলেই আপনারা মেনে নেবেন, এমন ব্যাপার নয়।” তার আগে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইমামদের উন্নয়নে তিনি একটি কমিটি (‘টাস্ক ফোর্স কমিটি’) করে দিচ্ছেন।
রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনির নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি, টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নুরুর রহমান বরকতি প্রমুখ রয়েছেন। মমতা ইমামদের বলেন, “আপনারা যদি আমার প্রস্তাবে রাজি থাকেন তাহলে কমিটিকে জানাবেন। সরকার থেকে আমরা ওয়াকফ বোর্ডকে টাকা দিয়ে দেব। ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে আপনাদের সাম্মানিক দেওয়া হবে।” এরপরেই ‘কল্পতরু’ মমতা ঘোষণা করেন, “যাঁদের (ইমাম) বাড়িঘর নেই, মাথা গোঁজার স্থান নেই, তাঁদের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করা হবে।” এই ব্যাপারে শহরাঞ্চলের ইমামদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে দায়িত্ব দেন। আর জেলায় যে ইমামরা থাকেন, তাঁদের জন্য প্রস্তাব দেন, “যাঁরা জেলা বা গ্রামে থাকেন তাঁরা ‘নিজ ভূমি, নিজ গৃহ’ প্রকল্পে ৩ কাঠা করে জমিতে বাড়ি তৈরি করতে পারেন। বাড়ি তৈরির টাকা সরকার দেবে। অথবা গীতাঞ্জলি প্রকল্পেও গৃহের ব্যবস্থা হতে পারে।” ইমামদের সন্তানদের পড়াশুনার জন্য, বিশেষত উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তিশিক্ষার জন্য সরকার সহযোগিতা করবে। বৃত্তি প্রদান করা হবে। এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডলকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.