ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার পাড়ের জমি বেদখল হওয়া রুখতে তৎপর হল কলকাতা হাইকোর্ট।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার পুরসভার পক্ষ থেকে গঙ্গার পাড়ে একটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তা ছাড়া, ওই শহরের গঙ্গার পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক হোটেল। নদীর পাড় দখল করে ওই সব যাবতীয় নির্মাণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চের সামনে বুধবার ডায়মন্ড হারবার পুরসভার আইনজীবী জানান, গঙ্গার পাড়ে পুরসভা একটি যাত্রী-ছাউনি তৈরি করছে। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, যেখানে পুরসভা নির্মাণ করছে, সেটা সেচ দফতরের জমি, পুরসভার নয়। সেচ দফতর কি ওই জমি পুরসভাকে হস্তান্তর করেছে? যদি তা করে থাকে তা হলে তার প্রমাণ আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
পুরসভার আইনজীবী অবশ্য এ দিন বিচারপতিদের জানান, আদালত যদি আদেশ দেয় তবে নির্মীয়মাণ ওই যাত্রী-ছাউনি ভেঙে দেবে পুরসভা। বিচারপতি বলেন, নথিপত্রে যদি দেখা যায় নির্মাণ অবৈধ তা হলে অবশ্যই তা ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে। সুভাষ দত্ত আদালতে জানান, ‘পুণ্যলক্ষ্মী’ নামে একটি বিশাল হোটেল গঙ্গার বাঁধ এবং নদীর চরের অনেকটা জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে। অথচ, বাঁধের পাড়ের নদীর চরের যাবতীয় জমি সেচ দফতরের। পুরসভার আইনজীবী এ দিন আদালতে জানান, ‘পুণ্যলক্ষ্মী’ হোটেল পুরসভা থেকে নকসা মঞ্জুর করিয়ে বৈধ ভাবে তৈরি হয়েছে। তবে, আরও কয়েকটি ছোট হোটেল নদীর পাড়ে তৈরি হয়েছে পুরসভার ছাড়পত্র ছাড়াই।
বিচারপতিরা জানতে চান, ‘পুণ্যলক্ষ্মী’ এবং অন্য হোটেলগুলি তৈরি হয়েছে সেচ দফতরের জমিতে। পুরসভা নকশা অনুমোদন করতে পারে, কিন্তু সেচ দফতরের অনুমতি কোথায়? আদালত এ দিন রাজ্য সেচ দফতরকে নোটিস জারি করেছে। আদালত সেচ দফতরের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা ওই হোটেলগুলি তৈরির জন্য কোনও জমি দিয়েছে কিনা। বিচারপতিরা মন্তব্য করেন, এই ভাবে নির্মাণ করা যায় না।
ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার পাড়ে বাঁধের উপরে বা বাঁধ ছাড়িয়ে নদীর দিকে চরের উপরে যত হোটেল বা বাড়ি তৈরি হয়েছে তাদের নোটিস দেওয়ার জন্য পুরসভাকে নির্দেশ দিল আদালত। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সব বিতর্কিত হোটেল বা বাড়ি গঙ্গার পাড়ে তৈরি হয়েছে, তাদের নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি নিয়ে আদালতে গিয়ে দেখাতে হবে।
সুভাষবাবু জানান, ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গা প্রায় মোহনার কাছাকাছি। সেখানে নদীকে এ ভাবে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায় না। তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। গঙ্গার চর দখল করে এ ভাবে অবাধ নির্মাণ যেমন গঙ্গার বাস্তুতন্ত্রের জন্য খারাপ, তেমনই এর ফলে গঙ্গার দূষণও বাড়ে। |