দলীয় কাউন্সিলরদের অনাস্থার প্রতি ‘আস্থা’ রেখে শেষ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ-লালবাগ পুরপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সৌমেন দাসকে। সোমবারেই সৌমেনবাবু জানিয়েছিলেন একমাত্র জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশেই তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। মঙ্গলবার অধীরবাবু বলেন, “পুরপ্রধানকে নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি জানার পরেই সৌমেনবাবুকে সরিয়ে নতুন কাউকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে। পুর-প্রশাসন চালাতে এই ধরনের রদবদল হয়েই থাকে। পুর-প্রশাসনের কাজে গতি আনতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কংগ্রেস পরিচালিত ওই পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে সোমবারই পুরসভায় চিঠি জমা দেয় কংগ্রেসের তিন জন-সহ ৮ জন কাউন্সিলর। পুরপ্রধানের অপসারণের দাবি করেন তাঁরা। তারপরে এই দিন পদত্যাগ করার ইচ্ছে প্রকাশ করে দিল্লিতে অধীর চৌধুরীর কাছে এসএমএস করেন পুরপ্রধান। অধীরবাবু পাল্টা এসএমএস করে বুধবার ওই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা জানান। এ দিন রাতে অধীরবাবু অবশ্য দিল্লি থেকে বহরমপুরে এসে পৌঁছন।
সৌমেনবাবুর বাবা ননীগোপাল দাস এক সময়ে এই পুরসভার উপপুরপ্রধান ছিলেন। ১৯৯৫ সাল থেকে শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা তিন বার জয়ী হন কংগ্রেসের ননীগোপালবাবু। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে ২০১০ সালে মুর্শিদাবাদ পুরভোটে ওই ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন নিয়ে লড়াই করে জয়ী হন সৌমেন দাস। পরে তিনি তখন পুরপ্রধান হন। এ বার গত দু-বছরে ‘উন্নয়ন হয়নি’ এই কারণ দেখিয়ে তাঁকে অপসারণের দাবি ওঠে। পুরপ্রধান বলেন, “পদের কোনও মোহ আমার নেই। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আমায় পুরপ্রধান করেন, তাঁর ইচ্ছেতেই পদত্যাগ করব। আমার কোনও আক্ষেপ নেই। তবে উন্নয়ন হয়নি বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে তা ঠিক নয়।”
সৌমেনবাবু এদিন পুরসভা যাননি। অনেক কর্মীও পুরসভায় অনুপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নতুন পুরপ্রধান হিসেবে উঠে এসেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ‘নির্দল’ কাউন্সিলর গোকুল বিশ্বাস, ১০ ওয়ার্ডের ‘কংগ্রেস’ কাউন্সিলর তথা ব্লক কংগ্রেস সভাপতি মেহেদি আলম মির্জা এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ‘নির্দল’ কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ ধরের নাম। এছাড়াও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সাইদা বিবির নামও শোনা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদ শহর কংগ্রেস সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, “নতুন পুরপ্রধান নির্বাচনের ভার আমরা জেলা কংগ্রেস সভাপতির উপরেই ছেড়ে দিয়েছি। তিনি নতুন পুরপ্রধান হিসেবে যাকে মনোনীত করবেন, আমরা তাঁকে মেনে নেব।”
গত পুরভোটে ওই পুরসভার ১৬টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১০টি, নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিশ্বজিৎ ধর ও তাঁর অনুগামীরা মোট ৪টি আসনে, তৃণমূল কংগ্রেস ও জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি করে আসনে জয়ী হয়। পরে জনবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের কাউন্সিলর তৃপ্তি সিংহ মারা যাওয়ার পরে ওই আসনটি ফাঁকা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১৫ সদস্যের পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে তিন জন কংগ্রেস কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাবে বিশ্বজিৎ ধর-সহ ৫ জনের সমর্থন করেছেন। শহর কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য বলেন, “গত বিধানসভা ভোটে পতাকা হাতে বিশ্বজিৎ ধর ও তাঁর অনুগামীরা কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাঁকে দলে নিয়েছেন। ফলে তাঁরা এখন সকলেই কংগ্রেস সমর্থক।” |