বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণামূলক কাজকর্ম হবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তা হয় না, এমন নয়। বিভিন্ন গবেষণার কাজে পশু-পাখিরও দরকার। আবার সেই সব পশু-পাখি রাখার জন্য উপযুক্ত পরিবেশও দরকার। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না-করে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে পশু-পাখি রাখা যাবে না বলে সরকারি নির্দেশিকাও রয়েছে। কিন্তু এত দিন সেই পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বার জরুরি সেই ‘অ্যানিম্যাল হাউস’ গড়তে উদ্যোগী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “গবেষণার কাজে প্রয়োজনীয় পশু-পাখিদের রাখার জন্য উন্নত পরিকাঠামো খুবই জরুরি। এ বার সেই পরিকাঠামো তৈরিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করে। নানা টালবাহানায় একাদশ অর্থ পরিকল্পনার টাকাও খরচ করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সাল থেকে অর্থ পড়েছিল। এত দিনে সেই অর্থ খরচের জন্যও পদক্ষেপ শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ৪৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ‘অ্যানিম্যাল হাউস’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যে টাকায় একটি দোতলা ভবন তৈরি হবে। সেখানেই রাখা হবে ইঁদুর, গিনিপিগ, ছাগল-সহ নানা প্রাণি। কোন প্রাণিকে কী তাপমাত্রায় রাখতে হয়, কী খাবার দিতে হয়সে-সবেরও যথাযথ ব্যবস্থা থাকবে। কারণ, আদালতের নির্দেশ রয়েছে, কোনও প্রাণিকে গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে কোনও ভাবেই তাকে পীড়ন করা যাবে না। সেই প্রাণিটিকে তার উপযুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে এবং সঠিক পরিষেবা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, এর জন্য একটি কমিটিও তৈরি করতে হবে। যে কমিটির নাম হবে ‘অ্যানিম্যাল এথিক্যাল কমিটি’। ওই কমিটির অনুমতি নিয়েই গবেষকদের ‘অ্যানিম্যাল হাউসে’ ঢুকতে হবে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করবে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ভবন তৈরির কাজও শীঘ্রই শুরু হয়ে যাবে বলে উপাচার্য জানান।
এত দিন উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ও গবেষকরা নিজেদের মতো পরিকল্পনা করে প্রাণিগুলিকে রাখার ব্যবস্থা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। গবেষণাগারও পরিসরে খুব বড় নয়। তারই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, শিক্ষকের বসার আসন। ওই অবস্থাতেই চলত ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার কাজ। সামান্য একটু জায়গা বের করে কোনও খাঁচায় গিনিপিগ, ইঁদুর রাখা হত। এমনকী ওই সব প্রাণির দেখভাল করতে হত গবেষক-ছাত্রদেরই। নিয়মমতো খাবার দেওয়া, খাবার কিনে নিয়ে আসা, অন্যান্য যাবতীয় পরিচর্যার দায়িত্বও ছিল গবেষক-ছাত্রদেরই। গবেষণার ফাঁকেই এই কাজ করতে হত। ‘অ্যানিম্যাল হাউস’ তৈরি হলে প্রাণিদের রাখার উপযুক্ত পরিকাঠামো যেমন হবে, তেমনই তাদের পরিচর্যার ক্ষেত্রেও আর গবেষক-ছাত্রদের মাথা ঘামাতে হবে না। তার ব্যবস্থা করবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। |