বাড়িতে প্রতিবাদ জানিয়েও কাজ হয়নি। তাই স্কুলে মনমরা হয়ে থাকত মেয়েটি। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্কুলে আসা ‘দিদি’কে সে বলেছিল, “বাড়ির লোক বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু এখনই বিয়ে করতে চাই না। পড়তে চাই। বাবা কিছুতেই শুনছে না।”
বাঁকুড়ার সিমলাপাল থানার কড়াকানালি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সখিনা খাতুনের মন খারাপের কারণ জানতে পেরে কর্তব্য ঠিক করতে দেরি করেননি সিমলাপাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মানসিক কাউন্সেলার শতাব্দী
|
সখিনা খাতুন
নিজস্ব চিত্র। |
সিংহবাবু। সখিনার স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে তার বাবা-মা’কে বুঝিয়ে বিয়ে আটকান। সখিনার সেই প্রতিবাদকে স্বীকৃতি দিতেই বুধবার তাকে ডেকে পাঠিয়ে তার উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।
সিমলাপালের শুশুনিয়া গ্রামে সখিনার বাড়ি। দিনমজুর গুলাম রসুল খানের দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে সখিনা মেজো। গুলাম রসুল বলেন, “গত বছর তালড্যাংরার মল্লিকডাঙা গ্রামের এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে সখিনার বিয়ে ঠিক হয়। তবে, বিয়েতে মেয়ের একদমই মত ছিল না। সে আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের সমাজে তো কম বয়েসেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। তাই ওর অমত কানে তুলিনি।” ওই সময়েই সখিনাদের স্কুলে কাউন্সেলিং করতে গিয়েছিলেন শতাব্দী। তাঁর কথায়, “গত জুলাইয়ে সখিনার কাছে সব শুনে বিয়ে আটকানোর জন্য স্কুলের শিক্ষকদের জানাই। সবাই মিলে ওর বাবাকে বোঝাই, ১৮ বছর বয়সের নীচে মেয়ের বিয়ে দেওয়া বেআইনি। এর পরেই সকিনার বাবা রাজি হন।’’ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিঠুন ভট্টাচার্য বলেন, “সখিনার মতো আরও মেয়েরা এ ভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে বাল্যবিবাহ ঠেকানো সম্ভব।”
১৪ বছরের সখিনা এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে শিক্ষিকা হতে চায়। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু এ দিন সখিনার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। বলেন, “সখিনার মতো মেয়েরা বাল্য বিবাহ রুখে দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। তিন বছর ধরে ব্যাঙ্কে ওর নামে ৬০০০ টাকা করে জমা দেওয়া হবে। মাধ্যমিক পাশ করে ওই টাকা থেকে সে পড়াশোনা চালাবে।”
আর সখিনা বলছে, “এলাকার আর কোনও মেয়ের যাতে কম বয়েসে বিয়ে না হয়, সে জন্য আমি তো লড়বই, সহপাঠীদেরও পাশে চেয়েছি।”
পাশের জেলার পুরুলিয়ার রেখা বা বীণা কালিন্দীদের মতোই বাল্য বিবাহ রোধের আন্দোলন কি বাঁকুড়াতে ছড়িয়ে দিতে পারবে সকিনারা?
প্রশ্ন সেটাই। |