চাপের মুখে সংঘাত আপাতত মুলতুবিই রাখছেন সেনাপ্রধান
বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করে বিতর্কের যে আগুন তিনি জ্বালিয়েছিলেন, আজ নিজেই তা নেভাতে সচেষ্ট হলেন সেনাপ্রধান বিজয় কুমার সিংহ। নয়া বিবৃতি দিয়ে সেনাপ্রধান আজ জানিয়ে দিলেন, ঘুষ-কাণ্ড নিয়ে তিনি যা বলেছেন, তাকে সরকার ও সেনার লড়াই হিসেবে তুলে ধরাটা সমীচীন নয়। তাঁর কথায়, “কিছু স্বার্থান্বেষী অংশ সেনা ও সরকারের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে ঠিকই, কিন্তু তাদের ঠেকাতে হবে। কারণ, সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান সরকারেরই অংশ।” বিবৃতি দিয়ে সংঘাত আপাতত এড়ালেও সেনাপ্রধানের অবস্থান নিয়ে কিন্তু এখনও নিশ্চিত নয় সরকার তথা কংগ্রেস।
প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, দু’বছর আগের ঘটনা হঠাৎ অবসরের মুখে এসে কেন প্রকাশ করতে গেলেন ভি কে সিংহ। সেই প্রশ্নের জবাব আজ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ঘুষের বিষয়টি আমি এই কারণেই এখন তুলেছি, কারণ অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্প্রতি আবার মাথা তুলেছেন।” শুধু তাই নয়, তাঁকে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে সিবিআইয়ের কাছে আজ সন্ধ্যায় চিঠিও পাঠিয়েছেন সেনাপ্রধান। তবে তাতে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই বয়স নিয়ে সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চলছিল ভি কে সিংহের। সেই মামলায় হেরে যাওয়ার পরেই সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে বোমা ফাটান সেনাপ্রধান। জানান, প্রতিরক্ষা কেনাবেচা নিয়ে তাঁকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাউথ ব্লকেরই অন্য এক সেনা কর্তা। সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে সংসদে তোলপাড় চলাকালীনই গত পরশু ফাঁস হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক একটি চিঠি। সেই চিঠিতে প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির নিরিখে সেনাবাহিনীর বেহাল অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। এই চিঠি ফাঁসের ঘটনাতেও সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিলেন না তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই এ সব নিয়ে গত ক’দিন ধরে তোলপাড় চলছে সংবাদমাধ্যমে। জাতীয় রাজনীতিতেও। কিন্তু নিজের ক্ষোভ এবং বক্তব্য জানাতে যে সংবাদমাধ্যমকে এত দিন কার্যত ‘ব্যবহার’ করেছেন, আজ তাদের ঘাড়েই যাবতীয় বিতর্কের দায় চাপিয়েছেন ভি কে সিংহ! সেনাপ্রধান আজ বলেছেন, “সেনা ও সরকারের মধ্যে লড়াই তুলে ধরে ভুল করছে সংবাদমাধ্যম।”
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে সেনাপ্রধান। ছবি: পিটিআই
নিজের অবস্থান থেকে সেনাপ্রধান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ায় একটা বিষয় স্পষ্ট, সরকার তাঁকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পেরেছে। উপর্যুপরি বিবৃতি দিয়ে সেনাপ্রধান বিতর্ক বাড়ালেও সরকার কিন্তু আগাগোড়া সংযত অবস্থানই নিয়ে চলেছে। তার একটা কারণ হল, এই ধরনের টানাপোড়েনে কোনও ভাবেই যাতে অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে দিকে সতর্ক নজর ছিল সরকারের। তা ছাড়া, ব্রিকস সম্মেলনের জন্য চিন-সহ চার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান দিল্লিতে ছিলেন। সে ব্যাপারটাও মাথায় রাখছিলেন সরকারের কর্তারা। গত কাল বিকেলে ব্রিকস-পর্ব মিটতেই সেনাপ্রধানের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দেয় কংগ্রেস। সরকারি সূত্রে এ-ও বলা হতে থাকে, ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে সেনাপ্রধানকে। কারণ, প্রতিরক্ষা কেনাবেচা নিয়ে যে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে, তার নিরপেক্ষতার স্বার্থেই এটা প্রয়োজন। সরকারের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, বয়স-বিতর্ক নিয়ে সেনাপ্রধানের আচরণে এমনিতেই কমবেশি ক্ষোভ ছিল সর্বস্তরে। তার পর সংবাদমাধ্যমে তাঁর সাক্ষাৎকার ও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি উঠতে থাকে। এতেই কিছুটা চাপে পড়ে যান সেনাপ্রধান। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি গত কাল ঘোষণা করেন, “তিন বাহিনীর প্রধানের ওপরেই সরকারের আস্থা রয়েছে।” এই ‘মহত্ব’ প্রকারান্তরে আরও চাপে ফেলে দেয় ভি কে সিংহকে।
তার পর আজ সকাল থেকেই আপাত যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত মিলছিল। এক দিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে চলতি বিতর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নীরব থাকেন সেনাপ্রধান। কিছুটা স্বস্তির ছবি দেখা যায় সরকারের মধ্যেও। তার পরই বিকেলে এক বিবৃতিতে সেনাপ্রধান বলেন, “ঘুষ-কাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তার পর বাহিনীর শুদ্ধকরণের জন্য যৌথ পদক্ষেপ করেছি।”
ভি কে সিংহের বক্তব্যের পরে কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, সেনাপ্রধান যা বলেছেন, তা অর্থবহ। এ দেশে সেনা বরাবরই রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে থেকেছে। কিন্তু চলতি বিতর্ক রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সংঘাতের ছবি তুলে ধরছিল। এ ব্যাপারে গত কাল তাঁকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয় সরকারের তরফে।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য এখনও মনে করেন, সেনাপ্রধান হিসেবে ভি কে সিংহ যে বিতর্ক তৈরি করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। সরকার তথা কংগ্রেসের দুর্বলতার কারণেই তা সহ্য করে নিতে হল। কেন না, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং সেনাপ্রধান। এই অবস্থায় তাঁকে সরালে আবার এ কথাও উঠত যে, দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনার জন্য সেনাপ্রধানকে সরানো হল। তা ছাড়া বরখাস্ত হলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারতেন ভি কে সিংহ। প্রতি দিনই কিছু না কিছু মন্তব্য করে সরকারের সমস্যা বাড়াতেন। সে দিক থেকে সমঝোতা করা ছাড়া বিকল্প বিশেষ কিছু ছিল না।
সেনাপ্রধানের তরফে যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত মিললেও সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব যে পুরোপুরি স্বস্তিতে রয়েছেন, তা নয়। তাঁদের মতে, ভি কে সিংহের মেয়াদ ভালোয় ভালোয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। কারণ অতীতে বয়স বিতর্কের সময়ও দেখা গিয়েছে, কিছু দিন চুপচাপ থাকার পর ফের মুখ খুলেছেন তিনি। ফলে এ বারও যে ভি কে সিংহ নতুন কোনও বিতর্ক তৈরি করবেন না, এমন নিশ্চয়তা নেই। আগামী সপ্তাহেই প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বৈঠকে বসছে।
প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখায় সেই বৈঠকে সেনাপ্রধানকে ডাকার তোড়জোড় করছেন কমিটির বিরোধী সদস্যরা। সেখানে সেনাপ্রধান আবার বিতর্কিত মন্তব্য করতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের একাংশের। তাই বিপদ পুরোপুরি কেটেছে, এমন কথা বলতে পারছেন না ওই নেতারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.