বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বিবাদের জেরে সোমবার সকালে উত্তেজনা ছড়ায় মেদিনীপুরে। কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড চত্বরেই বাস-কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন পুরসভার কর্মীরা। অভিযোগ, এক বাসকর্মীকে মারধর করেন এক পুরকর্মী। একটি বাস ভাঙচুরও করা হয়। প্রতিবাদে বাসকর্মীরা এলাকায় অবরোধ শুরু করেন। স্ট্যান্ড থেকে বাস বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রী ও পরীক্ষার্থীরা। বেলা দশটা নাগাদ ফের বাস চলাচল শুরু হয়। ১ এপ্রিল থেকে বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেদিনীপুর পুরসভা। কিন্তু এ দিনের গোলমালের পরে আপাতত কোনও ভাড়াই নেওয়া হবে না বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “আপাতত ভাড়া নেওয়া বন্ধ থাকবে। বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” বাস মালিকদের বক্তব্য, বর্ধিত ভাড়া লাগু করার আগে আলোচনায় বসার প্রস্তাব আগেই পুর-কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া দেননি। আগে আলোচনা হলে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটত না। |
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের তিনশোরও বেশি বাস যাতায়াত করে। আগে বাস পিছু স্ট্যান্ড-ফি নেওয়া হত ৫ টাকা। এ বার তা বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাতে স্ট্যান্ডে বাস রাখলে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে দিতে হবে। রাতের জন্য টাকা আগে দিতে হত না। সম্প্রতি পুরপ্রধান পারিষদদের বৈঠকে স্ট্যান্ডের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তারপরই ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো রবিবার থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল। অধিকাংশ বাস মালিকের বক্তব্য, বর্ধিত ভাড়া দিতে আপত্তি নেই। তবে তার আগে বাসস্ট্যান্ডে প্রয়োজনীয় পরিষেবার বন্দোবস্ত করতে হবে পুর-কর্তৃপক্ষকে। বর্ধিত ভাড়া নিয়েই সোমবার সকালে গোলমাল বাধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, একটি বাসের চালক বর্ধিত ভাড়া দিতে আপত্তি জানান। সমীরণ চৌধুরী নামে ওই চালকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন পুরকর্মী কাজল চক্রবর্তী। কাজলবাবু বাসস্ট্যান্ড ম্যানেজার। বচসা চলাকালীন কাজলবাবু ওই চালককে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে স্ট্যান্ডের অন্য পুরকর্মীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বচসা বাধে। একটি বাস ভাঙচুর করা হয়। বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তা অবরোধ করা হয়। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। |
ততক্ষণে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্ট্যান্ড থেকে কোনও বাস বেরোতে পারছে না। সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রী ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। অনেক অফিস কর্মী বাস ধরতে এসে ফিরে যান। তবে অটো চলাচল স্বাভাবিক থাকায় শহর ও শহরতলির যাত্রীদের তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। সোমবার সকালে বাস ধরতে স্ট্যান্ড এসেছিলেন সদর দক্ষিণ চক্রের এসআই অরুণাভ প্রহরাজ। গন্তব্য ছিল পিরাকাটা। ওই রুটের বাস না থাকায় তাঁর আর অফিস যাওয়া হয়নি। অরুণাভবাবু বলেন, “অফিসে জরুরি মিটিং ছিল। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পিরাকাটা যাওয়ার বাস পেলাম না।” সকাল ছ’টা থেকে বাস বেরনো বন্ধ থাকলেও দশটা নাগাদ ফের বাস চলাচল শুরু হয়। জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক শিবু সরখেল বলেন, “আমরা আগেই পুর-কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আলোচনা না করেই বর্ধিত ভাড়া লাগু করা হল। আগে আলোচনা হলে এমন ঘটনা ঘটত না।” |
একই বক্তব্য জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির। তাঁর কথায়, “সব কিছুর দাম বাড়ছে। অথচ বাস ভাড়া বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে ভাড়া বাড়ানোর আগে পুর-কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বসা উচিত ছিল।” এ দিনের ঘটনায় বাসকর্মী ও পুরকর্মী, দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। পুর-কর্তৃপক্ষ দু’পক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
|