|
|
|
|
নতুন জেলার পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন সর্বদলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
জেলা ভাগের পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু নতুন জেলার পরিকাঠামো কোথায়? কবেই বা সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব? জেলা ভাগ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে উঠে এল এমনই সব প্রশ্ন।
পশ্চিম মেদিনীপুরকে ভেঙে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠনের পরিকল্পনা করেছে রাজ্যের নতুন সরকার। ইতিমধ্যে খসড়া পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে গত ৫ মার্চ মেদিনীপুরে এক সর্বদল বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে লিখিত প্রস্তাব চায় জেলা প্রশাসন। সেই মতো প্রস্তাব জমা পড়ে। প্রস্তাব খতিয়ে দেখতেই সোমবার মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে ফের সর্বদল বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। জানা গিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই কোন রাজনৈতিক দল কী প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তা জানানো হয়। এরপর উপস্থিত নেতাদের মতামত জানতে চান জেলাশাসক। প্রথম সর্বদল বৈঠকে যে প্রাথমিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছিল, তাতে ঝাড়গ্রাম জেলায় দু’টি মহকুমা থাকবে বলে জানানো হয়। |
|
মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে সর্বদল বৈঠক। সোমবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর। তবে, সিপিএম ও সিপিআই দু’টির বদলে তিনটি মহকুমার পক্ষে প্রস্তাব দেয়। ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর ছাড়া শিলদা মহকুমা চেয়েছে তারা। যদিও কোন মহকুমায় কতগুলো ব্লক থাকবে এবং কী কী, সংশ্লিষ্ট ব্লকে কতগুলো গ্রাম পঞ্চায়েত থাকবে এবং কী কী এ সব নিয়ে দুই বাম-শরিকের প্রস্তাবে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
প্রথম সর্বদল বৈঠকে নতুন জেলার পরিকাঠামোর বিষয়টি সে ভাবে আলোচিত হয়নি। এ দিন প্রসঙ্গটি ওঠে। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সুকুমার ভুঁইয়া বলেন, “জেলা ভাগ হবে। আমাদেরও আপত্তি নেই। কিন্তু নতুন জেলার পরিকাঠামো কোথায়? কবেই বা তা গড়ে তোলা সম্ভব হবে?” জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা এ প্রশ্নে নিরুত্তরই ছিলেন। ১০ বছর আগে মেদিনীপুর ভেঙে নতুন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠন হয়। সেখানে এখনও নতুন প্রশাসনিক ভবন গড়ে ওঠেনি। বৈঠক শেষে সুকুমারবাবু বলেন, “এই প্রশ্নের উত্তর জরুরি। নতুন জেলার পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে প্রচুর অর্থ দরকার। প্রায় ৭০০-৮০০ কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছে তো অর্থ নেই!” এ ক্ষেত্রে খসড়া পরিকল্পনাও তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। জানা গিয়েছে, নতুন জেলার প্রশাসনিক ভবন তৈরির জন্য ঝাড়গ্রাম পুর-এলাকায় ৮ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে দু’টি ভবন তৈরি হবে। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। একই চত্বরে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয় তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় হবে ৫ কোটি টাকা।
বৈঠকে বিজেপি জানায়, শিলদা নয়, নতুন বেলপাহাড়ি মহকুমা হোক। দলের জেলা কমিটির সদস্য পঞ্চানন হাঁসদা বলেন, “আমরা এই প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে রেখেছি।” তৃণমূলের আবার দাবি, নতুন লালগড় মহকুমা তৈরি হোক। শাসকদলের বক্তব্য, লালগড়কে শিলদা মহকুমার অন্তর্গত করা হলে তা স্থানীয় মানুষ মানবেন না। সোমবারের বৈঠকে থাকার কথা ছিল তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায়ের। কিন্তু তিনি যখন সার্কিট হাউসে উপস্থিত হন, তখন বৈঠক শেষ হয়ে গিয়েছে। বনবিহারীবাবু বলেন, “হয় লালগড়ে নতুন মহকুমা হোক। না হলে এই ব্লক যেমন ঝাড়গ্রামের মধ্যে রয়েছে, তেমনই থাকুক।” রাজনৈতিক দলগুলি জেলা ভাগ সংক্রান্ত যে লিখিত প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছিল, তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা। বৈঠক শেষে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, “যা বলার লিখিত প্রস্তাবেই আমরা বলেছি।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবের কথায়, “লালগড়কে অন্য কোনও মহকুমার মধ্যে না রেখে বরং ঝাড়গ্রাম মহকুমার মধ্যেই রাখা হোক।”
বৈঠক শেষে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত বলেন, “আমার সব প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেব। সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ করবে।” বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রস্তাব প্রসঙ্গে জেলাশাসকের অভিমত, “এটা ভাল দিক। নতুন জেলা তৈরির ক্ষেত্রে কারও আপত্তি নেই। বিভিন্ন দল বিভিন্ন প্রস্তাব-মতামত জানিয়েছে। এটাই প্রত্যাশিত।” এখন আর জেলাস্তরে সর্বদল বৈঠক হবে না। জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হবে। এরপর রাজ্য থেকে যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মতো কাজ হবে। ইতিমধ্যে কেউ চাইলে কোনও প্রস্তাব লিখিত ভাবে জমা দিতে পারে।
|
|
|
|
|
|