মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশ রবিবারেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। শনিবার রাতে ওই ভবন লক্ষ করে গুলি ও বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে ‘৭-৮ জনের একটি দল’ ওই কাণ্ড ঘটিয়ে ‘দ্রুত গতিতে মোহনের মোড়ের দিয়ে পালিয়ে যায়’ বলে জেলা কংগ্রেসের পক্ষে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনার পরে কংগ্রেস কার্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রহরারও দাবি জানানো হয়। সেই মতো রবিবার সকাল থেকে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ের সামনে পুলিশ প্রহরা মোতায়েন করা হয়েছে।
এ দিন জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের উত্থান যাদের পছন্দ নয়, তারাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে যদি গ্রেফতার না করা হয়, তাহলে ওই ঘটনার পিছনে প্রশাসনেরও প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে বুঝব।” তাঁর কথায়, “গত ৩৪ বছরের সিপিএমের রাজত্বে এভাবে আমাদের পার্টি অফিস আক্রমণ হয়নি। সেদিক থেকে ঘটনার নতুনত্ব রয়েছে। আসলে সিপিএমের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এখন শাসক দলে যোগ দেওয়ায় রাজ্যে নতুন মোড়কে, নতুন ছাতার তলায় সন্ত্রাস-সংস্কৃতির জন্ম হয়েছে। আগামী দিন যা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।” |
তবে জেলা কংগ্রেস পুলিশের কাছে যে লিখিত অভিযোগ করেছে, তাতে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম নেই। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কিন্তু অভিযোগ, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে পায়ের তলার জমি পেতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।” এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলির পাল্টা বক্তব্য, “আমাদের নেত্রী হিংসার রাজনীতি পছন্দ করেন না। ফলে অন্য রাজনৈতিক দলের কার্যালয় আক্রমণ করার কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। বরং আমাদের আশঙ্কা, তৃণমূল সমর্থকদের উপরে সংগঠিত আক্রমণ করতে পারে কংগ্রেস। সে জন্য তারাই এই ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।”
শনিবার সন্ধ্যে থেকেই বহরমপুরে তুমুল ঝড় শুরু হয়। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। অনেক রাত পর্যন্ত শহরের বেশ কিছু এলাকায় লোডশেডিং ছিল। জেলা কংগ্রেস কার্যালয় লাগোয়া ক্যান্টনমেন্ট রোড এলাকাও অন্ধকারে ডুবে ছিল। এই
|
উদ্ধার হওয়া কার্তুজ। |
অবস্থায় রাত প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ কংগ্রেস কার্যালয় লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বোমা ফাটার বিকট আওয়াজও শোনা যায়। দুষ্কৃতীরা গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। সেই সময়ে কংগ্রেস কার্যালয়ে নৈশপ্রহরী ফারুখ শেখ ও কেয়ারটেকার রাজু পাল ছিলেন।
ঘটনার পরেই জেলা কংগ্রেস নেতত্ব দলীয় কার্যালয়ে চলে আসেন। বহরমপুর থানারও পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ওই রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২টি ৭.৬৫ বোরের গুলি এবং এদিন সকালে পার্টি অফিসের পিছন দিকে ফাঁকা জায়গা থেকে ১টি সকেট বোমা উদ্ধার করে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে দু’টি গুলি ও ১টি সকেট বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত চলছে।” অশোকবাবু বলেন, “পার্টি অফিসের দোতলা ও তিন তলার বারান্দা লক্ষ করে গুলি ছোড়ার ফলে বেশ কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে গিয়েছে। তদন্ত করে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে।”
এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে শহর কংগ্রেস এদিন বিকেলে বহরমপুরে মিছিল বের করে। ওই মিছিলে জেলা কংগ্রেস নেতৃবর্গ, পুরসভার কাউন্সিলর থেকে সাধারণ কর্মী-সমর্থক ওই মিছিলে হাঁটেন। ওই প্রতিবাদে সোমবার জেলার ২৬টি ব্লকেই মিছিল বের করবে কংগ্রেস। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা কোনও দিনই কোনও দুষ্কৃতীকে প্রশ্রয় দিইনি। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা খুবই নিন্দ্যনীয়।” |