অতলান্তিকের ওপার থেকে উড়িয়ে আনা কেটি পেরির আন্তর্জাতিক হিট ‘ফায়ারওয়ার্কস’ ছিল। ছিলেন ‘ছম্মক ছাল্লো’ করিনা, থাকল প্রিয়ঙ্কার ‘আজ কি রাত’-ও। ‘বডিগার্ড’ সলমনের নাচন-কোদন ছিল, শরীরী ভাষায় যথারীতি মাইকেল জ্যাকসনের স্বদেশীয় সংস্করণ হয়ে উঠলেন প্রভু দেবাও। কন্ঠের জাদুতে মাতালেন লেসলি লুইস-হরিহরনও। তবু ক্রিকেটের মিলনমেলায় বিনোদনের ‘সচিন’ ওই একজনই। ‘বিগ বি’ অমিতাভ বচ্চন।
আগুনের মধ্যে থেকে মঞ্চে উঠে আসা নেই, সাইকডলিক আলোর কেরামতিতে হাজার হাজার ডেসিবলের কানে তালা ধরিয়ে দেওয়া শব্দ সঙ্গী করে নাচা নেই, হিট ছবির বহুচর্চিত সংলাপ বলাও নেই। তার বদলে আছে শুধু তিরিশ-পঁয়ত্রিশ লাইনের কবিতা আর চিরকালীন ব্যারিটোন কন্ঠ। মঞ্চে উপস্থিতি বলতে বড়জোর মিনিট চারেক। শুধু সেটুকু হাতে রেখেই আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৩০ বলে ৫০ সুলভ ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে দিলেন অমিতাভ। |
আইপিএল ফাইভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা যদি একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়, শুরুতেই পাওয়ার প্লে-তে ম্যাচের রাশ অমিতাভের হাতে। ‘জনম যদি ফির সে মিলে/তো ইতনা সা চাহুঙ্গা ম্যাঁয়...’ আর একটা জন্ম যদি ফিরে পেতেন বচ্চন, কী হতে চাইতেন অমিতাভ? হতে চাইতেন এই মহান খেলার ছোট্ট একটা অংশ। ‘ছোটা সা হিসসা’। হতে চাইতেন ব্যাটসম্যানের হাতের ব্যাট, কিংবা বোলারের হাতের আঙুল, নিদেনপক্ষে বাউন্ডারি লাইনের দড়ি। কবি প্রসূন জোশীর কবিতায় মহান খেলার বন্দনা আছে, কিন্তু তা মহোত্তর হয়ে উঠল অমিতাভের পাঠে। এই ধরনের বৈভব ও বিনোদনের ঢক্কানিনাদের মধ্যেও যে কন্ঠস্বর দিয়ে কবিতাকে অজানা, মন ভাল করে দেওয়া এক অন্যরকম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে হৃদয়ের অন্তঃস্থল ছুঁয়ে ফেলা যায়, তার হাতে গরম নমুনা তাঁর পাঠ। প্রতিটি শব্দের উচ্চারণে নিখাদ ক্রিকেটপ্রেম, মহান খেলার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিনীত প্রয়াস। মু্ম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিদায়ী অধিনায়ক সচিন তেন্ডুলকর মঞ্চে ছিলেন না। থাকলে দেখতেন কী ভাবে অধিনায়কের শপথবাক্য পাঠ করানোর সময়েও তাঁর মতোই অনন্য হয়ে উঠলেন অমিতাভ। অন্যদের মতো আজ সকালে বা গত রাতে উড়ে এসে অনুষ্ঠানে চারটে লাইন পড়ে দিয়ে চলে যাননি। একনিষ্ঠ পেশাদারের মতো গত তিন দিন ধরে পড়ে ছিলেন চেন্নাইয়ে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ঠিকই বলেন, “অমিতাভ বচ্চন ওই একজনই হয়!” |
কোটি কোটি টাকার ক্রিকেটযজ্ঞ থেকে পাওয়া টাকা দেশের ক্রিকেট পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর কাজে লাগানো হবে, দেশের হয়ে খেলা বা দীর্ঘদিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা ১৮৫ জন প্রাক্তন ক্রিকেটারদের জন্য সাহায্যার্থে থাকবে বোর্ডের দেওয়া চেক, এই প্রতিশ্রুতি মঞ্চেই দিলেন শ্রীনিবাসন। উত্তম প্রস্তাব। প্রাক্তনরা নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন, কিন্তু ক্রমশ দেশের মাঠে ‘দুয়োরানি’ হয়ে ওঠা টেস্ট ক্রিকেটের কথাও বোর্ড ভাবছে তো?
উচ্ছ্বসিত বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠান শেষে আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লকে জড়িয়ে ধরছিলেন। প্রতীকী দৃশ্য। যাক গে, অষ্টমীর রাতে কে-ই বা আর বিজয়া দশমীর কথা ভাবে?
|