শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তি ব্যবহারে তেহরানের পাশেই মনমোহনরা
ক পালাবদলের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে ব্রিকস।
নিছক পাঁচটি দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত হিসেব কষা গোষ্ঠী নয়, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সভাপতিত্বে আজ ‘ব্রিকস’ (ভারত, রাশিয়া, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলকে নিয়ে গঠিত গোষ্ঠী) আত্মপ্রকাশ করল বৃহত্তর কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে। যারা বিশ্বে নিজেদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরান, সিরিয়ার মতো আন্তর্জাতিক সঙ্কট নিয়ে জোরের সঙ্গে মতামত দিয়েছে। ইরানের যে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে তারা।
তা হলে কি ভারতের সভাপতিত্বে আজকের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন পারস্পরিক অর্থনীতি নিয়ে কোনও কথাই বলেনি? কূটনীতিকরা বলছেন, তা কেন! পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক দিকটা তো থাকছেই। আজ সর্বসম্মতিক্রমে যে ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দু’টি চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অস্থির পশ্চিম এশিয়ার সমাধান সূত্র খোঁজার উপর। পশ্চিমী বিশ্বকে কিছুটা সতর্ক করেই বলা হয়েছে, ইরান এবং সিরিয়ার সঙ্কটের আশু সমাধান প্রয়োজন। না হলে ফল ‘কারও জন্যই ভাল হবে না’। তবে এ জন্য আলাপ-আলোচনাই যে একমাত্র পথ, তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউরো সঙ্কট কাটাতে এবং আন্তর্জাতিক মন্দার মোকাবিলা করতে হাতে হাত মিলিয়ে চলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মনমোহন-হু জিনতাও-দিমিত্রি মেদভেদেভ’রা।
ব্রিকস সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী। পাশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
মেদভেদেভ এবং চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও। ছবি: পিটিআই।
ইরানের পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিকস-এর দেশগুলি যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, সেটা এ দিনে ‘দিল্লি ঘোষণাপত্রে’ই ধরা পড়েছে। ইরানের পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে আপত্তি রয়েছে আমেরিকার। এ দিন আমেরিকার নাম না করলেও কার্যত সতর্কবার্তা দেওয়ার মতো করেই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘ইরানের পরিস্থিতি যেন এমন দিকে না যায়, যেখানে উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে সংঘর্ষের রূপ নেবে। তা হলে পরিণাম এতটাই ভয়াবহ হবে যে, কারও ভাল হবে না।’ ইরানের ভূমিকা যে গোটা অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তার যথেষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে, তা মনে করিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইরানের পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই মেটাতে হবে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের অধিকার যে ইরানের রয়েছে, তা-ও মেনে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের প্রতি বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ইরানের কাছেও আমরা আশা করি যে, বিশ্ব পরিবারের এক জন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে।’ আফগানিস্তান প্রসঙ্গেও আজ একই ভাবে সরব হয়েছে ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’। বলা হয়েছে, ‘শান্তিপূর্ণ, সন্ত্রাসশূন্য, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের উঠে আসাকে সমর্থন জানাই।’
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বর্তমানের বহুমেরু বিশ্বে ব্রিকস যে ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে, সেটা আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার প্রতি একটা স্পষ্ট বার্তা। চিনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওকে পাশে নিয়ে আজ মনমোহন বলেন, “পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। এ ব্যাপারে আমরা একমত যে, সিরিয়া এবং ইরান সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য আলোচনাই একমাত্র রাস্তা।” ব্রিকস-এর অভ্যন্তরীণ শক্তিকে ব্যাখ্যা করে মনমোহন বলেন, “এক অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে বিশ্ব। আর্থিক মন্দা থেকে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলি কিন্তু দ্রুত বেরিয়ে এসেছে। এর থেকেই প্রমাণ হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্রিকস-এর ভূমিকা এখন ঠিক কতটা। এই গোষ্ঠী বিশ্বের সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়াতে এবং বিশ্বে শান্তি, সুস্থিতি এবং নিরাপত্তা রক্ষায় সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
মনমোহনের কথার রেশ ধরে হু জিনতাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্তরে মতপার্থক্য যতই থাক, ব্রিকস-এর প্রশ্নে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এগোবে বেজিং। হু বলেছেন, “এ কথা মনে রাখতে হবে যে, গোটা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ব্রিকস-এর। শুধু তাই নয়, বিশ্ব অর্থনীতির ৩০ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ১৫ শতাংশ আসে ব্রিকস থেকেই।” পরিসংখ্যান দিয়ে ব্রিকস-এর শক্তি ব্যাখ্যা করার পরই তিনি আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের ‘অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ সমাধানের কথা বলেছেন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, এ কথা বলে বেজিং আজ পশ্চিমী দুনিয়াকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির একটা বড় অংশই যখন এই পাঁচটি দেশ নিয়ন্ত্রণ করে, তখন তাদের মতামতকে এ বার উপযুক্ত গুরুত্ব দিতে হবে।
কূটনীতিকদের বক্তব্য, মনমোহন-সরকার এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে পরমাণু দায়বদ্ধতা বিল থেকে শুরু করে খুচরো ব্র্যান্ডে বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে ওয়াশিংটনের। তা নিরসনের জন্য দফায় দফায় মার্কিন নেতৃত্বে সঙ্গে বৈঠক করছেন ভারতীয় কর্তারা। কিন্তু এর পাশাপাশি ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া এবং অবশ্যই চিনের মতো দেশকে পাশে নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শক্তিশালী ব্লক তৈরিতে সমান ভাবে আগ্রহী ভারত। আমেরিকাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়া অবশ্যই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে (যেমন জি-২০) অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত প্রশ্নে এশিয়ার কণ্ঠস্বরকে আরও বেশি শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক করাটা নয়াদিল্লির লক্ষ্য। ‘দিল্লি ঘোষণাপত্র’ এবং মনমোহন-জিনতাও সাংবাদিক বৈঠক তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.