পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ভারতে আসার ছ’দিন আগে কূটনৈতিকভাবে ‘চাপে’ পড়ে গেল ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে সন্ত্রাস-প্রশ্নে ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিই ফের প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, নয়াদিল্লি সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গেল বলে সাউথ ব্লক মনে করছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত রাতে। ভারত সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাইকে জানান, জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ মহম্মদ সইদের মাথার দাম ১ কোটি ডলার ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। সইদের আত্মীয় হাফিজ আব্দুল রহমান মাক্কি সম্পর্কে তথ্য দিলেও ২০ লক্ষ ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। মাক্কি জেহাদে অর্থ জোগান দেন বলে অভিযোগ।
স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার এই ঘোষণায় উল্লসিত ভারত। কারণ, মুম্বই হামলার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে, বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই হাফিজ মহম্মদ সইদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছে মনমোহন সরকার। সইদই যে মুম্বই বিস্ফোরণের প্রধান মস্তিষ্কএই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও নথি পাকিস্তানকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সাউথ ব্লকের অভিযোগ, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এ ব্যাপারে টালবাহানা চালিয়ে গিয়েছে ইসলামাবাদ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ দিন বলেন, “হাফিজ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পাকিস্তানকে দিয়েছি। কী ভাবে সে মুম্বই আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল সে ব্যাপারেও নথি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান দায়িত্ব পালন করছে না।” চিদম্বরমের আশা, আমেরিকার এই পদক্ষেপে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়বে। প্রয়োজনে এই তথ্য এবং নথি আমেরিকাকেও দিতে পারে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিংহের মতে, এই মার্কিন ঘোষণায় ফের প্রমাণিত হয়েছে, পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়।
তবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী রেহমান মালিক আজও দাবি করেন, আমেরিকার তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। আর তাঁরা লস্কর তথা জামাত উদ দাওয়ার প্রধান সইদকে গৃহবন্দিই রেখেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টই ওই নেতাকে জামিন দিয়েছে। আর খোদ সইদের তির্যক মন্তব্য, “আমরা গুহায় লুকিয়ে থাকি না যে আমাদের খুঁজে বের করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে হবে।” একটি টিভি চ্যানেলে তাঁর মন্তব্য, “স্রেফ হতাশ হয়ে আমেরিকা এই কাণ্ড করছে। আমরা ন্যাটোবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি বলে এটা করা হয়েছে। আমেরিকা ভারতের দেওয়া ভুল তথ্যের উপরে ভিত্তি করে চলছে।” তবে জামাত উদ দাওয়ার তরফে জানানো হয়েছে, নেতার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তারা জোরদার করেছে। পঞ্জাবের জৌহর শহরের ই ব্লকে সইদের বাড়ির সামনে ৯ জন পুলিশ থাকেন। আজ থেকে জামাতের প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী বাড়ি ঘিরে ২০০ মিটার অন্তর অন্তর ব্যারিকেড করে রাখছেন।
মাথার দাম ১ কোটি ডলার, মার্কিন তালিকায় এমন জঙ্গির সংখ্যা খুব বেশি নয়। সইদ ছাড়া তালিকায় রয়েছেন তালিবান নেতা মোল্লা মহম্মদ ওমর। সইদের চেয়েও বেশি মাথার দাম মাত্র এক জনের। তিনি আল-কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সইদ এবং মাক্কির মতো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সোমবার রাতেই নয়াদিল্লিকে জানিয়েছিলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান। আজ ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ বলেন, সম্প্রতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সহযোগিতা আরও বেড়েছে। আমেরিকা বিশ্বের নানা প্রান্তে জঙ্গিদের উপরে নজর রাখে। একই ভাবে সইদের উপরেও নজর রাখছে তারা। তাঁর কথায়, “ষড়যন্ত্রকারীরা কখনই ছাড়া পেতে পারে না। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় বারবার এই প্রসঙ্গটি তুলেছি।”
২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পরে কিছু দিন গৃহবন্দি ছিলেন সইদ। আমেরিকা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের চাপেই এই পদক্ষেপ করে পাক সরকার। কিন্তু ২০১১ সালে আবার জেহাদি রাজনীতিতে ফিরে আসেন তিনি। ‘ডেফা-ই-পাকিস্তান কাউন্সিল’-এর অধীনে ৪০টি জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ে মঞ্চ তৈরি করেছেন তিনি। নভেম্বরে ন্যাটোর বিমানহানায় ২৪ জন পাক সেনা মারা যাওয়ার পরে প্রবল মার্কিন-বিরোধী হাওয়ায় সইদ দেশ জুড়ে বেশ কয়েকটি বিশাল জনসভার আয়োজন করেন। পাকিস্তান দিয়ে আফগানিস্তানে ন্যাটো সেনাকে রসদ সরবরাহের প্রবল বিরোধিতা করেন তিনি। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনও জনসভায় তীব্র ভারত-বিরোধী বক্তৃতা দেওয়াই তাঁর রেওয়াজ। |