|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ২... |
|
র্যাম্পে মহাভারত |
মহাকাব্যের নারীদের ক্যাটওয়াক। রূপায়ণে টালিগঞ্জের অভিনেত্রীরা। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের এক সন্ধ্যে। কর্ণ বসেছেন সূর্য বন্দনায়। এমন সময় কুন্তি এসে দাঁড়ালেন তাঁর সামনে। চাইলেন মায়ের অধিকার।
কিংবা কণ্ব মুনির আশ্রম। বিরহিণী শকুন্তলা একা বড় করে চলেছেন সন্তান ভরতকে।
মহাভারতের নায়িকাদের সুখ, দুঃখ, সংগ্রাম, যন্ত্রণা, প্রেম, ঈর্ষা, আত্মত্যাগ নিয়ে কত রকম অনুষ্ঠান, নাটকই তো হয়...
কিন্তু এ বার তাই নিয়ে ফ্যাশন শো। আর সেই মহাকাব্যিক নারীদের ক্যাট-ওয়াকের নেপথ্যে বেজে উঠবে তন্ময় বসু পরিকল্পিত সঙ্গীত-তালবাদ্যের মূর্ছনা। হঠাৎ এমন একটা
|
তন্ময় বসু |
অনুষ্ঠান করার কথা মাথায় এল কী ভাবে? তন্ময় বললেন, “বছর দু’য়েক আগের কথা। এক ডিনার পার্টিতে বসে আলোচনা করতে করতে ঠিক করলাম মহাভারতের নারীদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সাত জন নারীকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। এর পেছনে আমার স্ত্রী বন্যারও অনেকটা ভূমিকা আছে।”
আর তার সঙ্গে যোগ হবে টলিউডের অভিনেত্রীদের উপস্থিতি। কে, কে?
দ্রৌপদীর বেশে থাকবেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শকুন্তলা হবেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। দ্রৌপদীর ভূমিকায় র্যাম্পে হাঁটার ব্যাপারে দারুণ উৎসাহিত ঋতুপর্ণা।
বললেন, “তন্ময়দা আমাদের পারিবারিক বন্ধু। তার ওপর দ্রৌপদীর মতো বুদ্ধিমতী নারী যাকে পাঁচ স্বামী নিয়ে ঘর করতে করতে অনেক রকম উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়--এই রকম একটা চরিত্র পেলে করতে চাইব, এটাই তো স্বাভাবিক।” অন্যদিকে অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তন্ময়দা যখন ফোন করে বললেন ফ্যাশন শো-এর র্যাম্পটাকে ব্যবহার করেই শকুন্তলার চরিত্রে অভিনয় করতে হবে তখনই কৌতূহল বেড়ে গেল। রাজি হলাম। স্কুল কলেজে শকুন্তলার গল্প বহু বার পড়েছি। কিন্তু শকুন্তলার চরিত্রে কাজ করার সুযোগ এই প্রথম।”
মহাভারতের আর এক নারী দেবযানী। কচের প্রেমে পড়া থেকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দেবযানীর কচকে অভিশাপ দেওয়া প্রায় পুরো গল্পের অধিকাংশ ধরা পড়বে মিনিট দশকের সিকোয়েন্সে। সেই আকর্ষণেই দেবযানী পছন্দের চরিত্র হয়েছে জুন মাল্যর কাছে। স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ভীমকে ভালবেসেছিল রাক্ষস কন্যা হিড়িম্বা। ভীমের মাধ্যমে ঘটোৎকচের মতো সন্তান লাভের যে সাহস সে কালে হিড়িম্বা দেখিয়েছিল তাতে বিমোহিত হয়েই হিড়িম্বা চরিত্রটির মহলা দিয়ে চলেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর কুন্তি?
সেই আলো আঁধারি মাখা রাজমহিষীর চরিত্রে মঞ্চে আসবেন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়।
|
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত |
‘সম্পূর্ণা’য় টলিউডের পাশাপাশি মঞ্চে থাকবেন পেশাদার নৃত্যশিল্পীরাও। যেমন শিখণ্ডি চরিত্রে থাকবেন বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী ওয়ার্ধা রিহাব, আর গান্ধারীর ভূমিকায় প্রীতি পটেল। ফ্যাশন শো-এর মেজাজে এসে মিলবে ভারতীয় ধ্রুপদী নাচের সঙ্গে সমসাময়িক নাচের ফর্মের পরীক্ষানিরীক্ষা। পুরুষ চরিত্ররা সকলেই পেশাদার নৃত্যশিল্পী বা মঞ্চশিল্পী। ব্যতিক্রম সাহেব চট্টোপাধ্যায়, বাংলা ছবির অভিনেতা। তাঁকে দেখা যাবে অর্জুনরূপে ঋতুপর্ণার সঙ্গে।
সঙ্গীত, আবৃত্তি, নাটক, অভিনয়, নাচ, ফ্যাশনের মিশেলে আগামী ১৫ এপ্রিল স্বভূমিতে ‘সম্পূর্ণা’ নামে তেমনই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ‘সেলিব্রেশনস ইন্টারন্যাশনাল’ সংস্থা।
তন্ময় আর কাঁথাশিল্পের নকশাকার নীলাঞ্জনা ঘোষ মিলে ধীরে ধীরে আদল দিলেন অনুষ্ঠানটির। “মহাভারতের কোন কোন চরিত্রকে আমরা অনুষ্ঠানে রাখব
সেটা প্রথমত বাছার দায়িত্ব ছিল আমার,” বলছেন কাঁথা ডিজাইনার নীলাঞ্জনা ঘোষ। এই অনুষ্ঠানে তাঁর কাঁথা বস্ত্র ব্যবহার হবে মেয়েদের জন্য। পুরুষদের পোশাকের নকশা করছেন দেবারুণ মুখোপাধ্যায়। মহাভারতীয় যুগের মেজাজে সেট তৈরি করবেন সনাতন দিন্দা। স্টাইলিং করবেন সঞ্চিতা কুশারি বসু।
প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে বছর দুয়েক আগে ওই সংস্থা দক্ষিণ কলকাতার এক পাড়ায় এই রকম একটি ফ্যাশন শো করলেও এত বড় মাপে এই প্রথম।
এমন একটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও পাঠেও থাকছে গ্ল্যামারের ছোঁয়া। থাকবেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রিতা ভিমানি।
কিন্তু টেলিভিশনের ‘মহাভারত’-য়ে দ্রৌপদীর ভূমিকায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বা সত্যবতীর ভূমিকায় দেবশ্রী রায়কে তো আজও দর্শক মনে রেখেছে। তাঁদের দেখা যাবে না?
তন্ময়ের জবাব: “দেবশ্রী আর রূপা দু’জনেই আমার বন্ধু। এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলাম যখন রূপা খুব ব্যস্ত। কলকাতায়ও ছিল না। আর দেবশ্রী তো ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে। রিহার্সাল দেওয়ার সময় পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যেত।” |
|
|
|
|
|