কলিকাতা ও শহরতলিতে অটো-রিকশ’র স্বেচ্ছাচার ও জুলুমবাজির প্রতি সরকারের নজর পড়ার লক্ষণ দেখা দিয়াছে। নিজেরা রুট ঠিক করা, ভাড়া নির্ধারণ করা, সওয়ারির সংখ্যার ক্ষেত্রেও নিষেধ না-মানা এবং নিয়মিত যানবাহন সংক্রান্ত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো এ রাজ্যে এমনটাই দস্তুর। ইহা চলিতেছে দীর্ঘ কাল ধরিয়া। পূর্বে অটো ইউনিয়নগুলির অধিকাংশই ছিল সিটু অর্থাৎ সি পি আই এমের অনুগত। অনেকে ভাবিয়াছিলেন, মহাকরণে সরকার বদল হইলে অটোর স্বেচ্ছাচারও দূর হইবে। কিন্তু সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অটো-চালকদের সিংহভাগ রাজনৈতিক আনুগত্যেও পরিবর্তন ঘটাইয়া ফেলেন। অবস্থা সেই তিমিরে। অটো-যাত্রীদের যন্ত্রণার উপশম হয় নাই, বাড়িয়াছে মাত্র। অবশেষে পরিবহণ মন্ত্রী ‘পথের আইন’ মানিতে অটোকে বাধ্য করার কথা বলিতেছেন।
এই সূত্রে সুশাসনের প্রশ্নটি ওঠে। অনুষঙ্গে, দলতন্ত্রের প্রতাপ। ভূতপূর্ব বাম জমানায় এই দুইয়ের ভিতর বিরোধ ছিল প্রবল। দলতন্ত্রের নিকট সুশাসনের ধারণাটি বারংবার পর্যুদস্ত হইয়াছে। দলীয় আনুগত্যই অটো-রিকশা চালকদের স্বেচ্ছাচারে প্ররোচিত করিয়াছিল। প্রশাসন ছিল কার্যত দর্শকের ভূমিকায়। অন্যথায় অন্য পরিবহণের ক্ষেত্রে যে-কাজ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের, অটো-চালকরা তাহাই নিজেরা স্থির করিয়া লইতেন কী রূপে? বাস-মিনিবাস-ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির এক্তিয়ার যখন সরকারের, তখন কেন অটোর ভাড়া অটো-চালকদের মর্জিমাফিক চলিবে? বুঝাই যায়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক পতাকার ছত্রচ্ছায়াতেই অটো-চালকরা এই ধরনের সাহস দেখাইবার সাহস পান। ‘ইউনিয়ন’ নামক এক মহাশক্তিধর অজুহাত তাঁহাদের দিব্য আড়াল করিয়া রাখে। তাহার রং পাল্টায়, রংমাত্র। সুশাসন পতাকার রং না-দেখিয়া যুক্তি প্রতিষ্ঠা করিবে, ইহাই দাবি। পরিবহণ মন্ত্রী উদ্যোগী হইয়াছেন। দেখা যাক।
প্রশাসন কঠোর হইলে যে স্বেচ্ছাচার রোধ করা যায়, তাহা প্রমাণিত। অটো রিকশর ক্ষেত্রেও। বাম জমানায় একদা, প্রবল দূষণকারী ‘কাটা তেল’ ছাড়িয়া দূষণহীন ‘এল পি জি’ জ্বালানিতে যাইব না বলিয়া কলিকাতার বিভিন্ন অটো ইউনিয়ন গোঁ ধরিয়াছিল। আদালতের বারংবার নির্দেশ সত্ত্বেও ‘সমব্যথী’ প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। অবশেষে যখন সক্রিয় না হইয়া উপায় থাকিল না, তখন প্রশাসন কাজে নামিল। কিছুকালের মধ্যেই বিভিন্ন অটো-রুটে ‘পরিবর্তন’টি সাধিত হইল। অর্থাৎ, প্রশাসন চাহিলে কাজ করা সম্ভব। কথা হইল, কাজটি করিবার সদিচ্ছা আছে কি না! পরিস্থিতি ক্রমেই নৈরাজ্যের দিকে। অটো-চালকদের ইউনিয়ন নেতৃত্ব দৃশ্যত অসহায়। তাহাদের বক্তব্য, অটো-চালকরা কথা শুনিতেছে না। প্রশাসন কি হাত গুটাইয়া থাকিবে? ভাড়ার পরিমাণ, রুটের সীমানা এবং সওয়ারির সর্বোচ্চ সংখ্যা কঠোর ভাবে বাঁধিয়া দেওয়া এবং আইন উল্লঙ্ঘন করিলে রাজনৈতিক আনুগত্যনির্বিশেষে আইনভঙ্গকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়াই প্রশাসনের কাজ। |