নদিয়া জেলা পরিষদের আর্থিক দায় ভার জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত শুধু অগণতান্ত্রিক নয় তা সরকারে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ মনোভাবেরও প্রমাণ বলে মন্তব্য করলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে।
সুমিতবাবুর প্রশ্ন, “২০০৩ সালে বাম জমানায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে একাধিক জেলা পরিষদ বিরোধীদের দখলে ছিল। সে সময়ে বামফ্রন্ট কি কোথাও ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল?” প্রশ্নটা প্রায় একই ভাবে সরকারের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন মুর্শিদাদের জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কটাক্ষ, “শরিক কংগ্রেসের সহযোগীতায় বামফ্রন্ট বাজেট পাশ করিয়ে নেওয়ায় গাত্রদাহ হয়েছিল বড় শরিক তৃণমূলের। গত ন’মাসে কত পরিবর্তন দেখলাম!”
উন্নয়ন ‘পিছিয়ে’ যাওয়া রুখতেই সরকার এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি দেখানো হয়েছে। সুমিতবাবুর দাবি, অথচ রাজ্যের ১৮টি জেলার মধ্যে কাজের মূল্যায়ন রাজ্য সরকারের রিপোর্টে নদিয়া ষষ্ঠ স্থানে। গরীব মানুষের আবাসন প্রকল্প রূপায়ণে প্রথম স্থানে। আর তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা পরিষদ রয়েছে ১৮তম স্থানে। তিনি বলেন, “জেলাশাসকের হাতে উন্নয়ন ও আর্থিক দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী রেল প্রকল্পে একশো দিনের কাজ জেলাশাসক প্রত্যক্ষ ভাবে তত্ত্বাবধান করেন। আর সেই কাজে নদিয়া জেলা সবচেয়ে পিছিয়ে।” আগামী ৩০ মার্চ দুপুরে মিছিল করে গিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিও নিয়েছে নদিয়া জেলা বামফ্রন্ট। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ডেপুটেশনও দেওয়া হবে। আগামী ১লা এপ্রিল প্রতিটি গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল, ২-৯ এপ্রিল প্রতিটি ব্লকে কনভেনশন ও মিছিল, ১০ এপ্রিল প্রতিটি ব্লকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিডিও-র কাছে জেপুটেশন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদে আর্থিক দায়ভার জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হলেও ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের খসড়া বাজেট পেশ করে আগামী তিন মাসের জন্য অন্তবর্তী বাজেট পাশ করানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামপ্রন্ট। সেই মত আগামী ৩১ মার্চ সাধারণ সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি পূর্ণিমা দাস। তিনি বলেন, “ওই সাধারণ সভায় ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের খসড়া বাজেট পেশ করা হবে। সেই সঙ্গে আগামী তিন মাসের অন্তবর্তী বাজেটও পাশও করানো হবে।”
এ দিকে অবিলম্বে জেলাশাসকের হাতে জেলাপরিষদের আর্থিক ক্ষমতা তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনে নামবে বলে হুমকি দিয়েছেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা রেজিনগরের বিধায়ক কংগ্রেসের হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, “বিরোধী দলনেতা বাণী ইসরাইলের লেখা চিঠি দেখিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেন ‘জেলাপরিষদে অচলাবস্থা চলছে।’ কিন্তু বাণী ইসরাইল ওই চিঠি ২০১১ সালের ২৭ জুলাই লিখেছিলেন আর সুব্রতবাবু তার ৮ মাস পরে ওই চিঠির কপি দেখিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সাফাই দিচ্ছেন।” তিনি বলেন, “এর পরেই আমি সুব্রতবাবুর কথার প্রতিবাদ জানানোর জন্য স্পিকারের কাছে সময় চাই। কিন্তু পঞ্চায়েত মন্ত্রী বিধানসভা ছেড়ে চলে যাওয়ায় ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ আমার নাম ঘোষণা করেও ওই সম্বন্ধে কিছু বলতে দেননি।”
