এলপিজি-র ‘মূল্যবৃদ্ধি’ এবং পুলিশের ‘কড়াকড়ি’র প্রতিবাদে আচমকাই অটো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন চালকেরা। তার জেরে সাধারণ মানুষকে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে যেতে হচ্ছিল গন্তব্যে। পুলিশ জানায়, সোমবার উল্টোডাঙার হাডকো মোড়ে এমনই একটি ভিড়-বাস থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। তাঁর নাম সোনু মাহাতো (২৮)। বাড়ি ব্যান্ডেলে।
গত ১৯ মার্চ ঠিক এ ভাবেই রেল অবরোধের জেরে প্রচণ্ড ভিড়ের ধাক্কায় ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণ হারান প্রিয়াঙ্কা সিংহ নামে এক কলেজছাত্রী এবং মির ইমান আলি নামে এক যুবক। কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার তাড়া ছিল প্রিয়াঙ্কার। আর ইমান যাচ্ছিলেন এক আত্মীয়ের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে।
পুলিশ জানায়, এ দিন হাডকো মোড়ে দুর্ঘটনা ঘটে সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অটো ধর্মঘটের কারণে এ দিন বাসে ভিড় ছিল লাগামছাড়া। ঝুলতে ঝুলতে যেতে হচ্ছিল বহু যাত্রীকে। সল্টলেকগামী এমনই একটি বাসে যাচ্ছিলেন সোনু। ভিড়ে টাল রাখতে না-পেরে পড়ে যান তিনি। বাসের পিছনের একটি চাকা তাঁর উপর দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় সোনুকে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই যুবকের ব্যাগে ইন্দিরা গাঁধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিচয়পত্র মিলেছে। তিনি বিকাশ ভবনে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টারে ক্লাস করতে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। স্থানীয় এক অটোচালক জানান, বাসে উপচে পড়া ভিড় ছিল। দরজার কাছেই ছিলেন ওই যুবক। বাসটি সিগন্যালের কাছে এসে গতি বাড়ানোর পরেই তিনি পড়ে যান।
এ দিনই দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ট্রেনের কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রেল পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তাপস মল্লিক (৩৩)। বাড়ি দমদম ক্যান্টনমেন্টে। ওই স্টেশনের দোকানদারেরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে একটি বনগাঁগামী লোকাল এসেছিল। ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার পরে ওই যুবক উল্টো দিক দিয়ে তাতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। হাত ফস্কে ট্রেনের তলায় পড়ে যান তিনি। রেল পুলিশের দাবি, নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচার সত্ত্বেও আমজনতার যে হুঁশ ফেরেনি, এ দিনের দুর্ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল।
গত শনিবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে লাইন পেরোতে গিয়ে হাওড়ামুখী রাঁচি-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের ধাক্কায় পাঁচ জন মারা যান। পুলিশ জানিয়েছিল, শালিমারগামী তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস থেকে নেমে ওই যাত্রীরা লাইন পেরিয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময়েই তাঁদের ট্রেন ধাক্কা মারে।
দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে ওভারব্রিজ রয়েছে। তা হলে ওই যুবক এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করলেন কেন?
স্টেশনের দোকানদারেরা জানান, ওই যুবক সময় বাঁচাতে উল্টো দিক দিয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, স্টেশনে নজরদারি চালানোর জন্য রেল পুলিশ বা আরপিএফ থাকে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে লাইন পারাপার করলেও কেউ বাধা দেওয়ার নেই।
রেল পুলিশ যে ওই স্টেশনে থাকে না, তা স্বীকার করে নিয়েছেন শিয়ালদহের এসআরপি তাপসরঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, “ওই স্টেশনে রেল পুলিশ মোতায়েন করার কথা ভাবা হচ্ছে। সচেতনতার প্রচারও বাড়ানো হবে।” |