দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলায় সিপিএমের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু’টি ঘটনায় আহত অন্তত ২৪ জন।
রবিবার বিকেলে বীরভূমের নানুর থানার পোশলা গ্রামে দলীয় সভায় যোগ দিতে যাওয়া সিপিএমের কর্মীদের উপরে গুলি ও বোমা ছোড়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল। সিপিএমের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। মারধরে জখম ১১ জন সিপিএম কর্মী। পেটে ও বাঁ হাতে গুলি লেগে ডালিম শেখ নামের ওই সিপিএম কর্মীকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “এক সিপিএম কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আরও কয়েক জন সামান্য চোট পেয়েছেন। পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে।” রাতে থানায় তৃণমূলের ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সিপিএম। পুলিশ সিরাজুল হক নামে নূরপুরের বাসিন্দা এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। ডালিম শেখও ওই
গ্রামের বাসিন্দা। |
নানুরে গুলিবিদ্ধ সিপিএম কর্মীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে
বর্ধমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী |
এ দিনই বিকেলে গোঘাটের কামারপুকুরে চটি সংলগ্ন এলাকায় দলের জোনাল কার্যালয় থেকে বৈঠক সেরে বেরোতেই সিপিএম নেতাদের উপরে হামলা হয়। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। জখম হন ১২ জন। সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য অসিত মুখোপাধ্যায়, গোঘাট ১ লোকাল কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ-সহ চার জনকে রাতে ভর্তি করা হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। এক জনকে পুলিশ ধরেছে। দু’টি ঘটনাতেই তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ দিন বিকেলে কীর্ণাহারে কৃষকসভার মিছিল ও পথসভা ছিল। আশপাশের এলাকার সিপিএম কর্মীরা সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সিপিএমের অভিযোগ, ডালিম শেখরা ট্রাক্টরে কীর্ণাহারের দিকে যাওয়ার সময় পোশলায় তৃণমূলের কর্মীরা রাস্তা আটকে ট্রাক্টর লক্ষ করে বোমা ও গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হন বছর পঁয়ত্রিশের ডালিম শেখ। কয়েক জন সামান্য চোট পান। প্রায় একই সময়ে গোমাই গ্রামেও সিপিএম কর্মীদের একটি ট্রাক্টর থামিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা চাবি কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ। পরে সিপিএম কর্মীদের মারধর করা হয়।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সিপিএমের কর্মীরা বিকেলে কীর্ণাহার চৌরাস্তা মোড়ে অবরোধ শুরু করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। বোলপুর হাসপাতালে ডালিম কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর দেহে দু’টি গুলি রয়েছে। খবর পেয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য সেখানে যান। তাঁর অভিযোগ, “পরিকল্পিত ভাবেই তৃণমূল হামলা চালিয়েছে। ডালিম ছাড়াও আরও ১১ জন কর্মী জখম হয়েছেন।” সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমানের দাবি, “দলীয় কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার জন্যেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি, বোমা নিয়ে হামলা চালিয়েছে।” নানুর ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, “সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই হামলা। আমাদের দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” |
গোঘাটে প্রহৃত হুগলি সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য
অসিত মুখোপাধ্যায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র |
গোঘাটেও সিপিএমের জমায়েতে এ দিন হামলা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিকেলে জোনাল অফিসে প্রায় ৪৫০ সিপিএম কর্মী হাজির হয়েছিলেন। অভিযোগ, বৈঠক শেষে দলের নেতারা জোনাল অফিস থেকে বেরোতেই তাঁদের উপরে লাঠি-রড নিয়ে হামলা চালায় জনা পঞ্চাশ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। ইট-পাটকেল ছোড়া হয় জোনাল অফিস লক্ষ করে। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুনীল সরকারের অভিযোগ, “তৃণমূল সন্ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে।” দলের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্র বলেন, “মিটিং-মিছিল করা যাবে না বলে আমাদের লাগাতার হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “জনরোষে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমাদের কেউ হামলায় যুক্ত নন।” |