পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের গণেশবাবুর
গ্রামবাসীরা জোট বেঁধে পাশে দাঁড়ানোয় এ বার এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করলেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের মালকুণ্ডা গ্রামের গণেশ রায়। গত সেপ্টেম্বরে পুলিশের কাছে গণেশবাবু তাঁর বোনকে ধর্ষণের যে অভিযোগ করেছিলেন, তা প্রত্যাহারের জন্য গোয়ালপোখর থানার ওই সাব-ইন্সপেক্টর সুধীরকুমার মুখোপাধ্যায় ‘দুষ্কৃতীদের হয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি’ দেন বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকী, ধর্ষণের অভিযোগ না-তুললে তাঁর ছেলেকে মারা হবে বলেও সুধীরবাবু হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগে লিখেছেন গণেশবাবু। তবে সুধীরবাবুর এই অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য হল, “এই ব্যাপারে আমি সংবাদ মাধ্যমে কিছু বলতে চাই না। যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব।”
শুক্রবার দুপুরে গণেশবাবু গোয়ালপোখর থানাতেই গিয়ে এই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ বলেন, “এক অফিসারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” থানা সূত্রে খবর, সাধারণ ডায়েরি হিসেবেই আপাতত এই অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়াও জানান, পুলিশকে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে ওই থানার ওসি ওহাম মোল্লার বক্তব্য, “সুধীরবাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। উনি এ ধরনের অফিসার নন। যাই হোক যে সময়ের কথা অভিযোগে লেখা হয়েছে আমি তখন ছুটিতে ছিলাম।”
গত সেপ্টেম্বরে গণেশবাবুর বোনকে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় গণেশবাবুর পড়শি পরশ রায় সহ ৬ জন অভিযুক্ত। পরশবাবু এলাকার কংগ্রেস নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি গ্রেফতারও হন। পরে জামিনে মুক্তি পান। অন্য অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হননি। পরশবাবু গ্রামে ফিরে আসার পর থেকেই ওই ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহারের জন্য গণেশবাবুদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। গণেশবাবুর দাবি, ওই পুলিশ অফিসারও ‘দুষ্কৃতীদের হয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতে থাকেন।’
এর মধ্যেই গত ১১ মার্চ গণেশবাবুর বাড়িতে ধর্ষণে অভিযুক্তেরা হামলা করেন বলে অভিযোগ। সেই দিনই তাঁর দেড় বছরের ছেলে বিক্রমকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গণেশবাবুর দাবি, সেই রাতে তাঁরা থানায় যাওয়ার পথে সুধীরবাবুই তাঁদের পথ আটকান। তাঁর স্ত্রী ওই পুলিশ অফিসারের পা ধরে সাহায্য চাইতে গেলে সুধীরবাবু তাঁর স্ত্রীকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। তবে তারপরে তাঁরা থানাতে গিয়েছিলেন। থানা থেকেই তাঁদের লোধন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়। গণেশবাবুর দাবি, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে আসেন সুধীরবাবু। গণেশবাবুর দাবি, তারপরে তাঁকে ‘আড়াই দিন থানায় আটকে রেখে’ ১৪ মার্চ ইসলামপুর আদালতে তোলা হয়।
ইতিমধ্যে তাঁর স্ত্রী প্রমীলাদেবী ওই থানাতেই তাঁর ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু গণেশবাবুর দাবি, পুলিশ তাঁর ছেলেকে খুঁজতে চায়নি। বরং সুধীরবাবু তখন ‘ধর্ষণের মামলা তুললি না, তোর ছেলেকে পচিয়ে দেব’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন। ২৭ মার্চ তাঁর ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গণেশবাবুর দাবি, ওই এসআই-ও তাঁর নজরে ‘একজন খুনি’। সুধীরবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রুজু করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। ওসি ওহাম মোল্লা অবশ্য বলেন, “অভিযোগটি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও সুধীরবাবুর বিরুদ্ধে কোনও ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা হবে।”
ময়নাতদন্তের পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিক্রমের দেহ গ্রামে পৌঁছয়। সেদিন রাতে তাকে কবর দেওয়া হয়। গণেশবাবুর বাড়িতে যান চাকুলিয়ার বিধায়ক আলি ইমরান রামজ। তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন তিনি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ইসলামপুরের বাসিন্দা সুবীর বিশ্বাসের অভিযোগ, “পুলিশের একাংশের মদতেই অভিযুক্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সে জন্যই শিশুটিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.