মাওবাদী দমনে পুরুলিয়ায় আসা নাগা জওয়ানদের সম্পর্কে এক সময় বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকতেন। তাই তাঁদের কাছে টানতে নাগা জওয়ানরা নিজেদের বেতনের টাকা খরচ করে অযোধ্যায় জীর্ণ স্কুলঘর সংস্কার করেছেন। গড়ে তুলেছেন পার্ক, অতিথিশালা।
নাগাল্যান্ডের ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ানের ১০ নম্বর বাহিনীর সিনিয়র কমান্ডান্ট রিচার্ড ইয়ামটো সোমবার সন্ধ্যায় কুমারী কাননে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আগে এলাকার বাসিন্দারা নানা কারণে আমাদের ভয় পেতেন। ভাষাগত সমস্যা তার অন্যতম কারণ। তবে এখন আমরা সাধারণ মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।” নাগাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে, অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে তাঁরা একটি মার্কেট-শেড নির্মাণ করেছেন। শিরকাবাদে একটি পার্ক তৈরি করেছেন। মুরগুমাতে তৈরি করেছেন একটি অতিথিশালা। পাশাপাশি কুমারী কানন এলাকার গোপালপুরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শিশুদের স্কুল সংস্কারেও তাঁরা হাত লাগিয়েছেন। ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কালিপদ মাহাতো বলেন, “আমাদের স্কুলটি একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। নাগা জওয়ানেরা নিজেরা শ্রম ও অর্থ দিয়ে তা সংস্কার করেন।” মাঝেমধ্যে এই জওয়ানেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাফাইয়ের কাজও করেন। |
২০১০-এর অগস্ট মাসে নাগা জওয়ানেরা পুরুলিয়ায় আসার পর থেকেই বিতর্ক তাঁদের পিছু নেয়। বলরামপুরে নাগা বাহিনীর গুলিতে দুই নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বাহিনীকে বলরামপুর থেকে সরানোর দাবিতে বন্ধও হয়। কিছু দিন পরে বলরামপুরে একটি যৌথ রক্ষী শিবিরে নাগাবাহিনীর এক জওয়ানের গুলিতে এক নাগা অফিসার ও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের এক জওয়ানের মৃত্যু হয়। এরপরেই নাগা জওয়ানদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। বলরামপুর থেকে ওঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন প্রায় ৮০০ নাগা জওয়ান পাথরবাঁধ, সুইসা, অযোধ্যা হিলটপ, পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প, কুমারী কানন, মুরগুমা, শিরকাবাদ ক্যাম্পে রয়েছেন। রিচার্ড ইয়ামটো জানিয়েছেন, অভিযান চালিয়ে ৪৯ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে গ্রেফতার করা হয়। গত নভেম্বরে মাওবাদীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হন নাগা জওয়ান মাসি ভিকো অঙ্গ। এক নাগা জওয়ান বলেন, “এলাকা শান্ত হওয়ার পর আমরা এখান থেকে চলে যাব। কিন্তু রয়ে যাবে আমাদের তৈরি এই কাজগুলি। বাসিন্দারা নিশ্চয় আমাদের ভুলতে পারবেন না।” |