বিদেশি পেশাদারের ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে ঢুকে পড়ার প্রচুর নজির আছে। ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসেবে ববি সিম্পসন। জন রাইট। গুরু গ্রেগ। বর্তমানে ধোনির টিমে যেমন। ট্রেনার বাদ দিলে কোচ ডানকান ফ্লেচার-সহ সাপোর্ট স্টাফের সবাই বিদেশি। আইপিএলে প্রত্যেকটা ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচের দায়িত্বেও বিদেশিরা। কিন্তু কোনও ভারতীয় সাপোর্ট স্টাফের অঙ্গ হিসেবে বিদেশি টিমের ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ছেন আজ পর্যন্ত ঘটেনি।
সব ঠিকঠাক চললে এ বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই দেখা যাবে সেই অভিনব দৃশ্য। দেখা যাবে ডেভিড ওয়ার্নারদের অস্ট্রেলীয় দলের সঙ্গে ঘুরছেন এক ভারতীয় কম্পিউটার বিশারদ। দক্ষিণ ভারতীয় এই তরুণের নাম এ আর শ্রীকান্ত। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ‘পারফরম্যান্স অ্যানালিস্ট’। পর্দার আড়ালে থেকে যিনি নাইটদের নিলাম-স্ট্র্যাটেজি থেকে শুরু করে ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা, টিমের প্লেয়ার ধরে ধরে বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ বোলারদের নিয়ে পর্যবেক্ষণ সব কিছুতেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ বছর বেঙ্গালুরুর নিলামেও যাঁকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে কেকেআর-এর টেবিলে। |
এ হেন শ্রীকান্তকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগের পিছনে ব্রেট লি। নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলতে খেলতে শ্রীকান্তের কাজের ধরন দেখে খুব প্রভাবিত হয়ে পড়েন অস্ট্রেলীয় পেসার। অস্ট্রেলিয়া যেমন এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলছে। দিন কয়েক আগেই লি ফোন করে শ্রীকান্তকে বলেন, তাঁর বোলিংয়ের চার্ট-সহ বিস্তারিত বিশ্লেষণ পাঠাতে। সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে শ্রীলঙ্কায়। উপমহাদেশে খেলতে হবে বলে আরও বেশি করে ভারতীয় বিশেষজ্ঞকে ভাড়া করতে চাইছে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীকান্ত এখন কলকাতায় নাইটদের ক্যাম্প নিয়ে ব্যস্ত। দিন কয়েক আগেই তাঁর কাছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব আসে।
অদ্ভুত রকমের চুক্তি হতে যাচ্ছে শ্রীকান্তের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। উপমহাদেশে কোনও সিরিজ বা সফর থাকলে তিনি মাইকেল ক্লার্কের টিমের সঙ্গে থাকবেন। অতীতে এমন হয়েছে যে, কোনও সফররত টিম হয়তো সে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারের সাহায্য নিয়েছে। কখনও ইরফান পাঠান গিয়েছেন ওয়াসিম আক্রমের কাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে গ্রেগ চ্যাপেল হয়তো ভারতীয় পেসারদের বসিয়ে দিয়েছেন অ্যান্ডি রবার্টসের সঙ্গে। কিন্তু একদম চুক্তি সই করিয়ে কোনও স্থানীয় বিশেষজ্ঞকে উপমহাদেশীয় সফরের জন্য বিশেষ ভাবে নিয়োগ করার ঘটনা এই প্রথম।
ভারতীয় হয়ে অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়াটাকে আপনি কী চোখে দেখছেন? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার কেকেআর ক্যাপ্টেন গৌতম গম্ভীরের দুর্বলতা তো তুলে দিতে হবে অস্ট্রেলীয় পেসারদের হাতে? শ্রীকান্ত আনন্দবাজারকে বললেন, “এটা পেশাদারিত্বের পৃথিবী। অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞরাও তো এখানে এসে কাজ করছে। তা ছাড়া আমি কেকেআর-এর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসছি না। কেকেআর-এর যখন আমাকে প্রয়োজন হবে তখন অন্য কোথাও থাকার প্রশ্নই নেই। সেটা আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি। আইপিএল যখন হবে তখন আমি কেকেআর-এর সঙ্গেই থাকব।”
লি যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফোন করলেন তেমন ‘আইএসডি কল’ অহরহ পান শ্রীকান্ত। কয়েক দিন আগে যেমন ফোন করেছিলেন রায়ান টেন দুশখাটে। ক্যারম বল ধরতে পারছেন না। সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাটিং ভিডিও পাঠিয়ে শ্রীকান্ত বুঝিয়ে দিলেন কী করা যেতে পারে। দেখিয়ে দিলেন, ক্যারম বল হাতে থাকা স্পিনারকে সচিন কী ভাবে ‘ওপেন চেস্ট’ হয়ে খেলেন। ব্যস, দুশখাটের দুর্যোগও কেটে গেল। এই কারণেই তাঁকে বলা হয় কেকেআর-এর কম্পিউটার মস্তিষ্ক। নিলামের আগে অনেক উঠতি প্লেয়ার সম্পর্কে তথ্যও তিনি প্রথম সরবরাহ করেছেন।
শ্রীকান্তের জীবনকাহিনিও কম আকর্ষণীয় নয়। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারান। আঠেরো বছরে মা’কে। এমন অনেক দিন গিয়েছে যখন দু’বেলা ঠিক মতো খাবার জোটেনি। সেখান থেকে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করতে করতে এক দিন শাহরুখ খানের ক্রিকেট সংসারে।
এ বার উড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আরও উঁচু আকাশে! |