|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
|
ডাকঘর |
নিজস্ব ঠিকানা |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
স্বাধীনতার ৬৪ বছর পরে পূর্ণাঙ্গ ডাকঘর পেল বিশরপাড়া!
শুধু ডাকঘরই নয়, এত দিন পর্যন্ত ওই এলাকার কোনও পিন কোডও ছিল না। এলাকাবাসীদের ব্যবহার করতে হত পার্শ্ববর্তী বিরাটির পিনকোড। কিন্তু এ বার বিশরপাড়া স্টেশন রোড সংলগ্ন নবজীবন কলোনিতে বিশরপাড়া উপ-ডাকঘর স্থাপিত হওয়ায় পাওয়া গিয়েছে এলাকার নতুন পিনকোড ৭০০১৫৮। ফলে বিশরপাড়া, মধ্য বিশরপাড়া, সপ্তগ্রাম, উত্তর সপ্তগ্রাম এবং নবজীবন কলোনির বাসিন্দারা ডাকঘরের সব ধরনের সুবিধা পাবেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ শিকদারের কথায়: “আমরা খুশি। বয়স্করা কোনও সময় ডাকঘরে গেলেও আর আগের মতো চিন্তায় থাকতে হবে না। এত দিনে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি।”
|
|
১৯৬১ সালে বিশরপাড়ায় বেলঘরিয়া ডাকঘরের অধীনস্থ শাখা ডাকঘর খোলা হলেও কিছু দিন পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে ফের তা চালু হলেও চিঠি জমা নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পরিষেবাই পাওয়া যেত না। কয়েক মাস আগেও কোনও চিঠি এসেছে কি না জানতে, ডাকঘর যোজনার অন্তর্গত বিভিন্ন বিমা ও সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা জমাতে বা পেনশনের টাকা তুলতে বাসিন্দাদের যেতে হত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নিউ ব্যারাকপুরের মাইকেল নগর বা বিরাটির নীলাচল উপ-ডাকঘরে। এর ফলে সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তেন মহিলা এবং প্রবীণ নাগরিকেরা। নতুন এই পূর্ণাঙ্গ ডাকঘর পেয়ে তাঁদের ভোগান্তি অনেক কমেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
ডাক যোগাযোগের মতোই বেহাল দশা বিশরপাড়ার যাতায়াত ব্যবস্থারও। বিশরপাড়া থেকে বিরাটি যেতে হলে ভরসা ট্রেন এবং গুটিকয়েক অটো। তা-ও আবার শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখার আপ এবং ডাউন ট্রেনগুলি গ্যালপিং হওয়ায় সেগুলি বিশরপাড়া স্টেশনে থামে না। ফলে ডাকঘরে যাওয়ার জন্য সকালের দিকে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার লোকাল ট্রেনে ভিড় ঠেলে উঠতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হত প্রবীণদের। এখানেই ভোগান্তির শেষ নয়। ট্রেন থেকে নেমে অটো করে যেতে হত মাইকেলনগর বা নীলাচলের ডাকঘরে। সেখানে আবার থাকত দীর্ঘ লাইন। নব্বুইয়ের দশকে এই চূড়ান্ত অব্যবস্থার প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসীরা। অবশেষে এত দিনে তৈরি হল এই পূর্ণাঙ্গ ডাকঘর। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব দে-র কথায়: “শাখা ডাকঘর থাকলেও তা ছিল নামমাত্র। আংশিক চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে তা চলত ঢিমেতালে। অনেক মূল্যবান চিঠির হদিস মেলেনি এখানে। এমনকী, ডাকঘরটি সব দিন খোলাও থাকত না।”
|
|
এলাকার প্রবীণ নাগরিক সুবোধরঞ্জন দাসের কথায়: “১৯৯১ সালে তৎকালীন সাংসদ বামফ্রন্টের নির্মল চট্টোপাধ্যায়ের সাহায্যে উপ-ডাকঘরের জন্য চিঠিপত্র দেওয়া শুরু করি। বর্তমান সাংসদ তৃণমূলের সৌগত রায়কেও বিষয়টি জানাই। তাঁর পরামর্শমতো আবার আবেদন করি। অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ডাকঘর পেয়ে আমরা খুশি।” কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “সাংসদ হওয়ার পরে বিশরপাড়াবাসী ডাকঘর না থাকার বিষয়টি জানান। আমি মন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁদের বলি আমার কাছে আবেদন করতে। সেই আবেদনপত্রটি কেন্দ্রীয় যোগাযোগ দফতরের মন্ত্রীর কাছে পাঠাই। তার পরে উপ-ডাকঘর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ২৩ জানুয়ারি তা চালু হয়।”
ব্যারাকপুর ডিভিশন-এর সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পোস্ট অফিসেস অশোককুমার মাইতি বলেন, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় হস্তক্ষেপ করায় বিশরপাড়ায় শাখা-ডাকঘর উপ-ডাকঘরে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ডাকঘরের বিমা প্রকল্পের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম এবং পেনশনের লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এত দিন কোনও মন্ত্রী মারফত আবেদন করা হয়নি বলে বিশরপাড়ায় উপ-ডাকঘর চালু হয়নি। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। এখানে আমাদের বিভাগের কোনও গাফিলতি নেই।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|