দুই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অর্থ মেলেনি, থমকে উন্নয়ন
প্রয়োজন ছিল ৫০ কোটি টাকার। সেই মতো দাবিও জানানো হয়েছিল। কিন্তু পাওয়া গেল মাত্র ১৫ কোটি টাকা!
একশো দিনের প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থ না মেলায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় থমকে গিয়েছে কাজ। নতুন করে কোনও পরিকল্পনার ঝুঁকিও নিতে চাইছে না জেলা প্রশাসন। কারণ, টাকা পাওয়া যাবে, এই আশায় আগে কাজ করিয়ে পরে টাকা না পাওয়ায় সমস্যায় পড়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে! এমনকী শ্রমিকদের মজুরি নিয়েও সমস্যা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় এমন বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে যেখানে মজুরি বাবদ ১০-২০ লক্ষ টাকা শ্রমিকদের দেওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের। এ সব কারণেই আপাতত নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন না বিডিও-রা। এমনকী যে-সব কাজ চলছে, সেগুলিও গতি মন্থরতায় ভুগছে।
কেন টাকা পাওয়া যাচ্ছে না? এ ব্যাপারে একশো দিনের প্রকল্পের জেলা নোডাল অফিসার প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “আমাদের দিক থেকে কোনও ত্রুটি নেই। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, প্রদেয় অর্থের ৬০ শতাংশ খরচ করতে পারলেই আবার টাকা চাওয়া যায়। সেই টাকা পাওয়াও যায়। আমারা আগের বরাদ্দের ৮০ শতাংশ টাকা খরচ করেছি। তা সত্ত্বেও টাকা চেয়ে আর পাওয়া যায়নি।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস বলেন, “টাকা না থাকায় নতুন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কারণ, অনেক ব্লকেই মজুরির টাকাও দেওয়া যায়নি।” বিষয়টি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তার উত্তরও দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, আপাতত কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে অর্থ দেয়নি। যে কারণে রাজ্যও জেলাগুলির বরাদ্দ ছেঁটে ফেলতে বাধ্য হয়েছে। রাজ্য কেন্দ্রের কাছে এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল একশো দিনের প্রকল্পে। কিন্তু পেয়েছে মাত্র ১৭২ কোটি টাকা। ফলে কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নয়, রাজ্যের সব জেলাই অর্থ-সঙ্কটে পড়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ১ এপ্রিল অর্থাৎ ২০১১-১২ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পের ওপেনিং ব্যালান্স ছিল ৩২ কোটি টাকা। তার পর এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ২২১ টাকা পেয়েছে জেলা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৫৩ কোটি টাকা পেয়েছে জেলা। যার মধ্যে ২০৪ কোটি টাকা খরচের হিসাবও চলে এসেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। বাকি ৪৯ কোটি টাকায় বিভিন্ন কাজ চলছে। জেলায় ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতি, ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি ছাড়াও বন দফতরের ৪টি বিভাগও একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করছে। স্বাভাবিক ভাবেই দেখা যাচ্ছে ৩২৩টি জায়গায় ৪৯ কোটি টাকা দিলে তার অঙ্ক দাঁড়ায় লক্ষ টাকায়। অথচ, এক একটি কাজেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গরমেই একশো দিনের কাজের উপযুক্ত সময়। রাস্তা তৈরি, পুকুর সংস্কার, জলাধার তৈরি--সবেরই কাজ হয় গরমে। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণত, এক সঙ্গে দু’মাসের টাকা দিয়ে থাকে। হিসাব কষেই ৫০ কোটি টাকা চেয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু মিলেছে মাত্রই ১৫ কোটি! ফের টাকা না আসা পর্যন্ত প্রশাসন নতুন কোনও কাজের ঝুঁকি নিতে পারছে না। এই টানাটানিতে কাজ করতে গিয়ে নারায়ণগড় ব্লকের মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩১ লক্ষ ও খুড়শি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে মজুরদের কাছে। একই অবস্থা পিংলা ব্লকের জলচক-১ (দেনার পরিমাণ ২৯ লক্ষ) ও মালিগ্রাম (দেনার পরিমাণ ৩৮ লক্ষ), কেশপুরের আমনপুর (দেনার পরিমাণ প্রায় ১৭ লক্ষ), ডেবরা ব্লকের ডেবরা-১ ( দেনার পরিমাণ ১৬ লক্ষ), দাসপুরের জ্যোত-ঘনশ্যাম (দেনার পরিমাণ ৩১ লক্ষ) পঞ্চায়েতের।
অন্য দিকে স্বর্ণজয়ন্তী স্বরোজগার যোজনা (এসজিএসওয়াই) প্রকল্পেও অর্থের ঘাটতি দেখা দিয়েছে জেলায়। যদিও ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেই এই প্রকল্পটির পরিবর্তে নতুন প্রকল্প ‘এনআরএলএম’ (ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন) চালু হচ্ছে। কিন্তু এসজিএসওয়াই প্রকল্পে যে সব স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী অর্থ পাওয়ার উপযুক্ত, তাদের কী হবে? এই প্রকল্প চালু থাকার সময়েই ওই টাকা পাওয়ার অধিকার অর্জন করেছিলেন তারা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরির পর গ্রেডিং করে তাদের উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি গোষ্ঠী আবর্তনীয় তহবিল হিসাবে ১০ হাজার টাকা পায়। দ্বিতীয় গ্রেডিংয়ের পরে তাদের ক্রেডিট-লিঙ্কেরও আওতায় নিয়ে আসা হয়। যেখানে ব্যাঙ্ক ঋণের ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুবিধাও রয়েছে। ওই ঋণ নিয়ে ব্যবসা, প্রাণিপালন-সহ নানা ধরনের কাজ করতে পারে গোষ্ঠী। বর্তমানে প্রায় ১৬০০ গোষ্ঠী এ রকম অর্থ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। যার জন্য কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর অরিন্দম দত্ত বলেন, “ন্যূনতম ৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাকি উপযুক্ত সব দলকে সুযোগ দিতে গেলে ১৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে। অর্থ না পেলে ওই দলগুলির উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হবে।” ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলি। সেই সঙ্গে তারা উৎসাহও হারাবে। তার উপরে নতুন অর্থ-বর্ষে ওই প্রকল্পের পরিবর্তে অন্য প্রকল্প আসছে। তখন তো আর আগের প্রকল্প-খাতে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। তা হলে কী কয়েক হাজার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে যাবে? ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জেলার প্রায় ৩ লক্ষ মহিলা? প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের কথায়, “এখনও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট কিছুই জানায়নি। নতুন আর্থিক বছরে নিশ্চয়ই কোনও নির্দেশিকা আসবে বলে আমাদের অনুমান। তখনই জানা যাবে এসজিএসওয়াই প্রকল্পের গোষ্ঠীগুলির ভবিষ্যৎ কী।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.