সু চি-কে পার্লামেন্টে দেখতে ভোট দিল মায়ানমার
দু’দশকের সংগ্রামের পরে লক্ষ্যের পথে একটা ধাপ এগোনো।
মায়ানমারে পার্লামেন্টের ৪৫টি আসনে উপনির্বাচনে ভোট নেওয়া হল আজ। যার একটি আসন, খাউমু কেন্দ্রে প্রার্থী স্বয়ং আউং সান সু চি। ১৯৮৯ থেকে পরের ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই বন্দিজীবন কাটানোর পরে ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছেন মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী। তার পর এই প্রথম তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণ।
১৯৯০-এর পর ২০১২। ১৯৯০ সালে সাধারণ নির্বাচনে সু চি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ৮০ শতাংশ আসন জিতেছিল। সু চি-র প্রধানমন্ত্রী হওয়া ছিল নিশ্চিত। কিন্তু সামরিক ‘জুন্টা’ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। ভোটের ফল চুলোয় গেল। সু চি-কে আবার জেলে পুরে দেওয়া হল। ২০১০-এর নির্বাচনেও অংশ নেয়নি এনএলডি। তাদের বক্তব্য ছিল, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। তাই তারা ভোটে অংশও নেবে না। তার পরে ২০১১ সালে সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করে ‘প্রজাতান্ত্রিক’ শাসকগোষ্ঠীকে। সেই সরকার যতটা সংস্কারের পথে হেঁটেছে, তাতে বিস্মিত সারা বিশ্বই। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি মুক্তি দেওয়া হয় অসংখ্য রাজনৈতিক বন্দিকে। ২০১২-য় এসে ভোটে অংশ নিল এনএলডি। প্রার্থী হলেন সু চি নিজেও।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সমর্থকদের সঙ্গে আউং সান সু চি।
রবিবার মায়ানমারে এএফপি-র ছবি।
মায়ানমারের পার্লামেন্টের ৬৬৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৪৫টি শূন্য ছিল। এই উপনির্বাচন হল সেই ৪৫টি আসনের জন্যই। সব ক’টিতে জয়লাভ করলেও শাসক দলকে কোনও ভাবে বেকায়দায় ফেলতে পারবে না এনএলডি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, পার্লামেন্টে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এই প্রথম বার সরকারের নীতি নির্ধারণে একটা ভূমিকা নিতে পারবে এনএলডি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়ানমারের বর্তমান আধা সামরিক-আধা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের একটা অংশও চায়, সু চি পার্লামেন্টে আসুন, যাতে রাজনৈতিক সংস্কারের পথ আরও মসৃণ হয়। তবে বর্তমান সরকারে এখনও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের প্রভাব যথেষ্ট। তাই বিরোধী দলের প্রভাব বাড়লে, আখেরে গণতন্ত্রের পক্ষে তা ইতিবাচকই হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সে ক্ষেত্রে মায়ানমারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ভাবতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
তার চেয়েও বড় কথা হল, দেশের সাধারণ, দরিদ্র, অনগ্রসর জনতার মনে নতুন করে আশা জাগিয়েছেন ৬৬ বছরের নোবেলজয়ী নেত্রী। এই জনতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কঠোর সামরিক শাসনে জর্জরিত। সু চি-র পার্লামেন্টে পা রাখা সেই মানুষগুলোর কাছে এক অভাবিত ব্যাপার। সু চি-র পক্ষে ভোট দিয়ে দক্ষিণ ইয়াঙ্গনের হতদরিদ্র গ্রাম ওয়া থিন খা-র বাসিন্দা গো খেতায় বলেছেন, “এই মুহূর্তে তিনি হয়তো কিছুই করতে পারবেন না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এক দিন পরিবর্তন আসবে ওঁর হাত ধরেই।” মায়ানমারের সংবাদমাধ্যমগুলির অনুমান, ৪৫টির মধ্যে অন্তত ৩০-৩৫টি আসন পাবে সু চি-র দল। তা হলে ২০১৫ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে পট-পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছে তারা।
সু চি যে জিতছেন, আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশের আগেই সে বিষয়ে নিশ্চিত সমর্থকরা। নির্বাচন কমিশনের ফল জানাতে হয়তো সপ্তাহ খানেক লাগবে। কিন্তু তার অনেক আগে আজই এনএলডি-র তরফে ডিজিটাল সাইনবোর্ডে সু চি-র ‘ঐতিহাসিক জয়ের’ খবর ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই মায়ানমারের মূল শহর ইয়াঙ্গনে এনএলডি-র সদর দফতরের সামনে হাজার হাজার সমর্থক উল্লাসে মেতে উঠেছেন। হাততালি দিয়ে, নেচে-গেয়ে ‘মাদার সু চি’-র জন্য লাল পতাকা উড়িয়ে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমরা জিতেছি।’
ইয়াঙ্গনের রাস্তায় সু চি-র ছবি হাতে সমর্থকদের মিছিল। ছবি: রয়টার্স
খাউমু টাউনশিপ থেকে পার্লামেন্টে লোয়ার হাউসের আসনের জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন সু চি। ভোট শুরুর আগে পথেও নেমেছিলেন তিনি। প্রচারের ক্লান্তিতে কাবু হয়ে বেশি দিন অবশ্য ঘুরতে পারেননি বর্ষীয়ান এই নেত্রী। প্রচারের সময়েই তিনি সতর্ক করেছেন, “দেশে স্বচ্ছ এবং অবাধ নির্বাচন হবে না। কিন্তু এনএলডি ভোটে অংশ নিচ্ছে বলে আক্ষেপ নেই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই। জনতা তা-ই চায়।” ভোটে অনিয়মের জন্য মায়ানমারে রাজনৈতিক সংস্কার ফের ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন সু চি।
সেই আশঙ্কা একেবারে মিথ্যে নয়। ভোট চলাকালীনই কারচুপির অভিযোগে আজ সরব হয় এনএলডি। দলের মুখপাত্র ন্যান উইন জানান, তাদের ভোটবাক্সে মোম লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। যাতে পরে এনএলডি-র পক্ষের ভোটগুলো মুছে ফেলা যায়। তাঁর কথায়, “সারা দেশেই এই কারচুপি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমি চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছি।” তবে তা সত্ত্বেও ভোটদানের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অসহ্য গরম উপেক্ষা করে বিভিন্ন বুথে লম্বা লাইনে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। প্রথম পাঁচ ঘণ্টাতেই ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশ।
এ বারের নির্বাচনেও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মায়ানমারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সংগঠনের (আসিয়ান) কয়েক জন প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এবং আমেরিকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। তা ছাড়া, ভোটের খবর করার জন্য এই প্রথম কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই আসতে দেওয়া হয়েছে বিদেশি সাংবাদিকদেরও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার জানিয়েছেন, মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগে মায়ানমারের উপরে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা দ্রুত তুলে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমি আশা করি, মায়ানমারের মানুষ আরও স্বাধীনতা পেতে চলেছেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োজন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.