একের পর এক সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার-কর্মীদের হাতে সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে।
ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া ও বর্ধমানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে মার খেয়েছেন। এ বার মুর্শিদাবাদে তারাপুর হাসপাতালে সরাসরি চিফ মেডিক্যাল অফিসারের ‘নির্দেশে’ সাংবাদিক-আলোকচিত্রীদের পেটানো হল। চার জনকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সকালে ধুলিয়ানের বাসুদেবপুরে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহতদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে। স্থানীয় বাহাদুরপুর থেকে বীরভূমে পাথরচাপুড়ির মেলায় যাওয়ার সময়ে গাড়ির সঙ্গে বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে এক জন মারা যান। দুই আহতকে তারাপুরের বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের করিডরেই ফেলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই দু’জনের মৃত্যুর পরে স্থানীয় বাসিন্দারা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমের লোকজন তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ছবি তুলছিলেন।
হঠাৎই লাঠি ও লোহার রড নিয়ে ছুটে আসেন কিছু নিরাপত্তারক্ষী। কিছু চিকিৎসক এবং নার্সও তেড়ে আসেন। চিফ মেডিক্যাল অফিসার অমিতাভ মুখোপাধ্যায় হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রক্ষীদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, “কাউকে যেন ছাড়া না হয়!” প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, তাঁরই নির্দেশে কোলাপসিবল গেট টেনে দিয়ে শুরু হয় কিল, চড়, ঘুষি বৃষ্টি, এমনকী লাঠিপেটাও। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে চলে মারধর। এক আলোকচিত্রীর ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়। আছড়ে ভেঙে দেওয়া হয় এক টিভি চ্যানেল প্রতিনিধির ল্যাপটপ।
এই মারধর দেখে বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামবাসীরা ছুটে এসে গেট ধরে ঝাঁকাতে থাকেন। এর পরেই বেগতিক বুঝে সাংবাদিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আনন্দবাজার পত্রিকার আলোকচিত্রী অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়, নিউজ পত্রিকার মইদুল ইসলাম, কলকাতা টিভি-র ইউসুফ আলি এবং নিউজ টাইম চ্যানেলের সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়কে জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের তরফে অমিতাভবাবু, এক নার্স এবং পাঁচ রক্ষীর নামে সমশেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অমিতাভবাবু এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সাংবাদিকদের মারধর করা ঘোরতর অন্যায়। জঙ্গিপুরের এসডিপিও-কে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছি। দোষীদের চিহ্নিত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |