রাজ্যে দুধের ঘাটতি ‘শূন্য’তে নামিয়ে আনতে ‘গো-সম্পদ বিকাশ অভিযান প্রকল্প’ চালু হল হুগলিতে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য হুগলির ১৮টি ব্লকের মধ্যে আরামবাগ মহকুমার গোঘাট-২ এবং চন্দননগর মহকুমার হরিপাল ব্লককে প্রথম দফায় বাছা হয়েছে।
হুগলি জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা অমৃতকুমার দত্ত জানান, জেলা পরিষদ থেকে ৪টি ব্লকে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে প্রকল্প চালুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে পাণ্ডুয়া ও পোলবা বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, “এই কর্মসূচির ফলে প্রচুর কর্মসংস্থানও হবে। দুধ উৎপাদনের পরবর্তী সময়ে দুধ শীতলীকরণকেন্দ্র। দুধ সমবায় গঠন থেকে শুরু করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও গো-পালনে উৎসাহিত হবে।” যদিও ২০১১ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের মহিষাদল, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা-২, কোচবিহার-২, উত্তর দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর এবং বর্ধমানের রায়না-১ ও বর্ধমান-১ ব্লকে কাজ হয়েছে।
দুধের ঘাটতি সম্পর্কে হুগলি জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মাথা-পিছু দুধের মানদণ্ড রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট করেছে ১৮০ গ্রাম অথচ পাওয়া যায় ১৩০ গ্রাম। বাকি ৫০ গ্রাম ঘাটতি ‘শূন্যে’ আনার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার অধীন এই প্রকল্পে গ্রামের গাভীগুলিকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় আনা, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্মানোর এক বছরের নীচের বকনা বাছুরগুলির পরিচর্যা, চিকিৎসা এবং পুষ্টির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া, প্রতিটি গ্রামে প্রাণিস্বাস্থ্য শিবির এবং টিকাকরণ, বিভিন্ন এলাকায় গো-খাদ্য সবুজ ঘাসের চাষ বাড়ানো ও এক বছরের নীচে শঙ্কর বকনা বাছুরগুলিকে বিমার আওতায় আনা হবে। তিন বছরের ওই বিমার প্রিমিয়ামের টাকা দেবে রাজ্য সরকার। কোনও কারণে তিন বছরের মধ্যে বাছুরটির মৃত্যু হলে তার প্রতিপালক বিমা বাবদ ১০ হাজার টাকা পাবেন। তিন বছর মেয়াদের এই প্রকল্পের জন্য ব্লক-পিছু বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি টাকা।
প্রাথমিক ভাবে হুগলির দু’টি ব্লকে ন্যূনতম ২৫০০ শঙ্কর বকনা বাছুরকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের অধীন ওই ২৫০০ বকনা বাছুরগুলি অধিক দুধ দিতে পারবে বলে দাবি প্রাণিসম্পদ দফতরের। এ দিকে, রাজ্যে গাভীর কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। অতীতে ছিল তরল গো-বীজের মাধ্যমে প্রজনন। গত ১২ বছর ধরে শুরু হয়েছে হিমায়িত গো-বীজ দিয়ে কৃত্রিম প্রজননকে জনপ্রিয় করতে প্রচার, শিবির-সহ বিবিধ ব্যবস্থা। তা সত্ত্বেও হুগলির গ্রামগুলির অন্তত ৬০ শতাংশের বেশি এলাকায় কৃত্রিম প্রজনন চালু হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু কৃত্রিম প্রজননে গো-পালকদের অনীহা কেন?
বিভিন্ন গ্রামের গো-পালকদের অভিযোগ, হাতের কাছে কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা নেই, ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে যেতে হয়। অনেকের দাবি, কৃত্রিম প্রজননের পর বেশি জন্মায় ষাঁড়। বাজারে যার মূল্য নেই। গো-পালকদের আরও অভিযোগ, কৃত্রিম প্রজননে জন্মানো বাছুরের রোগ বেশি হয়, চিকিৎসাও খরচ সাপেক্ষ। তা ছাড়া, অনেকের মতে, জার্সি গরুর দুধ পাতলা। গোঘাট-২ ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক শুভেন্দু হালদার বলেন, “প্রতিটি গ্রামে প্রাণি-বন্ধু নিয়োগ হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই সব মানুষের কাছেই হিমায়িত গো-বীজ আছে। এ নিয়ে প্রচারও চলছে। তবে পরিচর্যা, উপযুক্ত পুষ্টি এবং চিকিৎসার ঝক্কি অনেকেই নিতে চান না। এই প্রকল্পের পর সমস্যাগুলো মিটবে।” একই মত হরিপালের প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিক গৌতম নন্দীর।
এই দু’টি ব্লকে প্রকল্পের গতি কেমন? দু’টি ব্লকেই সরকার নির্ধারিত ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জন্মানো বকনা বাছুরগুলির শনাক্তকরণ চলছে। চিহ্নিত বাছুরগুলিকে ‘ট্যাগ’ করা এবং সেগুলির হেল্থ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। দু’টি ব্লকে ইতিমধ্যে দু’হাজারের উপর চিহ্নিতকরণ হয়েছে। প্রকল্পটির জন্য জেলা, ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরে তিনটি তদারকি কমিটি হয়েছে। |