কলেজে ঘর মাত্র সাতটা। আর ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৭০০। ফলে কলেজ বারান্দাই এখন ক্লাসরুম। সোমবার থেকে ধুলিয়ান কলেজে তাই বারান্দায় বেঞ্চ পেতেই নেওয়া হচ্ছে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা। প্রচন্ড বারান্দায় পরীক্ষা দিতে বসে কাহিল পরীক্ষার্থীরা। একে তো গরমে হাঁসফাঁস, মাথার উপরে একটা পাখা পর্যন্ত নেই। এ ভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছেন প্রথম বর্ষের ৭০০ ছাত্র-ছাত্রী। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমিত ভৌমিক বলেন, “ঘর নেই। তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। কোথায় বাসাবো তাদের? নিরুপায় হয়েই এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে আমাদের। আগের বছর ছাত্র সংখ্যা কম থাকায় অসুবিধা হয়নি। তবে এখন সমস্যা বেড়ে গিয়েছে।”
২০০৮ সালে ধুলিয়ান নুর মহম্মদ কলেজটি চালু হয় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে। এলাকার ১৫টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ, পাকুড়ের স্কুলগুলি থেকেও বহু ছাত্র-ছাত্রী এই কলেজে আসেন। পড়ুয়া সংখ্যা বাড়তে থাকলেও কিন্তু গত চার বছরে কলেজের পরিকাঠোমোর উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে কলেজে ১৭০০ পড়ুয়া রয়েছেন। শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৫। তাঁদের মধ্যে তিন জনই আবার অস্থায়ী চুক্তিতে নিযুক্ত।
প্রথম বর্ষের ছাত্র রাহুল শেখ বলেন, “কলেজে মাত্র তিনটি হল ঘর। পাঁচটি ছোট ঘরে ক্লাস হয়। এক সঙ্গে সব ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস চললে বসার জায়গাও হয় না। সব ঘরে পরীক্ষার্থীদের বসিয়েও জায়গার অভাব মেটানো যায়নি। ফলে আমরা খোলা বারান্দায় বসেই পরীক্ষা দিচ্ছি। ছাত্রীরা বসেছে মহিলা কমন রুমে।” |
আর এর পরীক্ষার্থী সেলিম শেখের কথায়, “কো-এডুকেশন কলেজ। অথচ না আছে মহিলাদের টয়লেট, না ক্যান্টিন। সাইকেল রাখার জায়গা তৈরি হয়নি আজও। আশপাশের কলেজ বলতে ফরাক্কা আর অরাঙ্গাবাদ। এখান থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। অগত্যা এখানেই ভর্তি হতে হয়েছে। ছাত্র সংসদও তৈরি হয়নি, যে ছাত্রদের সুবিধা নিয়ে কোনও কথা বলবে।”
কলেজের ছাত্র পরিষদ নেতা সানোয়ার আলম বলেন, “এলাকার প্রয়োজনে এই কলেজ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় এক বিড়ি ব্যবসায়ীর জমি ও টাকায় এই কলেজ হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামো নেই। ভুগতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।” এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সদস্য মোদাশ্বর হোসেন বলেন, “নতুন কলেজ। সমস্যা রয়েছে। এটা বুঝেই আমরা কোনও আন্দোলন করিনি। এলাকায় শিক্ষার প্রসার ঘটছে। ফলে কলেজেও ছাত্র সংখ্যা বাড়ছে। সেই তুলনায় এই কলেজে পরিকাঠামো তৈরি করার দিকে নজর দিচ্ছে না রাজ্য সরকার।” বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় এই কলেজ তৈরিতে এলাকার মানুষ যথেষ্ট উপকৃত। সে কথা মেনে নিয়ে তৃণমূলের বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের জেলা কার্যকরী সভাপতি জোকাত আলি বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত সমস্যার সমাধানে একটি সর্বদল বৈঠক করে সাহায্য চাওয়া। এ ক্ষেত্রে কলেজের পরিকাঠামোর উন্নয়নে সব রকম সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারকে আমরা চাপও দেব। এভাবে পরীক্ষা দেওয়া কষ্টকর।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “গত বছর কলেজের গ্রন্থাগারের বই ও আসবাব কিনতে সরকারের তরফে চার লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে সব সমস্যা মেটেনি। আরও ঘরের দরকার। কলেজের সাড়ে ৬ বিঘা জমি রয়েছে। ভবন নির্মাণ-সহ কলেজের পরিকাঠামো নির্মাণে ৭৭ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প সরকারের কাছে পাঠআনো হয়েছে। সেই টাকার খানিকটা পাওয়া গেলেও এই দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে। ছাত্র ভর্তির সময়ে রাজনৈতিক নেতারা কলেজে এসে চাপ সৃষ্টি করেন। কলেজের পরিকাঠামো আছে কি না তার খোঁজ নেন না কেউই।” |