শিক্ষক ছুটিতে, অন্য স্কুলে গেল পড়ুয়ারা
ছুটি কাটিয়ে স্কুলে ফিরে প্রধান শিক্ষক দেখলেন সব ছাত্র-ছাত্রীরা চলে গিয়েছে অন্য স্কুলে। ফলে ছাত্রবিহীন অবস্থাতেই চলছে হাওড়ার আমতার সোমেশ্বর সোমনাথ বয়েজ প্রাথমিক স্কুল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ব্যথিত প্রধান শিক্ষক শ্যামলকুমার মাঝি বলেন, “মঙ্গলবারেই স্কুল পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে জানিয়ে দিয়েছি, ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসছে না। তারা অন্য স্কুলে চলে গিয়েছে। মিড ডে মিলের চাল এবং তরি-তরকারি বাবদ টাকা যেন আর এই স্কুলের জন্য বরাদ্দ করা না হয়।”
সিরাজবাটি চক্রের স্কুল পরিদর্শক অফিস সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে শিক্ষা দফতরের কর্তারা স্কুলটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত দশ বছর ধরে আমতার এই স্কুল ভুগছে ছাত্রাল্পতায়। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যায় শিক্ষকও। শ্যামলবাবুই প্রধান তথা একমাত্র শিক্ষক। পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচ। তৃতীয় শ্রেণিতে আবার কোনও পড়ুয়াই নেই। এক সময় স্কুলটির রমরমা অবস্থা থাকলেও ২০০৩ সালে এটি পরিণত হয় শিক্ষকবিহীন স্কুলে। ওই বছর পড়ুয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ১ জন। ওই বছরই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন শ্যামলবাবু।
বর্তমানে পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে যথাক্রমে এক জন করে। চতুর্থ শ্রেণিতে রয়েছে তিন জন। মিড ডে মিলের জন্য এই স্কুলের বরাদ্দ জ্বালানি ও তরকারি বাবদ খরচ দৈনিক ১৫ টাকা।  চাল লাগে দৈনিক ৫০০ গ্রাম করে। বরাদ্দ রয়েছেন একজন রাঁধুনি। তাঁর বেতন মাসে এক হাজার টাকা। রান্না এখানে হয় না। পাশেই রয়েছে সোমেশ্বর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়। সেখানেই চলে সোমেশ্বর সোমনাথ বয়েজ প্রাথমিক স্কুলের রান্নাও। প্রতিদিন দুপুরে সেখানে চলে যায় পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রী। মিড ডে মিল খেয়ে ফের স্কুলে চলে আসে তারা। প্রধান শিক্ষক বললেন, “পাঁচ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বরাদ্দ চাল, জ্বালানি ও তরকারির টাকার হিসাব স্কুল পরিদর্শকের কাছে প্রতিমাসে আমাকে দাখিল করতে হয়।”
এ সবই অবশ্য এখন অতীত। শ্যামলবাবু বলেন, “আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নিয়েছিলাম। ছুটি কাটিয়ে ২৯ তারিখে স্কুলে এসে দেখলাম কোনও ছাত্র-ছাত্রী নেই। অভিভাবকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানলাম তারা চলে গিয়েছে পাশের সোমেশ্বর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। আমাকে কিছু জানানোই হয়নি।”
সোমেশ্বর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরঞ্জন চোংদার বলেন, “কী করব। শ্যামলবাবু অভিভাবকদের কিছু না-জানিয়েই ছুটি নিয়েছিলেন। ফলে পড়ুয়ারা স্কুলে এসে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছিল। দেখতে পেয়ে আমরা তাদের নিয়ে এলাম। পরে অভিভাবকেরা জানান, তাঁরা আমাদের স্কুলেই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে চান। আমরা আপত্তি করিনি।” শ্যামলবাবুর পাল্টা বক্তব্য, আমি স্কুল পরিদর্শকের অফিসে ছুটি নেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। সেইসময় পাশের সন্তোষনগর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক অমিত মিত্রকে ভার স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে ভার দেওয়া হয় আমার স্কুলে এসে পাঁচ জনকে পড়ানোর জন্য। কিন্তু তিনি তা-না করায় ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়েই চলে গিয়েছে।”
অমিতবাবু অবশ্য বলেন, “শ্যামলবাবুর ছুটির দরখাস্তের ভিত্তিতে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিনা জানা নেই। বরং আমি এবং সুরঞ্জনবাবু দেখলাম ছাত্রেরা রাস্তায় ঘুরছে। আমরাই স্কুল পরিদশর্ককে জানালাম ঘটনার কথা। তখন আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় স্কুলটি চালু রাখার জন্য। আমার স্কুলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই সুরঞ্জনবাবু যখন তাঁর স্কুলে এই পাঁচ জনকে নিয়ে গেলেন, আমি আপত্তি করিনি। পরবর্তীকালে আমার স্কুলে একজনকে ভর্তি করিয়ে নিয়েছি। বাকি চার জন রয়েছে সুরঞ্জনবাবুর স্কুলে।”
অন্য দিকে সুরঞ্জনবাবু বলেন, “আমার এখানে চার জন পড়ুয়া চলে এসেছে। তবে খাতায় কলমে এখনও তারা শ্যামলবাবুর স্কুলেরই ছাত্র-ছাত্রী। ভবিষ্যতে তারা যদি পুরনো স্কুলে ফিরে যেতে চায় যেতে পারে।”
গ্রামবাসীদের অবশ্য বক্তব্য, স্কুলটিকে কেন্দ্র করে সরকারের কোনও নীতি নেই। বছরের পর বছর স্কুলে বাড়তি শিক্ষক দেওয়া হয়নি। অথচ প্রধান শিক্ষকের বেতন এবং মিড ডে মিলের রাঁধুনির জন্য বেতন বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। তৃণমূল নেতা জয়ন্ত পোল্যে বলেন, “আমরা চাই স্কুলটি চলুক। এর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
শ্যামলবাবু অবশ্য বলেন, “ছাত্র-ছাত্রী না-থাকলেও আমি কিন্তু কর্তব্য করে যাচ্ছি। গত এক মাস ধরে রোজ স্কুলে হাজির হয়ে বিকেল ৪টে পর্যন্ত থাকছি।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “তবে এই রকমভাবে একটি স্কুল চালানো মানে জনগণের টাকার অপচয়। আমি চাই যথেষ্ট ছাত্র-ছাত্রী আছে এইরকম একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে আমাকে বদলি করা হোক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.