স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু করল প্রশাসন। সম্প্রতি কাশীপুরের কালীদহ অঞ্চল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। তার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার স্কুলে গিয়ে তদন্ত করলেন কাশীপুরের বিডিও রাজীব ঘোষ।
কাশীপুরের এই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে ‘পরিবর্তন’ হয়েছে গত বছর। নতুন পরিচালন সমিতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেছে প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর মণ্ডলকে। তাঁদের মূল অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক স্কুলের আদিবাসী ছাত্রাবাস নির্মাণ, মিড-ডে মিলের রান্নাঘর নির্মাণ, শৌচালয় নির্মাণের মত বিষয়গুলিতে আর্থিক বেনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। পরিচালন সমিতি সুত্রের খবর, দায়িত্ব পাওয়ার পরেই সমিতির প্রতিটি সভায় প্রধান শিক্ষকের কাছে নির্মাণ কাজ গুলির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সম্পাদক হরেন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, “বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলের বিভিন্ন খাতের পাওয়া অর্থের হিসাব চেয়েছিলাম। শিবশঙ্করবাবু হিসাব দিতে পারেননি। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।”
হরেন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “গত পাঁচ বছরে শিবশঙ্করবাবু আদিবাসী ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য কয়েক দফায় ওই তহবিল থেকে মোট ১২ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা তুলেছেন। কিন্তু সেই টাকা তিনি সঠিক কাজে ব্যবহার করেননি। পরিচালন সমিতির কাছে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য ৬ লক্ষ ৮ হাজার টাকার নির্মাণ সামগ্রী কেনা হয়েছে। ১ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকায় ছাত্রাবাসের কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাবেই ওই তহবিলে আরও টাকা পড়ে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোনও টাকা নেই। উল্টে নির্মাণ-সামগ্রী সরবরাহকারী সংস্থা পরিচালন সমিতির কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা সমস্ত টাকা এখনও পায়নি!” পরিচালন সমিতির আরও অভিযোগ, স্কুলে শৌচালয় নির্মাণের জন্য ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও সেই টাকারও কোনও হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এমন কী অভিযোগ, ওই শৌচালয়ের নির্মানই করা হয়নি। পাশাপাশি স্কুলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ এবং মিড-ডে মিলের রান্নাঘর নির্মাণের কাজেও বেনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। হরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “প্রধান শিক্ষকের কাছে বাখ্যা চাওয়ার পরেও না মেলায় বাধ্য হয়ে পুলিশ ও প্রসাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।”
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অবশ্য দাবি, “যে কাজগুলির প্রেক্ষিতে পরিচালন সমিতির সম্পাদক অভিযোগ করেছেন তার অডিট ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। সেখানে কোনও গরমিল নেই।” প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হওয়া প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর মণ্ডল বিশদে মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও প্রশাসনিক সুত্রে খবর, আগে পরিচালন সমিতির সম্পাদকের অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও যে তদন্ত করেছিলেন সেই সময় অর্থ খরচের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি মিলেছিল। এ দিন বিডিও রাজীব ঘোষ বলেন, “পরিচালন সমিতির অভিযোগগুলির সম্পর্কে বিশদে তদন্ত শুরু হয়েছে। স্কুলে গিয়ে বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট পাঠানো হবে।” |