সম্পাদকীয় ১...
দুর্ভাগ্যজনক
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান, বিজয় কুমার সিংহ এক জন দক্ষ সেনাপতি, সারা জীবন যিনি সততা, নিষ্ঠা, দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যবোধের সহিত কাজ করিয়াছেন। এই গুণাবলির জন্যই তিনি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদটিও অলঙ্কৃত করিয়া আছেন। কিন্তু তাঁহার কর্মজীবনের অন্তিম লগ্নে অবসরগ্রহণের পূর্বাহ্ণে তিনি এমন কিছু কাজ করিয়া বসিলেন, যাহা তাঁহার সযত্নলালিত সুনামের প্রতি সুবিচার করে না। নিজের বয়স তথা জন্মসাল লইয়া তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সহিত এমন এক বিতর্কে জড়াইয়া পড়িলেন, যাহা সুপ্রিম কোর্ট অবধি পৌঁছাইল। তাহার পর নিম্ন মানের সমরাস্ত্রের বিনিময়ে ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে জানানোর কথা তুলিয়া মন্ত্রককে পুনরায় কাঠগড়ায় তুলিলেন। সর্বশেষ ভারতীয় সেনা ও বিমান বাহিনীর ফৌজি অপ্রস্তুতি এবং নিকৃষ্ট মানের, অকেজো যুদ্ধাস্ত্র পাল্টাইয়া অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার অনীহা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁহার চিঠি গণমাধ্যমে ফাঁস হইয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সহ সমগ্র সরকার তথা দেশের রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকেই জনচক্ষে হেয় ও হাস্যাস্পদ করিয়া তুলিল।
ভারতীয় ঐতিহ্যে সেনাবাহিনী যেহেতু সর্বতোভাবে অসামরিক রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের অধীন, তাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে এ ভাবে প্রকাশ্যে অস্বস্তিতে ফেলা কিংবা বিব্রত করার বিষয়টি শাসক বা বিরোধী কোনও পক্ষের রাজনীতিকরাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন নাই। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিরক্ষা-প্রস্তুতির ঘাটতি বা ত্রুটির দিকগুলি সেনাপ্রধান অবশ্যই সরকারের গোচরে আনিতে পারেন। কিন্তু সেটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের চার দেওয়ালের মধ্যেই চর্চিত হইবার কথা, সংসদে কিংবা গণমাধ্যমে বিতর্কিত হওয়ার নয়। যখন তাহা ঘটে, তখন তাহাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিতেই হয়। ইহা অত্যন্ত দুঃখদায়ক যে, ভি কে সিংহের মতো এক জন বিশিষ্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন সেনানায়কের হাত দিয়া এমন অবাঞ্ছিত বিতর্ক ও বিসম্বাদ হাটে-বাজারে চর্চার বিষয় হইয়া উঠিল। তিনি বলিয়াছেন, ফাঁস করার দায় তাঁহার নয়। কিন্তু দায় পুরোপুরি এড়ানো কি সত্যই সম্ভব? প্রশ্ন জাগে, তাঁহার অবসরগ্রহণের সময় তো আসন্নই, এ সময় নিজের দীর্ঘ কালের সুকৃতির উপর একটা অনভিপ্রেত কালিমা লেপন কি না করিলেই চলিত না? এতদ্দ্বারা সেনাধ্যক্ষ কী অর্জন করিলেন? উত্তরসূরিদের কাছেই বা তিনি কী পরিচয়ে স্মরণীয় থাকিতে চাহেন? সরকার তাঁহার সম্পর্কে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে, সেটা সরকারের ব্যাপার। সংসদের ভিতরে-বাহিরে ক্ষোভবিক্ষোভ বা তর্কবিতর্কের ঝড়ও থামিয়া যাইবে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে ভি কে সিংহের নাম অস্বস্তির সহিত উচ্চারিত হইবে।
সেনাধ্যক্ষের আচরণে দায়িত্ববোধের যে অভাব প্রকট হইয়াছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও কি তাহা হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত? প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও ব্যক্তিগত ভাবে সততা ও নিষ্ঠার জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিক বিতর্কের দায় কি তিনিও এড়াইতে পারেন? জন্মসাল লইয়া বিতর্কটি তিনি আপসে মিটাইতে পারিতেন। ঘুষের প্রস্তাবের কথা সেনাপ্রধান যে তাঁহাকে জানাইয়াছিলেন, সে কথাও অ্যান্টনি কবুল করিয়াছেন। কিন্তু তাহার তদন্তের বিষয়ে নিজ দায় কি তিনি জেনারেলের উপর ন্যস্ত করিয়া এড়াইতে পারেন? জেনারেল যখন তদন্তে অগ্রসর হইলেন না, তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেন হাত গুটাইয়া রহিলেন? বাহিনীর অকেজো, পুরানো সমরাস্ত্র বাতিল করিয়া আধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত চিঠিই বা প্রতিরক্ষামন্ত্রককে পাশ কাটাইয়া স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতে হয় কেন, যদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এ বিষয়ে জেনারেলের উদ্বেগের শরিক হয়? অস্বস্তিকর এই প্রশ্নগুলি উঠিবেই। প্রকৃতপক্ষে ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত বা পদ্ধতি-প্রকরণ ঠিক হওয়াই সর্বদা যথেষ্ট নয়, সিদ্ধান্তগ্রহণ বা রূপায়ণের ভারপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবিশেষের উপরেও নির্ভর করে সুষ্ঠু শাসনপ্রণালী। ভি কে সিংহ কিংবা এ কে অ্যান্টনি, উভয়েই নিজ-নিজ ক্ষেত্রে (অর্থাৎ যুদ্ধবিদ্যা বা রাজনীতিতে) সততা ও নিষ্ঠার পরাকাষ্ঠা রচনা করিয়াছেন। কিন্তু শুধু তাহাই হয়তো তাঁহাদের উপর ন্যস্ত যোগ্যতার পক্ষে পর্যাপ্ত নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.