তাঁর কথায়, “জেলার উন্নয়নের স্বার্থে জেলা পরিষদের বাজেট পাশ করানো হয়েছে। জেলার উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে খর্ব করে আমলাতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তার বিরোধিতা করছি আমরা। ওই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে সরকার নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের অবজ্ঞা করেছে। অগণতান্ত্রিক ও দলতান্ত্রিক চেষ্টার বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন করবে কংগ্রেস।” |
মুর্শিদাবাদ
জেলা পরিষদ আসন (২০০৮)
বামফ্রন্ট: ৩২, কংগ্রেস: ৩১
পঞ্চায়েত সমিতি
বামফ্রন্ট ১৪, কংগ্রেস ১২
বাম বিধায়ক: ১৪ (পরে মন্ত্রী হওয়ায় আনিসুর রহমানের ভোটাধিকার চলে যায়)
কংগ্রেস বিধায়ক: ৫, বাম সাংসদ: ১
কংগ্রেস সাংসদ: ৪ (প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী হওয়ায় তাঁর ভোটাধিকার থাকল না মালদহের
আবু হাসেম খান চৌধুরী এই তালিকায় রয়েছেন)
জেলা পরিষদ আসন (২০০৯)
বামফ্রন্ট: ৩২, কংগ্রেস: ৩১
পঞ্চায়েত সমিতি
কংগ্রেস: ১৩, বামফ্রন্ট: ১৩
বাম বিধায়ক: ১৪ (পরে মন্ত্রী হওয়ায় আনিসুর রহমানের ভোটাধিকার চলে যায়)
কংগ্রেস বিধায়ক: ৫,
বাম সাংসদ: ১,
কংগ্রেস সাংসদ: ৪ (প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী হওয়ায় তাঁর ভোটাধিকার থাকল না।
মালদহের আবু হাসেম খান চৌধুরী এই তালিকায় রয়েছেন)
জেলা পরিষদ আসন (২০১১-১২)
বামফ্রন্ট: ৩১ (নুরুল ইসলাম দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেও তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়),
কংগ্রেস: ৩১, তিন কংগ্রেস সদস্য বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদের স্থায়ী সদস্য পদে ভোটাধিকার থাকল না
পঞ্চায়েত সমিতি
কংগ্রেস: ১৪, বামফ্রন্ট: ১২
ডিলিমিটেশনের ফলে বিধানসভার আসন বেড়ে দাঁড়ায় ২২
কংগ্রেস বিধায়ক: ১৪,
বাম বিধায়ক: ৭,
তৃণমূল বিধায়ক: ১ কংগ্রেস ও তৃণমূলের এক জন করে মন্ত্রী হওয়ায় তাদের ভোটাধিকার থাকল না
কংগ্রেস সাংসদ: ৩, বাম সাংসদ: ১
মোট কংগ্রেস: ৫৮, বামফ্রন্ট: ৫১
১৪ মার্চ কংগ্রেসের ৭ সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা এখন ৫১
নদিয়া
জেলা পরিষদ আসন (২০০৮)
বামফ্রন্ট: ৩৪, কংগ্রেস: ১১
পঞ্চায়েত সমিতি
বামফ্রন্ট ২, কংগ্রেস ১৫
বাম বিধায়ক: ১৫,
কংগ্রেস-তৃণমূল বিধায়ক: ৩,
বাম সাংসদ: ২,
কংগ্রেস সাংসদ: ১ (মুর্শিদাবাদের মান্নান হোসেনের সংসদীয় এলাকা)
জেলা পরিষদ আসন (২০০৯)
বামফ্রন্ট: ৩১ (ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন দু’জন। এক জন চাকরি পেয়ে পদত্যাগ করেছেন), কংগ্রেস: ১১
পঞ্চায়েত সমিতি
বামফ্রন্ট ২, কংগ্রেস ১৫
বাম বিধায়ক: ১৫ , কংগ্রেস-তৃণমূল বিধায়ক: ৩
বাম সাংসদ: ০, কংগ্রেস-তৃণমূল সাংসদ: ৪
জেলা পরিষদ আসন (২০১১-১২)
বামফ্রন্ট ৩০ (করিমপুরের সমরেন্দ্র ঘোষ বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে স্থায়ী সদস্যপদ হারালেন), কংগ্রেস ১১
পঞ্চায়েত সমিতি
বামফ্রন্ট ২, কংগ্রেস ১৫
বাম বিধায়ক: ৩, কংগ্রেস-তৃণমূল
বিধায়ক: ১৪ (মন্ত্রী হয়ে উজ্জ্বল বিশ্বাস ভোটাধিকার হারালেন), বাম সাংসদ: ০, কংগ্রেস-তৃণমূল সাংসদ: ৪
মোট
কংগ্রেস: ৪৩, বামফ্রন্ট: ৩৫ |