|
|
|
|
গণধর্ষণে অভিযুক্তেরা অধরা, ক্ষোভ দুই জেলায় |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের পরে মালদহের রতুয়াতেও গণধর্ষণের মামলায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। জমি নিয়ে বিবাদের জেরে রতুয়ার পলাশবোনার ওই বধূকে শনিবার তাঁর ৩ প্রতিবেশী ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। থানায় জানানো হলে অভিযুক্তরা বধূর বাড়ি ভেঙে লুঠপাট চালায় বলেও অভিযোগ। ঘটনার পর দুদিন কেটে গেলেও এখনও কোনও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়নি। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের দায়সারা মনোভাবের জেরেই অভিযুক্তরা ধরা পড়ছে না। মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি এ দিন বলেন, “ঘটনার দু’দিন বাদেও অভিযুক্তদের কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। আমরা আরও এক দিন সময় দিলাম। মঙ্গলবারের মধ্যে অভিযুক্তদের পুলিশ ধরতে না পারলে বুধবার বামফ্রন্টের তরফে আন্দোলন শুরু হবে। ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হবে।” পক্ষান্তরে, গোয়ালপোখরের ঘটনাতেও অধরা অভিযুক্তদের অনেকেই। স্থানীয় মালকুণ্ডা গ্রামে গত নভেম্বর মাসে এক বধূকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। হুমকির মুখেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করতে রাজি হননি ওই ধর্ষিতার পরিজনেরা। পরিণতিতে ধর্ষিতার দাদা গণেশ রায়ের দেড় বছরের ছেলে বিক্রমকে অপহরণ করে মেরে মাটিতে পুঁতে রাখার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১২ মার্চ আরেকটি মামলা হয়। তবে অভিযুক্তদের অন্যতম তথা কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা পরশ রায় -সহ অনেকেই এখনও অধরা। পরশবাবুর উপরে সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে গণেশবাবুকে। ছেলের মৃত্যুর পরে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পেয়ে গণেশবাবু গ্রামবাসীদের সঙ্গে গোয়ালপোখর থানায় গিয়ে অফিসার সুধীর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের মদত দেওয়ার অভিযোগ করেন। লিখিতভাবে তা জানিয়ে সুধীরবাবুর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজুর আর্জি জানান গণেশবাবু। অভিযোগ নথিভুক্ত হলেও তা নিয়ে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন সেই প্রশ্নেই ক্ষোভ তুঙ্গে এলাকাবাসীর। সেখানেও বিক্ষোভ -আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন বাসিন্দারা। সোমবার সন্ধ্যায় শিশু অপহরণ ও হত্যায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করে ইসলামপুর নাগরিক কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক পাসারুল আলাম বলেন, “দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। এটা নিয়ে কোনও রাজনীতি চলবে না।” দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। রতুয়া ও গোয়ালপোখর, দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই দুই থানার অফিসারদের একাংশের দাবি, অভিযুক্তদের বেশির ভাগ বিহারে পালিয়েছেন। বাসিন্দাদের বক্তব্য, তেমনই যদি হয়, তা হলে বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে যৌথ তল্লাশির বন্দোবস্ত হচ্ছে না কেন? কী বলছেন দুই জেলার পুলিশ কর্তারা? মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “গণধর্ষণ ও বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে এলাকায় একাধিকবার তল্লাশি চালানো হয়েছে। আশেপাশেও খোঁজ চলছে। অভিযুক্তরা ধরা পড়বেই। গড়িমসির অভিযোগ তোলা ঠিক নয়।” পাশাপাশি, উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, গোয়ালপোখরের ঘটনায় কোনও পুলিশ অফিসারের যুক্ত থাকার ব্যাপারে অভিযোগ তিনি পাননি। এসপি বলেন, “ওই বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। তাতে পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার উল্লেখ নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” গোয়ালপোখর থানায় এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গণেশবাবু অভিযোগ জমা দিলেও পুলিশ পদক্ষেপ করল না কেন সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর পুলিশ কর্তারা দেননি। থানার অফিসারদের একাংশ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ না দিলে ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু করা সম্ভব নয়। সোমবার গণেশবাবুকে ফের ইসলামপুর আদালতে তোলা হয়। আদালতের নির্দেশ মতো পরশবাবুর মেডিক্যাল রিপোর্ট, কেস ডায়েরি জমা দেয় পুলিশ। গণেশবাবুর জামিনের আর্জি নামঞ্জুর হয়ে যায়। কিন্তু, পরশবাবু এখন কোথায় তা পুলিশ জানাতে পারেনি। |
|
|
|
|
|